‘করোনা ভয় কইরা কি লাভ? পেডে যদি ভাই না থাহে, তাহলে তো এমনতেই মরুম’ খেদোক্তি করে কথাগুলো বলছিলেন ভ্যানচালক ইয়াসির। রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি জানালেন, এপ্রিল ও মে মাসে এক টাকাও ঘরে আসেনি তার।
জুন থেকে সবকিছু ‘সীমিত’ পরিসরে খুলে যাওয়ায় অল্প কিছু আয় করছেন। তা দিয়েও সংসার চলছে। স্ত্রী-সন্তানদের ইতোমধ্যেই গাইবান্ধায় পাঠিয়েও দিয়েছেন তিনি। ইয়াসিরের মতো লাখো মানুষ ঢাকা শহরে করোনা আতঙ্ক ভুলে কাজ করছেন। মূলত জীবন-জীবিকা করোনার আতঙ্ককে ভুলতে বসেছেন তারা।
দৈনিক বাংলা মোড়ে মাস্ক ছাড়া সবজি বিক্রি করছিলেন শামীম। তিনি বলেন, আগের চেয়ে এখন কাস্টমার বাড়ছে। মানুষ আর ঘরে বসে নেই। কাজ করতে বের হচ্ছে। ফলে বিক্রিও বাড়ছে। কিন্তু পরিমাণ কমছে।
পরিমাণ কমার ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেন, আগে যে লোক এক কেজি পটল কিনতো, সে এখন হাফ কেজি কিনছে। আগে যে লোক এক পোয়া কাঁচামরিচ কিনতো, এখন সেখানে ১০ টাকার কেনে। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে, কিন্তু পকেটে পয়সা কম।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শহরে লোকের চলাচল আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ৩১ মে থেকে অফিস-আদালত সীমিত পরিসরে খোলার পর থেকেই লোক চলাচল বেড়েছে। আর এখন বেশিরভাগ অফিসই পুরোদমে চলছে, যার কারণে শহরে লোকের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এরই মধ্যে দেশে বেড়ে চলছে করোনার সংক্রমণ। আর রাজধানীতে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তারপরও জীবিকার জন্য ঘর থেকে বের হচ্ছেন সবাই।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের অফিসার হাবীবুল আলম বলেন, আমাদের প্রথম দিকে সপ্তাহে দুই দিন করে অফিস ছিলো। এখন সেটি বেড়ে চার দিন হয়েছে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে আমাকে। কি আর করা? চাকরি বাঁচাতে হলে তো ঘর থেকে বেরোতেই হবে।
করোনার আতঙ্কের মধ্যে রাস্তায় যান চলাচল বাড়লেও, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা রয়েছে অনেকের। বিশেষ করে মাস্ক পরতে এখনও অনেকের আপত্তি।
পল্টন মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষারত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাসিবুল হাসান বলেন, ভাই, আমার অ্যাজমার সমস্যা আছে। মাস্ক পরলে দম বন্ধ হয়ে আসে। তারপরও মাস্ক পরি। কিন্তু এত গরমে মাস্ক পরার কারণে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। সে কারণে খুলে রেখেছি।
মাস্ক পরিধান করা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বড় হাতিয়ার বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি বলেন, অজ্ঞান, প্রতিবন্ধী ও দুই বছরের নিচে শিশু-এ তিন শ্রেণীর মানুষ বাদে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। মনে রাখতে হবে মাস্কই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার।
তিনি বলেন, আমাদের বাসায় থাকা বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে যাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেগুলো-বাইরে থেকে আসার পর অবশ্যই তাদের সামনে মাস্ক পরতে হবে। সেসঙ্গে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে যেতে হবে।
এদিকে, করোনার সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবকালে রাস্তার হকার, রিকশা-ভ্যানচালক থেকে শুরু করে গণপরিবহন এবং অফিস-আদালতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে এ পরিপত্র জারি করা হয়।