নিজস্ব প্রতিনিধি:

গত ১ জুলাই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে নিয়ে একটি ভার্চুয়াল আলোচনায় হয় যেখানে ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০ জন ছাত্র, গবেষক, অধ্যাপক ও রাজনীতিবিদরা অংশগ্রহণ করেন।

নজরুলগীতি র মাধ্যমে আলোচনার সূচনা হয় এবং শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য স্বাগত ভাষণ দেন।

স্বাগত ভাষণে ড. ভট্টাচার্য বলেন, ড. বিধানচন্দ্র রায় ছিলেন বিরল প্রতিভার অধিকারী। সাধারণত এইধরনের মানুষ রাজনীতিতে খুব একটা আসেন না। আর ভুল করে যদি এসেই যায় একটা আমূল ধনাত্বক পরিবর্তন ঘটে যায় মানুষের চিন্তা, শিল্প ও বিজ্ঞান ভাবনায়। বাংলার ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছিল বলেই বাংলা আধুনিক শহর তথা শিল্পনগরী হিসাবে লাভ করে কল্যাণী, সল্টলেক ও দুর্গাপুরের মত শিল্প শহর। তিনি বর্তমন সময়ের জি.ডি.পি. প্রসঙ্গ টেনে বলেন বাংলাসহ সমগ্র ভারতের বর্তমান জি.ডি.পি. তলানিতে ঠেকেছে যেখানে বিধানচন্দ্র রায়ের সময় পশ্চিমবঙ্গের জি.ডি.পি. সমগ্র ভারতের মধ্যে শীর্ষে ছিল। তার কথায় উঠে এসেছে মূলত গঙ্গাকে ভিত্তি করেই বাংলার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন ড. রায়। শুধু তাই নয় দেশ ভাগের ফলে ছিন্নমূল উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানেও তিনি নজির রেখেছিলেন।

ড. অর্জুনচন্দ্র দাস অধ্যাপক ভট্টাচার্যকে সমর্থন করে বলেন, বাংলার উদ্বাস্তু কলোনী কুপার্স , নাসরা, রূপসী কলোনী তারই হাতেই গড়া। অধ্যাপক জয়ন্ত মেটে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ড. রায়ের আবাসন প্রকল্পের অভাবনীয় সাফল্য তুলে ধরেন তার বক্তৃতায়। তিনি ১৮৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন গড়ে তোলা কল্যাণীর বি.টি. কলেজ কীভাবে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি হয় তার দীর্ঘ ইতিহাস আলোচনায় রাখেন। তিনি বলেন, তৎকালীন বাংলার একটি বড় ও প্রধান সমস্যা ছিল বন্যা। ড. রায় আমেরিকা থেকে বন্যা নিবারণের উপায় শিক্ষা লাভ করে আমেরিকার ইঞ্জিনিয়ারের সাহায্য নিয়ে গড়ে তোলেন ডি.ভি.সি. বাঁধ, মাইথন বাঁধ, পিলাইয়া বাঁধ। অধ্যাপক মেটে ও অধ্যাপিকা দেবযানী গুহার কথায় বাড়ে বাড়ে ঘুরে ফিরে এসেছে শিল্প নগরী কল্যাণীর কথা। ড. গুহ বলেন, ড. বিধানচন্দ্র রায়ের সময়কালে মুদালিয়র কমিশন তথা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। আর এই কমিশনের সুপারিশকে মান্যতা দিয়ে ড. বি.সি. রায় যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গঠন করেন। যা পরবর্তী সময় বাংলার শিক্ষার দিক নির্ণয়ক হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, আধুনিক আশ্রমিক শিক্ষা-পরিবেশ ভাবনা তারই সময়কালের। তার বক্তৃতায় উঠে এসেছে বিধানচন্দ্র রায়ের নতুন কোর্স বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, জুট টেকনোলজি, গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, পাইলট ইঞ্জিনিয়ারিং চালু প্রসঙ্গ। ড. তারিণী হালদার তার ক্ষুদ্র বক্তৃতায় ড. বিধানচন্দ্র রায়ের সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ভাবনার দিকটাতে বেশি করে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন প্ল্যানিং সিটির ভাবনা ড. বিধানচন্দ্র রায়ের মস্তিষ্ক প্রসূত। তিনি ছিলেন ভারতীয় চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী, পরাধীন ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ। যিনি একই সাথে মাত্র আড়াই বছরে এফ.আর.সি.এস. এবং এম.আর.সি.পি. এই দুটি ডিগ্রি লাভ করেন। বিধানচন্দ্র রায়ের মানস কন্যা কল্যাণী আসলে চাঁদমারীই ১৯৫১ পরবর্তী নাম। ১৯৫১ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মহামান্য রাজ্যপাল শ্রী কৈলাসনাথ কাটজু মহোদয় এই কল্যাণী নগরীর ভিত্তি স্থাপন করেন। সঞ্চালক ড. শান্তিনাথ সরকার ও অধ্যাপক শ্রীকান্ত গৌর জানান, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষা বিভাগের উদ্বোধন হয় ১৯৬০ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা ড. বিধানচন্দ্র রায়ের তৎকালীন ছবি শিক্ষা বিজ্ঞান বিভাগে এখনও সযত্নে সংরক্ষিত আছে। সমগ্র ভার্চুয়াল আলোচনা সভার টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযুক্ত অধ্যাপক শুভংকর মধু ও গবেষক প্রদীপ অধিকারী। সভায় অন্যান্য বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বিজন সরকার, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান ড. মৃগাঙ্ক মন্ডল, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযুক্ত অধ্যাপক তথা শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তনী ড. উদয়ন মণ্ডল, হুগলি ট্রেনিং কলেজের সংযুক্ত অধ্যাপক ড. বিমান মিত্রর মতো ব্যক্তিত্ব। ভার্চুয়াল আলোচনা সভাটি নিয়ে আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি কল্যাণী পৌরসভার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রধান সুশীলকুমার তালুকদারের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ড. বিধানচন্দ্র রায়কে নিয়ে কল্যাণীর নাগরিক সমাজের মধ্যে একটা মিথ আছে। তিনি আধুনিক পশ্চিম বাংলার রূপকার এবং তার সাথে সাথে কল্যাণী প্লানিং সিটির উদ্ভাবক ও প্রতিষ্ঠাতা। তাই কল্যাণীর মানুষের কাছে ১ জুলাই একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগে ড. বিধানচন্দ্র রায়কে নিয়ে ভার্চুয়াল সভা করায় শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে