বাড়িতে অতিথি এসেছে, যত্ন করে রান্নাও করেছেন কিন্তু সেই রান্নায় বাদ সাধল লবণ। খাবারে লবণের পরিমাণ এতটা বেশি যে তা মুখে দেওয়া দায়। এরকম ঘটনা গৃহিণীদের বেলায় যে ঘটেনি, তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এরকম পরিস্থিতিতে সবার সামনে লজ্জায় পরে যান গৃহিনীরা। 

রান্নায় ঝাল কিংবা মশলা যতই হোক না কেন, লবণ ঠিকমতো না হলে স্বাদই মাটি। বেশি হলেও চলবে না, আবার কম হলেও স্বাদ আসবে না। লবণ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ।

তাই খাবারে লবণের পরিমাণ বেশির জন্য কেউ খেতে না পারলে কষ্ট তো হবেই। তবে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কিন্তু আছে। এতে সময়েও লাগবে কম। এবার দেখে নিন এই পরিস্থিতিতে চটজলদি সমাধানের উপায়…

আলু:
রান্নায় যদি হঠাৎ করে লবণ বেশি হয়ে যায় তাহলে ঝটপট একটা আলু ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে রান্নায় দিয়ে দিন। এই বাড়তি আলু অতিরিক্ত লবণ শুষে নেবে। মোটামুটি বিশ মিনিট মতো এই আলু রাখলেই হবে। তারপর প্রয়োজন হলে তুলে দেবেন, না হলে রেখে দেবেন। এছাড়া যে সব রান্নায় ঝোল থাকে, সেই রান্নায় এক টুকরা আলুর খোসা ফেলে প্রায় ২০ মিনিটের মতো ফোটান। সেই তরকারি থেকে অতিরিক্ত লবণাক্ত স্বাদ কেটে যাবে। তরকারি যত ভালো করেই রান্না করা হোক না কেন, লবণ ছাড়া বিস্বাদ। আবার লবণ বেশি হয়ে গেলেও সে তরকারি মুখে তোলা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে আলুই পারে গোটা রান্না সামাল দিতে।

ময়দা বা আটার বল:
তরকারিতে লবণ বেশি হয়ে গেলে ছোট ছোট আটা বা ময়দার বল তৈরি করে রান্নায় দিয়ে দিন। এই বলগুলো লবণ শুষে নেবে। তবে রান্না নামানোর আগে এই বলগুলো তুলে নিতে ভুলবেন না। রান্নায় অত্যাধিক বেশি লবণ পড়ে গেলে আটাও কাজে লাগতে পারেন। আধা কাপ আটার সঙ্গে দুই ফোটা তেল মিশিয়ে আটা মেখে নিন। এবার সেই আটার ছোট ছোট বল তৈরি করে লবণাক্ত রান্নায় দিয়ে দিন। পরিবেশনের আগে আটার বলগুলো সরিয়ে নিন। সাধারণত দু-তিনটি বল দিলেই কাজ হয়। ময়দা সেদ্ধ করে বা কাঁচা ময়দার বল তৈরি করেও তরকারিতে দিতে পারেন।

ফ্রেশ ক্রিম:
ফ্রেশ ক্রিম সব সময় যদিও হাতের কাছে থাকে না। তবুও যদি ফ্রেশ ক্রিম বাড়িতে থাকে, তাহলে সেটা রান্নায় অল্প একটু মিশিয়ে দিন। এতে তরকারির গ্রেভি বা ঝোল ঘন হয়ে যাবে এবং অতিরিক্ত লবণাক্ততা দূর করবে।

টক দই:
বাড়িতে আর কিছু থাক বা না থাক, টক দই থাকেই। অনেক গৃহিণীই রান্নায় দই ব্যবহার করেন। রান্না চেখে যদি বোঝেন লবণ বেশি, তাহলে এক চা চামচ দই তাতে দিয়ে দিন। টক দইয়ের প্রভাবে বাড়তি লবণের প্রভাব কেটে যাবে। সেই সঙ্গে স্বাদও বাড়বে। এক্ষেত্রে তরকারি এবং আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করে দই টক না মিষ্টি দই দিবেন।

দুধ:
রান্নায় দুধ দিলেও লবণ কমে। তাই লবণ বেশি হলে অল্প একটু দুধ দিয়ে দিন। এতে লবণের ব্যালেন্স হয়ে যাবে আর রান্নার স্বাদও বাড়বে। মনে রাখবেন, শুকনো তরকারির লবণাক্ত স্বাদ কমাতে ঘন দুধ খুবই কার্যকরী। আগে থেকে জাল দেওয়া দুধ সেই তরকারিতে ঢেলে কিছুক্ষণ কষান। এটিও তরকারিতে লবণাক্ততা দূর করে পুরো স্বাদে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

পেঁয়াজ:
কাঁচা বা ভাজা দুই রকম পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারেন। যদি কাঁচা পেঁয়াজ ব্যবহার করেন, তবে দুই টুকরা করে কিছুক্ষণ তরকারিতে রেখে সরিয়ে ফেলুন। এতে অতিরিক্ত লবণ দূর হবে। আর ভাজা পেঁয়াজ ব্যবহার করলে তরকারিতে লবণ দূর হওয়ার পাশাপাশি স্বাদ বাড়বে। একটা কাঁচা পেঁয়াজ আন্দাজ মতো কুঁচিয়ে রান্নায় দিয়ে দিন। হাতে সময় থাকলে আলাদা করে ভেজেও দিতে পারেন। এতে রান্নায় স্মোকি ফ্লেভার আসবে আর স্বাদও বাড়বে। লবণের পরিমাণও যে কমে আসবে সেটা বলাই বাহুল্য।

ভিনিগার ও চিনি:
এক টেবিল চামচ ভিনিগারের সঙ্গে দুই চা চামচ চিনি মিশিয়ে বেশি লবণাক্ত তরকারিতে দিয়ে দিন। টক ও মিষ্টি এই অনুপাতে মিশে অতিরিক্ত লবণ কাটিয়ে দেবে। এছাড়া নোনতা স্বাদকে দূর করতে এক চামচ চিনি আর এক চামচ ভিনিগার দিতে পারেন। টক ভিনেগার ও মিষ্টি চিনি তরকারিতে যোগ করার ফলে স্বাদে ভারসাম্য আসবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে