Dhaka ০৭:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনার বিরুদ্ধে আপোসহীন লড়াইয়ে বাঁকুড়া জেলার এক অনন্য মানবিক প্রয়াস

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৪৬:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মে ২০২১
  • ৪৪৬ Time View

ড. সুবীর মণ্ডল, বাঁকুড়া জেলা প্রতিনিধি:

শতাব্দীর সেরা সংকটময় পরিস্থিতি চলছে আমাদের  রাজ্যের  প্রতিটি জেলায় । বাঁকুুুড়া জেলার জুড়ে আছে  ২২টি ব্লক। লোকসংখ্যা   ৪০ লক্ষের কাছাকাছি।  একটি  মেডিকেল কলেজ  ও তিনটি  মহকুমা হাসপাতাল ,এ ছাড়াও  আছে  বেশ কিছু সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে  বিভিন্ন ব্লকে। বেশ কিছুদিন ধরে  লকডাউন চলছে।  নানা ধরনের  সমস্যার  সম্মমুখীন  হতে হচ্ছে  আক্রান্তদের।    সবচেয়ে  বেশি  আক্রান্ত বাাঁকুড়া সদর ও বিষ্ণুপুর মহকুমা।কিছুটা কম খাতড়া মহকুমায়।   সরকারি সহযোগিতা ও উদ্যোগ  প্রশংসনীয়  তবে  তা যথেষ্ট নয় বলে  অভিমত  জেলাবাসীর।  এই দুঃসময়ে   একটু চিকিৎসা, হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। করোনামুক্ত নতুন সকালের প্রহর গুনছে বিশ্ববাসী সহ বাঁকুুুড়া জেলার  সাধারণ মানুষও।

 সেই কারণেই এই অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করতে সরকারের সাথে এগিয়ে এসেছে ছোটো বড় নানান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও গণ সংগঠন। দেখা যাচ্ছে বহু ব্যক্তিগত উদ্যোগও। বাঁকুড়া  জেলার  পুুুলিশ প্রশাসনের ভূূমিকা  অত্যন্ত  প্রশংসনীয়।  দিন-রাত  বিরাট কর্মযজ্ঞ     চালিয়ে  সুনাম অর্জন করে চলেছেন। বাঁকুুুড়া জেলার  খাতড়া মহকুমার  জঙ্গলমহল  সংলগ্ন এলাকার কোভিড আক্রান্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে নানান প্রয়াস চালাচ্ছে  খাতড়া মহকুমা শহরের  স্বেচ্ছাসেবী   সংস্হা ” , গদারহাট অগ্রগতি  সোসাইটি ”  লাইফ লাইন” রাণীবাঁধ  ব্লকের- ” টিম  নিঃস্বার্থ ” সেই সঙ্গে বাঁকুুুুড়া জেলা শহরের ” মল্লভূম প্রয়াস “,    “বহুরূপী ” ওন্দা ব্লকের ” ওন্দা যুবগোষ্ঠী” এবং বিষ্ণুপুর মহকুমার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা।

এছাড়া বিভিন্ন  রাজনৈতিক দলের  সংগঠনও  এগিয়ে এসেছে ও যুদ্ধকালীন  তৎপরতায়   মানুষের সেবা করে চলেছে। জেলা- ব্লক প্রশাসন  সাহায্যের  হাত বাড়িয়ে  দিয়েছে।  মানুষের পাশে থাকার সংকল্পে অবিচল বাঁকুড়া পুলিশ। একদিকে রাস্তায় নেমে সরকারী বিধি নিষেধ কার্যকর করতে যেমন তৎপর, অন্যদিকে আর্তের সেবায় নিরন্তর নিয়োজিত ওন্দা, শালতোড়া, সোনামুখী, ইন্দপুর, মেজিয়া, জয়পুর, তালডাংরা, রাইপুর, হীড়বাঁধ, খাতড়া,বেলিয়াতোর ও কোতুলপুর থানার পুলিশকর্মীরা।

খাতড়া মহকুমার অন্তর্গত গদারহাট  অগ্রগতি সোসাইটির পরিচালনায় ৩০টি আয়হীন পরিবারের বিশেষ ভাবে সক্ষম দের হাতে তুলে দিয়েছে  চিড়ে, মুড়ি, গুড় ,আলু, পেঁয়াজ, তৈল, সোয়াবিন, বিস্কুট, সাবান, সাবানগুড়া, এবং মাস্ক । সম্পাদক  তাপস কুমার ঘোষ  মহাশয় জানালেন  ”  এই চরম  দুঃসময়ে মানব সেবাই হল মহান  ব্রত।,ক্ষুদ্র প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে  এই কাজ  করে চলব।   আমাদের এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই”।
অতিমারীর সময় রাত্রিকালীন পরিষেবায় ডাক্তার, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মেডিকেল সুবিধা নিয়ে হাজির খাতড়া  পঞ্চায়েত সমিতি।পঞ্চায়েতের  সমিতির  কৃষিকর্মাধ্যক্ষ মাননীয়  সুব্রত মহাপাত্র মহাশয়  জানালেন–” ১লা  মার্চ  থেকে  খাাতড় মহকুমা শহর  ও তার পার্শ্বস্থ  সমস্ত  গ্রাম পঞ্চায়েতে এই পরিষেবায় মানুষ ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছেন,আমরা  মানুষের কাছে গভীর ভাবে দায়বদ্ধ। রাত্রি দশটা থেকে ভোর পাঁচটা, শুধুমাত্র একটি কলেই ডাক্তার সহ  পঞ্চায়েত সমিতির  গাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে করোনা রোগীর বাড়ি। প্রাথমিক চিকিৎসার পর যদি ডাক্তারের মনে হয় যে রোগীকে হসপিটালে নেওয়ার দরকার আছে, অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাবস্থা সহ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে হসপিটালেও। এখানেই শেষ নয়, করোনা রোগীর বাড়ি স্যানিটাইজ করা, বয়স্ক ও মুমুর্ষ রোগীর বাড়িতে ওষুধ, খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটলে তার বাড়ি বা হসপিটাল থেকে নিয়ে আসা এবং অন্তস্টিক্রিয়ায়ও পাশে থাকছে  পঞ্চায়েত সমিতির  তত্ত্বাবধানে একটি  বিশেষ  টিম  । শুধু  বাঁকুড়া  নয় বাংলায় রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো  পঞ্চায়েত  সমিতির  এই রকম উদ্যোগ এই প্রথম। যে কারণে  স্থানীয়  ব্লক প্রশাসন  প্রকৃত বন্ধু হয়ে   উঠেছে এলাকার   মানুষের কাছে।  ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামিল হয়েছে বেশ কিছু  তরুণ।তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য  শান্তনু  সিংহ।নিজের গাড়ি ও ওষুধপত্র ,খাদ্য সামগ্রী  দিয়ে  সঙ্কটজনক  রুগিকে নিজের  দায়িত্বে খাতড়া  মহকুমা শহরের  হাসপাতালে  পৌঁছে দিয়েছেন এবং  পাশে  থেকেছেন। এ-এক অনন্য দৃষ্টান্ত। অসহায়  মানুষের সাথে থেকে  এই  ধরনের মানবিক  কাজ শহরে ও   গ্রামে কিছু  যুবক করে চলেছে। বিশেষ করে অতিমারির সময়  খাতড়ার  “লাইফ লাইন  স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা ” ধারাবাহিক  ভাবে  যে অসাধারণ  সেবা কাজ  করে চলেছে  তার কোন  তুলনা নেই। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে  তাদের  কর্মসূচির  কথা বললেন  সংস্হার সভাপতি   শ্রী দিলীপ গড়াই, ও গুরুত্বপূর্ণ আর দুজন সদস্য  স্বরূপ মণ্ডল  ও   সুপ্রভাত  বন্দ্যোপাধ্যায় (সম্পাদক)।ওনারা জানালেন— “Covid-19 এর দ্বিতীয় ঢেউ- আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি এর ফলে আতঙ্ক টাও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না থাকার কারণে অধিকাংশ আক্রান্তদের নিজের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।
গতবছরের মতো খাদ্য সংকট তৈরি হয়নি কিন্তু বাড়িতে থাকা কোভিড আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় খাবার,ঔষধ পৌঁছে দেবার বা তাদের খবর নেবার লোকের খুব অভাব আমরা লক্ষ্য করেছি।
তাই আমরা প্রাথমিকভাবে খাতড়া মহকুমার নানা জায়গা থেকে আমাদের সদস্যদের নিয়ে ৫০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেছি । নিকটবর্তী সদস্যরা কোভিড আক্রান্তের বাড়িতে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে সদা তৎপর। এর সাথে সাথে অক্সিজেন, এম্বুলেন্স ও হাসপাতালের সাথে সঠিক যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজ টাও আমরা করছি। কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃতদেহ দাহ করতেও এগিয়ে এসেছে আমাদের লাইফলাইন স্বেচ্ছাসেবক। লকডাউন পরিস্থিতিতে দুঃস্থ পরিবারে যদি কেউ আক্রান্ত হচ্ছে সেক্ষেত্রে তাদের বিনামূল্যে রেশনের যোগান দেওয়া হচ্ছে লাইফলাইন এর তরফ থেকে।”
অন্যদিকে এই পরিস্থিতির জন্য রক্তদান শিবির সেভাবে না হওয়ায় রক্তসংকট দেখা দিচ্ছে হাসপাতাল গুলোতে,সে জায়গায় ঘাটতি মেটাতে খবর পেলেই লাইফলাইন এর সদস্যরা যাচ্ছে সরাসরি রক্তদান করতে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এভাবেই লাইফলাইন যুদ্ধ করছে তাদের যৎসামান্য অস্ত্র নিয়ে।
এছাড়াও লাইফলাইনের সদস্য স্বরূপ মণ্ডল নিজস্ব চিন্তাভাবনা নিয়ে তার সামর্থ্য অনুযায়ী তার এলাকায় আক্রান্ত দের বিভিন্ন সহযোগিতা ছাড়াও তাদের হাতে ভেপোরাইজার মেশিন বিনামূল্যে তুলে দিচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন “এই ইচ্ছে গুলো আর কিছু না হোক মানসিক শান্তি ও আনন্দিত হয়। তিনি জানিয়েছেন আগামী দিনে আরও সমাজ ও মানুষের হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার বদ্ধ হতে চাই”
মানুষ  বড় কাঁদছে, তুমি  মানুষ  হয়ে  মানুষের পাশে দাঁড়াও কিংবা  ভূপেন হাজারিকার কাল জয়ী গান– ” মানুষ -মানুষেরই  জন্য ” এই মন্ত্রে মানুষের কাজ করে চলেছে  একদল সেবাব্রতী তরুণেরা’- সমাজ জীবনে  অনন্য নজির রেখে যাচ্ছে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

