মহীতোষ গায়েন,মফস্বল সম্পাদক পশ্চিমবঙ্গ:
যেভাবে করোনা সংক্রমণ দাবানলের মত বেড়ে চলেছে তাতে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয় সারাদেশের জনজীবন দিশেহারা। এই পরিস্থিতিতে জনজীবনকে সুরক্ষিত রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে গতকাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার নির্দেশিকা জারি করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব গতকাল শনিবার এবিষয়ে যে নির্দেশিকা জারি করেছেন তাতে মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের মাত্রা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে আসবে বল আমজনতা মনে করছেন।
কি আছে এই নির্দেশিকা বা আদেশনামায় তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
১.রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক, অঙ্গওয়ারি, আই আই টি সহ সমস্ত সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ রবিবার থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
২. স্বাস্থ্য পরিষেবা, ভেটেনারি,ল এন্ড অর্ডার, কোর্ট সহ সমস্ত জরুরী পরিষেবা ব্যতীত সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।
৩.শপিং কমপ্লেক্স, মল, মার্কেট কমপ্লেক্স, বিউটি পার্লার, স্পা, সিনেমা হল, বার, রেষ্টুরেন্ট, জিম, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল সব বন্ধ থাকবে।
৪. পাইকারী দোকান, পণ্য সরবরাহকারী, হাট , বাজার কেন্দ্রিক সব্জি, ফল, দুধ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, রুটি, মাংস, ডিমের দোকান শুধুমাত্র সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
৫.মিষ্টি ও মাংসের দোকান শুধুমাত্র খোলা রাখা যাবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
৬.জুয়েলারি ও কাপড়ের দোকান দুপুর ১২টা বিকেল ৩টে পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
৭.ওষুধের দোকান খোলা রাখা যাবে ওয়ারকিং আওয়ারস্ এর মধ্যে।
৮.পার্ক, চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে।
৯.লোকাল ট্রেন, মেট্রো রেল, স্টেট বাস বেসরকারি, সরকারি বাস বন্ধ থাকবে, তবে জরুরি পরিষেবার প্রয়োজনে বাস সার্ভিস দিতে হবে।
১০.হসপিটাল, নার্সিং হোম, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ছাড়া সাধারণ পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্যাক্সি, অটো সব বন্ধ থাকবে।
১১.জরুরি পরিষেবা ছাড়া ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে।
১২.প্রশাসনিক, শিক্ষা, রাজনৈতিক, আনন্দ অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত হওয়া যাবে না।
১৩.কোভিড ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়া শিল্প কারখানা ও উৎপাদন সংস্থা বন্ধ রাখতে হবে।
১৪.চা বাগানের শ্রমে ৫০% এর বেশী প্রতি শিফ্টে উপস্থিতি রাখা যাবে না।
১৫.জুট মিলে ৩০% এর বেশি প্রতি শিফটে উপস্থিতি রাখা যাবে না।
১৬. ই-কমার্স ও হোম ডেলিভারি চালু রাখায় কোন বিধিনিষেধ থাকছে না।
১৭.ব্যাঙ্ক,এটিএম ও আর্থিক সংস্থা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত।
১৮.পেট্রোল পাম্প, গ্যাস সার্ভিস সংস্থা, অটো রিপেয়ার এর দোকান খোলা রাখা যাবে।
১৯.প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়া, এম এস ও ও কেবল পরিষেবা চালু রাখতে হবে।
২০. সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড এর অধীন আন্ডার টেকিং সংস্থা খোলা থাকবে।
২১.বিবাহ অনুষ্ঠানে একসাথে ৫০ এর বেশী উপস্থিত হওয়া যাবে না। তবে ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স সেক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।
২২. শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ২০জনের বেশী জমায়েতে হতে পারবে না, সেক্ষেত্রেও ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স বাধ্যতামূলক।
২৩.সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাইরের কাজে মানুষের চলাচল, যানবাহন চলাচল কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।
এছাড়া রাত ৯ টে থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নৈশ কারফিউ কঠোরভাবে বলবৎ থাকবে। নির্দেশিকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স ও কোভিড বিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে, না মানলে ২০০৫ এর মহামারী প্রতিরোধ আইনে আইন ভঙ্গকারীদের গ্রেফতার করা সহ কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।
উত্তর প্রদেশ,বিহারের নদী বাহিত হয়ে অসংখ্য মানুষের পচা গলা মৃতদেহ ভেসে আসছে পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গায়, এভাবে দূষিত করছে পরিবেশ, সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষ এর কারণ হিসেবে সংলিষ্ট রাজ্যের শাসকদের অপদার্থতা ও মুর্খতাকে দায়ী করছেন।
মৃত্যু মিছিল বাড়ছে, শশ্মানে দাহ করার জন্য লম্বা লাইন, কি ধনী কি দরিদ্র সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে বহু মানুষের তাজা প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেজো ভাই অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন কেড়ে নিয়েছে। স্বজন হারানোর কান্না শাসক থেকে আমলা, সাধারণত মানুষের ঘরে ঘরে পরিপ্লাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভয়ংকর এই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৫মে থেকে চালু হয়ে ৩০মে পর্যন্ত বলবৎ রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই আদেশনামা যদি কঠোরভাবে রূপায়িত করতে প্রশাসন তৎপর হয় তবেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে ও করোনা সংক্রমনের বিস্তারের ক্ষেত্রে
মানুষ অনেকখানি নিষ্কৃতি পাবে এবং সাধারণ মানুষের সাময়িক কিছুটা আর্থিক কষ্ট হলেও মৃত্যু মিছিল ও বুকফাটা হাহাকার ও কান্না কিছুটা কমবে বলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থেকে শুরু করে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষক, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী সহ আমজনতা মনে করছে। তবে মাংস, সোনা ও মিষ্টির দোকান কোন্ রহস্যে জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে? যে তা খুলে রাখার সময়সীমা অনেকখানি, এই লাখ টাকার প্রশ্ন ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞ মহলে ঘোরাফেরা করছে।
মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আরো জানিয়েছেন করোনার এই ভয়ংকর সংক্রমণের জন্য জুন মাসের নির্ধারিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত থাকছে।পরবর্তী সূচি পরে জানানো হবে।উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাশ অবশ্য আগেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। জনস্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়ে সরকারের এই মানবিক সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয় যা জনস্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে সর্বস্তরের মানুষ মনে করছেন।