সোহেল রানা,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
রক্ষক যেখানে ভক্ষক। কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন চেষ্টা করে ভাতার টাকা উদ্ধার করতে না পেয়ে গতকাল ২২ ফেব্রুয়ারী সোমবার রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় গোটা উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত কুড়িগ্রাম জেলাকে শতভাগ বয়স্ক-বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনার ঘোষণায় রাজারহাট সদর ইউপির হরিশ্বর তালুক মৌজার মৃত: আব্দুর রশিদ এর স্ত্রী ছবুরা বেওয়া, মৃত: আব্দুল লতিফ এর স্ত্রী মজিরন বেগম ও মৃত: ময়েজ উদ্দিন এর পুত্র আছির উদ্দিন তাদের নিজ নিজ জাতীয় পরিচয় পত্রের কার্ডটি নিয়ে অনলাইনে ভাতার আবেদন করার জন্য দোকানে গিয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে ম্যাসেজে জানতে পারেন ইতিপূর্বে তাদের ৩ জনের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। ঘটনাটি শুনে তারা হতবাক হয়ে যান। পরে ছবুরা বেওয়ার ছেলে সাহেব আলী (৫০) সকলের পক্ষ থেকে রাজারহাট উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে খোঁজ-খবর নিলে এর সত্যতা মিলে। সমাজসেবা অফিসের রাজারহাট সদর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজকর্মী সুবাশ চন্দ্র রায়ের সহযোগিতায় রেজিষ্ট্রার বহি খুঁজে দেখতে পান মোছা: ছবুরা বেওয়া বহি নং-৫৬৩, মোছাঃ মজিরন বেগম বহি নং-২৯৯৫, ও মোঃ আছির উদ্দিন বহি নং-৫০৬৮ বই তিনটি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: শহিদুল ইসলাম (বাবু) উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে রেজিষ্ট্রার খাতায় স্বাক্ষর করে বইগুলো উত্তোলন করে নিয়ে যায় বলে জানতে পারেন সাহেব আলী। পরদিন বাড়িতে এসে অভিযুক্ত হরিশ্বর তালুক মৌজার ইউপি সদস্য মো: শহিদুল ইসলাম (বাবু)’র সাথে দেখা করে ভাতার বই তিনটির কথা জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, বইগুলো আমার কাছে আছে অনলাইনের কাজ বাকি আছে পরে দেব। পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগীরা ইউপি সদস্য’র পেছনে অনেকদিন ধর্ণা দিয়ে বইগুলো না পেয়ে ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো: শহিদুল ইসলাম ব্যাপারী, রাজারহাট সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো: এনামুল হক সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নিকট বইগুলো পাওয়ার জন্য অভিযোগ করেও কোন সুফল মেলেনি। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেন সুবিধা বঞ্চিতরা। পরে বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিনিধি অনুসন্ধানে নামলে আশার আলো দেখে সুবিধাভোগীরা। বই নম্বর এর সূত্র ধরে সোনালী ব্যাংক রাজারহাট শাখায় খোঁজখবর নিয়ে দেখা যায়- মোছা: ছবুরা বেওয়া, হিসাব নং-২০১০১৯৮৬১, একাউন্ট খোলার তারিখ ১৯ আগষ্ট ২০১৯ খ্রি:। ২৭ আগষ্ট ২০১৯ খ্রি: থেকে ১৩ মে ২০২০ খ্রি: পর্যন্ত তার একাউন্টে জমা হয় ১২ হাজার টাকা এবং উত্তোলনও হয় ১২ হাজার টাকা। মোছা: মজিরন বেগম, হিসাব নং-২০১০১৯৯০১, একাউন্ট খোলার তারিখ ১৯ আগষ্ট ২০১৯ খ্রি:। ২৭ আগষ্ট ২০১৯ খ্রি: থেকে ১৩ মে ২০২০ খ্রি: পর্যন্ত একাউন্টে জমা হয় ৭ হাজার ৫শত টাকা এবং উত্তোলন করা হয় ৭ হাজার ৫শত টাকা ও মো: আছির উদ্দিন, হিসাব নং-২০১০১৯৮৬৬, একাউন্ট খোলার তারিখ ১৯ আগষ্ট ২০১৯ খ্রি:। ২৭ আগষ্ট ২০১৯ খ্রি: থেকে ১৩ মে ২০২০ খ্রি: পর্যন্ত একাউন্টে জমা হয় ১২ হাজার টাকা এবং উত্তোলন হয় ১২ হাজার টাকা তাদের সকলের অজান্তে। যেখানে ভাতাভোগীদের বইয়ে শর্তাবলী রয়েছে স্বশরীরে উপস্থিত ভাতাভোগীকেই অর্থ পরিশোধ করতে হবে অথবা ভাতাভোগী অসুস্থ্যতার কারণে অনুপস্থিত হলে অন্য কোন ব্যক্তিকে লিখিতভাবে মনোনয়ন করতে হবে। কিন্তু কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সুবিধাভোগীর অজান্তে সরকারের দেয়া বয়স্ক ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম (বাবু)। সংবাদ সংগ্রহ চলাকালীন অবস্থায় সাংবাদিক এর কথা জানতে পেয়ে চতুর ইউপি সদস্য ছফুরা বেওয়ার ছেলে সাহেব আলী ও তার শ্বশুর আব্দুর রহমানের কাছে গোপনে যোগাযোগ করে ভাতার বই তিনটি ফেরত দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তারপর সু-কৌশলে সুচতুর ওই ইউপি সদস্য সুবিধাভোগীদের অজান্তে ঘরের ভেতরে বই তিনটি ও চেক বইয়ের আংশিক পাতাসহ রেখে যায়। এ বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো: শহিদুল ইসলাম ব্যাপারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুক্তভোগীরা বই তিনটির বিষয়ে তার কাছে মৌখিকভাবে নালিশ করেছিলেন। একাধিক দিন বাবুকে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার কথা বলে কোন প্রতিকার হয়নি। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম (বাবু)’র ০১৭১৯-৫১৬৫১৩ নম্বরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে