Dhaka ০৯:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটি মানুষের ভরসা একটি মাত্র ল্যাব

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০
  • ১৮৩ Time View

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে করোনা শনাক্তের বিষটির কোন উন্নতি না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ শনাক্তের আগেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকে রোগের লক্ষণ নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এখনো দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার এক কোটি মানুষের জন্য একটি মাত্র পিসিআর ল্যাব কাজ করছে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে। ফলে দুর দুরান্ত থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক করোনার সন্দেহভাজন রোগী এ ল্যাবে এসে ভীড় করলেও পরিক্ষার সুযোগ না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। এমনকি দ্বীপ জেলা ভোলার সাগর বেস্টিত মনপুরাসহ বরগুনার পাথরঘাটার সাগর পাড়ের মানুষও শেবাচিম’র পিসিআর ল্য্যাবটির উপর নির্ভরশীল। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ করোনা উপসর্গের রোগীকে রক্ত পরীক্ষায়ই ৮-১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

অথচ দেশের প্রতিটি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষেত্রে বিষয়টি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ভোলাতে পনের দিন আগে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হলেও কারিগরি ত্রুটি কারণে তা চালু করা সম্ভব হয়নি।
এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর থেকে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে আরও একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও সে ক্ষেত্রেও কোন অগ্রগতি নেই। পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পটুয়াখালীতেও অনুরূপ ল্যাব স্থাপনের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগন।

বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের একাধীক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ভোলা ও পটুয়াখালীতে অবিলম্বে ল্যাব চালু করলে দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশের রক্তের নমুনা পরিক্ষা সহজতর হবে। পাশাপাশি শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় ল্যাব চালু হলে বাড়তি কোন জনবল ছাড়াই বর্তমানের দ্বিগুন রক্তের নমুনা পরিক্ষা সম্ভব হত।

বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এ ল্যাবটিতে দৈনিক গড়ে ২শ থেকে সোয়া ২শ’র বেশী নমুনা পরিক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্তু আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য সহ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ত পরিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ সাধারন মানুষ ল্যাবটিতে ভীড় করলেও তাদের ৮-১০ দিন পরের তারিখ সংবলিত একটি স্লিপ ধরিয়ে দিতে হচ্ছে।

তবে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে একমাত্র পিসিআর ল্যাবটিতে দৈনিক প্রায় ৩শ রক্তের নমুনা পরিক্ষা সম্ভব হলেও জনবল সংকটে তাসম্ভব হচ্ছেনা। একাধীক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এখানে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট সহ কমপক্ষে ৩০ জন কর্মী প্রয়োজন হলেও কর্মরত মাত্র ১০ জন। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১২০টি মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৫৯ জন। ফলে অন্য জেলা বা স্থাপনা থেকে প্রেসনে টেকনোলজিষ্টদের এনেও কাজ চালান যাচ্ছেনা।

৭ এপ্রিল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাবটি চালু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার রক্তের নমুনা পরিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরিক্ষার ফলাফলে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের হার প্রায় ১৪-১৫% এর কমবেশী বলে জানা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ রোগী সনাক্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৮শত ৯০ জন। মৃত্যুর সংখ্যাও ৯৭।

কিন্তু এখনো দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাস পরিক্ষায়ই ৮-১০ দিন অপেক্ষা করতে হওয়ায় বেশীরভাগ মানুষকেই রোগের লক্ষন নিয়ে দীর্ঘদিন অপক্ষো করতে হচ্ছে। অনেকেই সংক্রমন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে তারা এ রোগকে আরো সংক্রমিত করছেন। এমনকি বেশীরভাগই চিকিৎসার বাইরে থেকে খুব খারাপ অবস্থায় হাসপাতালের স্মরনাপন্ন হচ্ছেন।

দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি ক্রমে বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, ‘যত বেশী পরিক্ষা, তত বেশী রোগী শনাক্তের পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসাসহ আক্রান্তেদের আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হত। এতেকরে প্রানঘাতি সংক্রমনকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হত। তবে এজন্য প্রয়োজন দ্রুত রোগী সনাক্তের পাশাপাশি আইসোলেশনসহ চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

কোটি মানুষের ভরসা একটি মাত্র ল্যাব

Update Time : ০৬:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে করোনা শনাক্তের বিষটির কোন উন্নতি না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ শনাক্তের আগেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকে রোগের লক্ষণ নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এখনো দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার এক কোটি মানুষের জন্য একটি মাত্র পিসিআর ল্যাব কাজ করছে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে। ফলে দুর দুরান্ত থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক করোনার সন্দেহভাজন রোগী এ ল্যাবে এসে ভীড় করলেও পরিক্ষার সুযোগ না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। এমনকি দ্বীপ জেলা ভোলার সাগর বেস্টিত মনপুরাসহ বরগুনার পাথরঘাটার সাগর পাড়ের মানুষও শেবাচিম’র পিসিআর ল্য্যাবটির উপর নির্ভরশীল। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ করোনা উপসর্গের রোগীকে রক্ত পরীক্ষায়ই ৮-১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

অথচ দেশের প্রতিটি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষেত্রে বিষয়টি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ভোলাতে পনের দিন আগে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হলেও কারিগরি ত্রুটি কারণে তা চালু করা সম্ভব হয়নি।
এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর থেকে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে আরও একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও সে ক্ষেত্রেও কোন অগ্রগতি নেই। পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পটুয়াখালীতেও অনুরূপ ল্যাব স্থাপনের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগন।

বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের একাধীক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ভোলা ও পটুয়াখালীতে অবিলম্বে ল্যাব চালু করলে দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশের রক্তের নমুনা পরিক্ষা সহজতর হবে। পাশাপাশি শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় ল্যাব চালু হলে বাড়তি কোন জনবল ছাড়াই বর্তমানের দ্বিগুন রক্তের নমুনা পরিক্ষা সম্ভব হত।

বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এ ল্যাবটিতে দৈনিক গড়ে ২শ থেকে সোয়া ২শ’র বেশী নমুনা পরিক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্তু আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য সহ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ত পরিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ সাধারন মানুষ ল্যাবটিতে ভীড় করলেও তাদের ৮-১০ দিন পরের তারিখ সংবলিত একটি স্লিপ ধরিয়ে দিতে হচ্ছে।

তবে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে একমাত্র পিসিআর ল্যাবটিতে দৈনিক প্রায় ৩শ রক্তের নমুনা পরিক্ষা সম্ভব হলেও জনবল সংকটে তাসম্ভব হচ্ছেনা। একাধীক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এখানে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট সহ কমপক্ষে ৩০ জন কর্মী প্রয়োজন হলেও কর্মরত মাত্র ১০ জন। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১২০টি মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৫৯ জন। ফলে অন্য জেলা বা স্থাপনা থেকে প্রেসনে টেকনোলজিষ্টদের এনেও কাজ চালান যাচ্ছেনা।

৭ এপ্রিল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাবটি চালু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার রক্তের নমুনা পরিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরিক্ষার ফলাফলে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের হার প্রায় ১৪-১৫% এর কমবেশী বলে জানা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ রোগী সনাক্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৮শত ৯০ জন। মৃত্যুর সংখ্যাও ৯৭।

কিন্তু এখনো দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাস পরিক্ষায়ই ৮-১০ দিন অপেক্ষা করতে হওয়ায় বেশীরভাগ মানুষকেই রোগের লক্ষন নিয়ে দীর্ঘদিন অপক্ষো করতে হচ্ছে। অনেকেই সংক্রমন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে তারা এ রোগকে আরো সংক্রমিত করছেন। এমনকি বেশীরভাগই চিকিৎসার বাইরে থেকে খুব খারাপ অবস্থায় হাসপাতালের স্মরনাপন্ন হচ্ছেন।

দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি ক্রমে বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, ‘যত বেশী পরিক্ষা, তত বেশী রোগী শনাক্তের পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসাসহ আক্রান্তেদের আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হত। এতেকরে প্রানঘাতি সংক্রমনকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হত। তবে এজন্য প্রয়োজন দ্রুত রোগী সনাক্তের পাশাপাশি আইসোলেশনসহ চিকিৎসা নিশ্চিত করা।