ফলের রাজা কাঁঠাল। এ ফল স্বাদে ও গুণে অনন্য। গরম পড়লেই ফলের বাজারে আমের পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ এই ফল। গরমের সময় কাঁঠালের গন্ধে চারিদিক ম ম করে। তবে কাঁঠাল খেলেও বীজগুলি বেশিরভাগ সময়ই ফেলে দিই আমরা। কারণ, আমরা অনেকেই এর উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে জানিনা। এই বীজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে আর হয়তো অবহেলা করার মতো ভুল করবেন না! তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁঠাল বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
কী কী পুষ্টি উপাদান রয়েছে? কাঁঠালের বীজে রয়েছে থিয়ামিন, রাইবোফ্লাভিন নামে দুটি উপাদান, যা দেহে এনার্জির ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা জিঙ্ক, আয়রন, তামা, কপার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ত্বককে সুন্দর করে তোলে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঁঠাল বীজে রয়েছে উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন-সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যান্সার ও টিউমারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
২) বলিরেখা দূর করে ত্বকের বলিরেখা দূর করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে কাঁঠালের বীজ। কাঁঠাল বীজ ভিজিয়ে বেটে নিন, এরপর কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর সেই বাটা বীজ ত্বকে লাগান। নিয়মিত এই মিশ্রণ ত্বকে লাগালে বলিরেখা দূর হয়ে যাবে এবং ত্বক ঝকঝকে হয়ে উঠবে। পাশাপাশি চোখের নীচেও লাগাতে পারেন। এটি চোখের তলার কালি কমাতেও সাহায্য করে। দুধ আর মধুর সঙ্গে কাঁঠাল বীজের বাটা মিশিয়ে মুখে ও ত্বকে লাগাতে পারেন। এরপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ত্বক ঝকঝকে হবে।
৩) হজম ক্ষমতা উন্নত করে বদহজম রোধে খুবই কার্যকরী কাঁঠালের বীজ। কাঁঠালের বীজ রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিয়মিত খেলে গ্যাস-অম্বল এবং বদহজমের সমস্যা দূর হবে। পাশাপাশি এতে থাকা ফাইবার কনস্টিপেশনের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে।
৪) মানসিক চাপ কমায় এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে কাঁঠাল বীজকে তরকারির মতো রান্না করে খেতে পারেন।
৫) ত্বক ও চুলের যত্ন নিতে আমেরিকার জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, কাঁঠালের বীজ ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ত্বকের নানান রোগ সারানোর পাশাপাশি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। আবার এতে থাকা ভিটামিন-এ চুলের গোড়া শক্ত করতে ও চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করতেও সহায়ক।
৬) দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-এ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কাঁঠালের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, যা দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে এবং চোখ সম্পর্কিত যাবতীয় সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে। তাই চোখের যত্ন নিতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন কাঁঠাল বীজ।
৭) রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোধে কাঁঠালের বীজে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা হিমোগ্লোবিনের অন্যতম উপাদান। ফলে এই বীজ খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয় এবং অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর হয়। আয়রন আমাদের মস্তিষ্ক ও হার্ট-কেও সুস্থ রাখে।
৮) শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে যারা নিরামিষ খান, তাঁদের মাছ-মাংসের ভেতরে থাকা প্রোটিনের ঘাটতি থেকে যায়। এই ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে কাঁঠালের বীজ। তাই নিরামিষাশীরা ডায়েটে রাখতে পারেন এটি। এতে থাকা প্রোটিন শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে এবং পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে।