খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ ঘুষ, দুর্নীতি মুক্ত, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব পুলিশ উপহার দিয়ে বিদায় নিচ্ছে । গত আড়াই বছরের বেশি সময় খুলনা জেলায় দায়িত্ব পালন করার সময় জনবান্ধব পুলিশ গড়তে নানান পদক্ষেপ নেন তিনি।
এছাড়া মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে বদলে যায় খুলনা জেলার চিত্র। এছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ ঘুষ লেনদেন, বদলি বাণিজ্য, ও অবৈধ পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় পুরোপুরি বন্ধ করে সাড়া ফেলে দেন মানবিক এই পুলিশ সুপার। খুলনার মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিবেন জনপ্রিয় এই পুলিশ সুপার।
গত মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ধনজ্ঞয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক আদেশে খুলনার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ কে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে বদলি করা হয়।
খুলনা জেলার পুলিশ সুপার এস.এম. শফিউল্লাহ সততা, নিষ্ঠা, ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ দমন, মাদক নির্মূল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি প্রতিরোধ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন ও সার্বিক আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা)’’ এ ভূষিত হন। খুলনা জেলায় অপরাধ নির্মূলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিজ হাতে এ পদক পরিয়ে দেন।
আড়াই বছরের বেশি সময় আগে খুলনা জেলায় যোগ দিয়ে পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ পুলিশের অভ্যন্তরের দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেন। বিশেষ করে মাদক স্পট থেকে টাকা আদায় বন্ধ, অবৈধ পরিবহন থেকে সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধসহ থানায় মামলা রেকর্ড ও জিডি করতে সাধারণ মানুষের যাতে কোন প্রকার অর্থ দিতে না হয় সেজন্য নেন নানান উদ্যোগ। পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ পুলিশের ঘুষ দুর্নীতি, অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানান কারণে শাস্তি দিয়েছে অনেক পুলিশ সদস্যকে। থানাগুলোতে নাগরিক সেবা সহজীকরণ, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের দ্রুত সেবা দিতে নানান উদ্যোগে বদলে গেছে থানা গুলোর চিত্র। খুলনা জেলার নয়টি থানাকে সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং এর ব্যবস্থা করেন পুলিশ সুপার। এ কারণেই সেবা প্রত্যাশীদের হয়রানি কমেছে। সহজেই সেবা নিতে পারছে মানুষ। ২০১৮ সালের জুন মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পুলিশ সুপারের দূরদর্শিতা, দক্ষতা, পেশাদারীত্ব, বিশ্বাস, আস্থা, মেধা ও সততার সাথে তিনি বিবিধ প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। সর্বদা নিত্যনতুন কার্যক্রমের মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশিং কার্যক্রমকে উৎসাহিত করেছেন। জনগণের দোড়গড়ায় সেবা পৌঁছিয়ে দিতে কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে আরও সেবার মানকে তরান্বিত করেছেন। পুলিশ সুপারের দূরদর্শিতা এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, কর্তব্য নিষ্ঠা এবং শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে খুলনা জেলায় সেবা দিয়ে গেছেন।
পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, ক্ষমতাসীন দলের লোকদের ও ছাড় দেননি গত আড়াই বছরে। সরকারি দলের যেসব সদস্য অপরাধে জড়িয়ে আছে তাদের অনেককেই আইনের আওতায় এনেছেন এই মানবিক পুলিশ সুপার। করোণাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানমূখী কর্মকান্ডের পাশাপাশি অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা এবং পুলিশই সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এস এম শফিউল্লাহ ছুটেছিলেন খুলনার এক প্রান্তে থেকে অপর প্রান্তে। এক সময় খুলনা জেলা পুলিশের যে অফিস (পুলিশ সুপারের অফিস) ছিল ভুক্তভোগীদের অভিযোগের জন্য, করোনাকালে সেই অফিসে হরহামেশা দেখা যায় মানবিক সাহায্যের নানামুখী কর্মকান্ডে।
আবার অপরাধীদের জন্য এই পুলিশ পূর্বের চেয়ে অধিক আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে আগের তুলনায় অপরাধ প্রবণতা কমে আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে জেলার প্রতিটি থানা এলাকায়। কমেছে মাদকের অপব্যবহার। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষতি গ্রস্থদের পাশে দাঁড়ান তিনি। ঘরহারা মানুষদের করেন সাধ্যমত সাহায্য। খুলনায় কর্মজীবনে নানান ধরনের মানবিক কাজ করেছেন তিনি। রূপসা উপজেলার বাসিন্দা বাবুল বলেন, এস এম শফিউল্লাহর মতো সৎ কর্মপরায়ণ পুলিশ অফিসার আরও দরকার। তাহলে পুলিশের সার্বিক চিত্র বদলে যাবে।
তেরখাদার বাসিন্দা শেখ জুয়েল বলেন, এস এম শফিউল্লাহর মতন পুলিশ সুপার আগে কখনো দেখেনি। তিনি বলেন এই পুলিশ সুপার পুলিশকে জনতার কাতারে দাঁড় করিয়েছেন। খুলনার নতুন পুলিশ সুপার এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন বলে আশা করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এস এম শফিউল্লাহ ২৪তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ক্যাডারে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি খুলনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের সদর থানার গড়ইগাতী গ্রামে।জনবান্ধব পুলিশ উপহার দিয়ে বিদায় নিচ্ছে খুলনার পুলিশ সুপার।