ভ্যাকসিন ক্রয় ও ভাইরাস প্রতিরোধে গৃহীত কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্রিপারেডেন্স প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার অনুমোদন প্রদান করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো কোভিড-১৯ সনাক্ত ও নিশ্চিতকরণ, ভ্যাকসিন ক্রয় ও সংরক্ষণ এবং বিতরণসহ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা জোরদারের মাধ্যমে মহামারি মোকাবেলা করা।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্রিপারেডেন্স প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত অর্থ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের বিষয়ে ব্রিফ করেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার একনেক সভায় কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্রিপারেডেন্স প্রকল্পসহ মোট ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৬৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৮৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫ হাজার ৭০১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে ৩টি নতুন প্রকল্প রয়েছে এবং বাকি ৩টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।
কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্রিপারেডেন্স মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫১ লাখ, সেটা এখন ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্পের আওতায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিতরণের পাশাপাশি আরটি পিসিআর কিট, এন্টিজেন কিট ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করা হবে। এছাড়া ২৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর মেশিনসহ ল্যাব স্থাপিত হবে।
তিনি আরও জানান, ১০ শয্যাবিশিষ্ট ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ও ৪৩ জেলার সদর হাসপাতালে ২০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের অর্থে দেশের ৫টি ইমিগ্রেশনে ৭টি মেডিকেল স্ক্রিনিং ইউনিট স্থাপন করা হবে। যার মধ্যে তিনটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত, সিলেটের ওসমানি বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরে একটি করে ইউনিট স্থাপন করবে সরকার। এর পাশাপাশি ১০টি জেলায় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থপনা প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফলভাবে কোভিড মহামারি মোকাবেলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছে। আমরা প্রস্তুত আছি এবং আশা করি সময়মত ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।’
ভ্যাকসিনের মূল্য নিয়ে কোথাও যেন কোনরকম অব্যবস্থাপনা তৈরি না হয় এজন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করা হবে করা হবে বলে তিনি জানান। একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-জেলা পর্যায়ে আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয়েছে ১৫৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
এছাড়া জেলা মহাসড়কসমূহ যথাযথ মান ও যথাযথ প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২২ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ হবে ২৪৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা।