Dhaka ০৯:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ৭০তম জন্মদিন আজ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:২১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ মে ২০২২
  • ৪২ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র অভিনয়ের সবখানে তিনি রাজত্ব করেছেন দুর্দান্ত প্রতাপে। কয়েক দশক অভিনয়ে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন নিজের অভিনয় দিয়ে। ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’র সেরাজ তালুকদার, ‘সংশপ্তক’ এর কানকাটা রমজান কিংবা ‘শ্যামল ছায়া’র একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মানুষ মনে রাখবে অনেকদিন।

নিজেকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন, তিনি হুমায়ুন ফরীদি।

কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ৭০তম জন্মদিন আজ (২৯শে মে)। ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার নারিন্দায় জন্ম নেন তিনি।

ছোটবেলায় ছন্নছাড়া স্বভাবের জন্য ফরীদিকে ‘পাগলা’, ‘সম্রাট’, ‘গৌতম’- এমন নানা নামে ডাকা হতো। মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুল পাস দিয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হলেন। ১৯৭১ সালে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। নয় মাস যুদ্ধের পরে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকায় ফিরলেও ঢাকা ভার্সিটিতে ফেরেননি।

টানা পাঁচ বছর বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়ে শেষে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অনার্সে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যকার সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীও ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনেরও প্রধান সংগঠক ছিলেন ফরীদি। সেখানে ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লিখে নির্দেশনা দেন এবং অভিনয়ও করেন । ছাত্রাবস্থায়ই ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হন। জড়িয়ে যান মঞ্চের সঙ্গে।

সেলিম আল দীনের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে ফরিদী মঞ্চে উঠে আসেন। অবশ্য এর আগে ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জে মহল­ার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ অভিনয় করেন। মঞ্চে তার সু-অভিনীত নাটকের মধ্যে উলে­খযোগ্য ‘শকুন্তলা’, ‘ফনিমনসা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘মুন্তাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। ১৯৯০ সালে স্ব-নির্দেশিত ‘ভূত’ দিয়ে শেষ হয় ফরীদির ঢাকা থিয়েটারের জীবন।

তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে আসন গেড়ে নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফরীদি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ১৯৭৬ সালে নাট্যজন সেলিম আল দীন-এর উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় নাট্যোৎসব।

ফরীদি ছিলেন এর অন্যতম প্রধান সংগঠক। এই উৎসবে ফরিদীর নিজের রচনায় এবং নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক। ওই সময় নাটকটি সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। নব্বই দশকে এসে নাম লিখিয়েছিলেন ‘বাণিজ্যিক ধারার বাংলা চলচ্চিত্রে। ‘হুলিয়া’ দিয়ে প্রথম সিনেমায় অভিনয়। ফরিদী অভিনয়ে এতটাই অনবদ্য ছিলেন যে, একসময় নায়কের চেয়ে বাংলা সিনেমাপ্রেমী জাতির কাছে ভিলেন হুমায়ুন ফরীদি বেশি প্রিয় হয়ে ওঠেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ৭০তম জন্মদিন আজ

Update Time : ০৩:২১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র অভিনয়ের সবখানে তিনি রাজত্ব করেছেন দুর্দান্ত প্রতাপে। কয়েক দশক অভিনয়ে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন নিজের অভিনয় দিয়ে। ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’র সেরাজ তালুকদার, ‘সংশপ্তক’ এর কানকাটা রমজান কিংবা ‘শ্যামল ছায়া’র একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মানুষ মনে রাখবে অনেকদিন।

নিজেকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন, তিনি হুমায়ুন ফরীদি।

কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ৭০তম জন্মদিন আজ (২৯শে মে)। ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার নারিন্দায় জন্ম নেন তিনি।

ছোটবেলায় ছন্নছাড়া স্বভাবের জন্য ফরীদিকে ‘পাগলা’, ‘সম্রাট’, ‘গৌতম’- এমন নানা নামে ডাকা হতো। মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুল পাস দিয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হলেন। ১৯৭১ সালে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। নয় মাস যুদ্ধের পরে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকায় ফিরলেও ঢাকা ভার্সিটিতে ফেরেননি।

টানা পাঁচ বছর বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়ে শেষে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অনার্সে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যকার সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীও ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনেরও প্রধান সংগঠক ছিলেন ফরীদি। সেখানে ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লিখে নির্দেশনা দেন এবং অভিনয়ও করেন । ছাত্রাবস্থায়ই ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হন। জড়িয়ে যান মঞ্চের সঙ্গে।

সেলিম আল দীনের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে ফরিদী মঞ্চে উঠে আসেন। অবশ্য এর আগে ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জে মহল­ার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ অভিনয় করেন। মঞ্চে তার সু-অভিনীত নাটকের মধ্যে উলে­খযোগ্য ‘শকুন্তলা’, ‘ফনিমনসা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘মুন্তাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। ১৯৯০ সালে স্ব-নির্দেশিত ‘ভূত’ দিয়ে শেষ হয় ফরীদির ঢাকা থিয়েটারের জীবন।

তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে আসন গেড়ে নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফরীদি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ১৯৭৬ সালে নাট্যজন সেলিম আল দীন-এর উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় নাট্যোৎসব।

ফরীদি ছিলেন এর অন্যতম প্রধান সংগঠক। এই উৎসবে ফরিদীর নিজের রচনায় এবং নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক। ওই সময় নাটকটি সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। নব্বই দশকে এসে নাম লিখিয়েছিলেন ‘বাণিজ্যিক ধারার বাংলা চলচ্চিত্রে। ‘হুলিয়া’ দিয়ে প্রথম সিনেমায় অভিনয়। ফরিদী অভিনয়ে এতটাই অনবদ্য ছিলেন যে, একসময় নায়কের চেয়ে বাংলা সিনেমাপ্রেমী জাতির কাছে ভিলেন হুমায়ুন ফরীদি বেশি প্রিয় হয়ে ওঠেন।