Dhaka ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনার ভয়াল থাবায় নন্দীগ্রামে বিদ‍্যালয় বন্ধ বেড়েছে শিশুশ্রম

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:৫৮:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১
  • ১৫৭ Time View
টিপু সুলতান,নন্দীগ্রাম(বগুড়া) প্রতিনিধি :
বছরের প্রথমদিন নতুন বই হাতে পেলেও বিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিগত বছর গুলোতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া ও খেলা-ধুলা করে ব্যস্ত সময় কাটালেও করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে ওই শিশু-শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে বগুড়ার নন্দীগ্রামে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর উপার্জন কমে যাওয়ায় তাদের ছোট ছোট সন্তানদের শ্রম বিক্রির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় চোখে পড়ছে বিদ্যালয়গামী শিশু-শিক্ষার্থীরা এখন অনেক ভারি ভারি কাজের সাথে জড়িয়ে পরছে। আবার এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা কম পারিশ্রমিক দিয়ে চায়ের দোকান, হোটেলে, ওয়াকসর্প, মুদির দোকান ও ফার্ণিচারসহ বিভিন্ন ভারি ভারি কাজে ওই সকল শিশু-শিক্ষার্থীদের নিয়োজিত করেছেন। প্রথম শ্রেণি হতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের ঝরু সরকারের ছেলে জয় কুমার সরকার। বাবা ঝরু সরকার গরীব-অসহায় দিনমজুর। দুইভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। বাবা-কোন রকমে দিন মজুরের কাজ-কাম করে সংসার চালায়। ছেলের স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পরিবারের লোকজন তাকে পুরাতন কাপড়ের দোকান ধরিয়ে দিয়েছে। জয় কুমার বলেন, আমি কালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। অনেকদিন হলো স্কুল বন্ধ। সংসারের অভাব পুরন করতে দোকানদারি করছি। স্কুল খুললে আবার স্কুলে যাবো। ওমরপুর বাসস্ট্যন্ডের অটোভ্যান চালক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাফি জানায়, আমরা খুবই গরীব। আমার বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ভ্যানচালিয়ে ২০০-৩০০ টাকা পাই। আমার উপার্জনের টাকা বাবার হাতে তুলে দেই। এতে আমরা সবাইমিলে একটু ভালোভাবে খাওয়া পড়া করতে পাড়ি। উপজেলার বিভিন্ন হাটে হাটে লবন বিক্রি করে রাসেল আহমেদ। সে জানায়, আমি সতিশ চন্দ্র কারিগরি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। বাড়িতে ৫জন সদস্য। আমার বাবা ঢাকায় কাজ করে। বাবার একার আয়ে সংসার চলে না। স্কুল বন্ধ তাই হাটে হাটে লবন বিক্রি করে পরিবারের জন্য উপার্জন করি।
নন্দীগ্রাম সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজম জানান, করোনাকালে কাজের ক্ষেত্র সংকোচিত হয়ে পড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারে টানাপড়ন লেগেই আছে। এজন্য সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ওই পরিবারগুলো। তাই অভিভাবকরা তাদের স্কুল পড়ুয়া সন্তানদের বাড়তি আয়ের আশায় শিশুশ্রমে নিয়োজিত করছে। এই সব শিশুদের বিভিন্ন পেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকসহ ও অভিভাবকদের বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে।
নন্দীগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা জানান, করোনা মহামারিতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো চরম সমস্যায় রয়েছে। আবার দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারনে শিশুদের কাজে লাগানোর চিন্তাও করছে পরিবারগুলো। অভিভাবকদের সচেতন হওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার জানান, করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে শিশু-শিক্ষার্থীরা। শিশুশ্রম বন্ধে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

করোনার ভয়াল থাবায় নন্দীগ্রামে বিদ‍্যালয় বন্ধ বেড়েছে শিশুশ্রম

Update Time : ১০:৫৮:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১
টিপু সুলতান,নন্দীগ্রাম(বগুড়া) প্রতিনিধি :
বছরের প্রথমদিন নতুন বই হাতে পেলেও বিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিগত বছর গুলোতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া ও খেলা-ধুলা করে ব্যস্ত সময় কাটালেও করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে ওই শিশু-শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে বগুড়ার নন্দীগ্রামে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর উপার্জন কমে যাওয়ায় তাদের ছোট ছোট সন্তানদের শ্রম বিক্রির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় চোখে পড়ছে বিদ্যালয়গামী শিশু-শিক্ষার্থীরা এখন অনেক ভারি ভারি কাজের সাথে জড়িয়ে পরছে। আবার এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা কম পারিশ্রমিক দিয়ে চায়ের দোকান, হোটেলে, ওয়াকসর্প, মুদির দোকান ও ফার্ণিচারসহ বিভিন্ন ভারি ভারি কাজে ওই সকল শিশু-শিক্ষার্থীদের নিয়োজিত করেছেন। প্রথম শ্রেণি হতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের ঝরু সরকারের ছেলে জয় কুমার সরকার। বাবা ঝরু সরকার গরীব-অসহায় দিনমজুর। দুইভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। বাবা-কোন রকমে দিন মজুরের কাজ-কাম করে সংসার চালায়। ছেলের স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পরিবারের লোকজন তাকে পুরাতন কাপড়ের দোকান ধরিয়ে দিয়েছে। জয় কুমার বলেন, আমি কালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। অনেকদিন হলো স্কুল বন্ধ। সংসারের অভাব পুরন করতে দোকানদারি করছি। স্কুল খুললে আবার স্কুলে যাবো। ওমরপুর বাসস্ট্যন্ডের অটোভ্যান চালক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাফি জানায়, আমরা খুবই গরীব। আমার বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ভ্যানচালিয়ে ২০০-৩০০ টাকা পাই। আমার উপার্জনের টাকা বাবার হাতে তুলে দেই। এতে আমরা সবাইমিলে একটু ভালোভাবে খাওয়া পড়া করতে পাড়ি। উপজেলার বিভিন্ন হাটে হাটে লবন বিক্রি করে রাসেল আহমেদ। সে জানায়, আমি সতিশ চন্দ্র কারিগরি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। বাড়িতে ৫জন সদস্য। আমার বাবা ঢাকায় কাজ করে। বাবার একার আয়ে সংসার চলে না। স্কুল বন্ধ তাই হাটে হাটে লবন বিক্রি করে পরিবারের জন্য উপার্জন করি।
নন্দীগ্রাম সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজম জানান, করোনাকালে কাজের ক্ষেত্র সংকোচিত হয়ে পড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারে টানাপড়ন লেগেই আছে। এজন্য সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ওই পরিবারগুলো। তাই অভিভাবকরা তাদের স্কুল পড়ুয়া সন্তানদের বাড়তি আয়ের আশায় শিশুশ্রমে নিয়োজিত করছে। এই সব শিশুদের বিভিন্ন পেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকসহ ও অভিভাবকদের বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে।
নন্দীগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা জানান, করোনা মহামারিতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো চরম সমস্যায় রয়েছে। আবার দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারনে শিশুদের কাজে লাগানোর চিন্তাও করছে পরিবারগুলো। অভিভাবকদের সচেতন হওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার জানান, করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে শিশু-শিক্ষার্থীরা। শিশুশ্রম বন্ধে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।