করোনার বিরুদ্ধে আপোসহীন লড়াইয়ে বাঁকুড়া জেলার এক অনন্য মানবিক প্রয়াস

Update Time : ১২:৪৬:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মে ২০২১

ড. সুবীর মণ্ডল, বাঁকুড়া জেলা প্রতিনিধি:

শতাব্দীর সেরা সংকটময় পরিস্থিতি চলছে আমাদের  রাজ্যের  প্রতিটি জেলায় । বাঁকুুুড়া জেলার জুড়ে আছে  ২২টি ব্লক। লোকসংখ্যা   ৪০ লক্ষের কাছাকাছি।  একটি  মেডিকেল কলেজ  ও তিনটি  মহকুমা হাসপাতাল ,এ ছাড়াও  আছে  বেশ কিছু সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে  বিভিন্ন ব্লকে। বেশ কিছুদিন ধরে  লকডাউন চলছে।  নানা ধরনের  সমস্যার  সম্মমুখীন  হতে হচ্ছে  আক্রান্তদের।    সবচেয়ে  বেশি  আক্রান্ত বাাঁকুড়া সদর ও বিষ্ণুপুর মহকুমা।কিছুটা কম খাতড়া মহকুমায়।   সরকারি সহযোগিতা ও উদ্যোগ  প্রশংসনীয়  তবে  তা যথেষ্ট নয় বলে  অভিমত  জেলাবাসীর।  এই দুঃসময়ে   একটু চিকিৎসা, হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। করোনামুক্ত নতুন সকালের প্রহর গুনছে বিশ্ববাসী সহ বাঁকুুুড়া জেলার  সাধারণ মানুষও।

 সেই কারণেই এই অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করতে সরকারের সাথে এগিয়ে এসেছে ছোটো বড় নানান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও গণ সংগঠন। দেখা যাচ্ছে বহু ব্যক্তিগত উদ্যোগও। বাঁকুড়া  জেলার  পুুুলিশ প্রশাসনের ভূূমিকা  অত্যন্ত  প্রশংসনীয়।  দিন-রাত  বিরাট কর্মযজ্ঞ     চালিয়ে  সুনাম অর্জন করে চলেছেন। বাঁকুুুড়া জেলার  খাতড়া মহকুমার  জঙ্গলমহল  সংলগ্ন এলাকার কোভিড আক্রান্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে নানান প্রয়াস চালাচ্ছে  খাতড়া মহকুমা শহরের  স্বেচ্ছাসেবী   সংস্হা ” , গদারহাট অগ্রগতি  সোসাইটি ”  লাইফ লাইন” রাণীবাঁধ  ব্লকের- ” টিম  নিঃস্বার্থ ” সেই সঙ্গে বাঁকুুুুড়া জেলা শহরের ” মল্লভূম প্রয়াস “,    “বহুরূপী ” ওন্দা ব্লকের ” ওন্দা যুবগোষ্ঠী” এবং বিষ্ণুপুর মহকুমার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা।

এছাড়া বিভিন্ন  রাজনৈতিক দলের  সংগঠনও  এগিয়ে এসেছে ও যুদ্ধকালীন  তৎপরতায়   মানুষের সেবা করে চলেছে। জেলা- ব্লক প্রশাসন  সাহায্যের  হাত বাড়িয়ে  দিয়েছে।  মানুষের পাশে থাকার সংকল্পে অবিচল বাঁকুড়া পুলিশ। একদিকে রাস্তায় নেমে সরকারী বিধি নিষেধ কার্যকর করতে যেমন তৎপর, অন্যদিকে আর্তের সেবায় নিরন্তর নিয়োজিত ওন্দা, শালতোড়া, সোনামুখী, ইন্দপুর, মেজিয়া, জয়পুর, তালডাংরা, রাইপুর, হীড়বাঁধ, খাতড়া,বেলিয়াতোর ও কোতুলপুর থানার পুলিশকর্মীরা।

খাতড়া মহকুমার অন্তর্গত গদারহাট  অগ্রগতি সোসাইটির পরিচালনায় ৩০টি আয়হীন পরিবারের বিশেষ ভাবে সক্ষম দের হাতে তুলে দিয়েছে  চিড়ে, মুড়ি, গুড় ,আলু, পেঁয়াজ, তৈল, সোয়াবিন, বিস্কুট, সাবান, সাবানগুড়া, এবং মাস্ক । সম্পাদক  তাপস কুমার ঘোষ  মহাশয় জানালেন  ”  এই চরম  দুঃসময়ে মানব সেবাই হল মহান  ব্রত।,ক্ষুদ্র প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে  এই কাজ  করে চলব।   আমাদের এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই”।
অতিমারীর সময় রাত্রিকালীন পরিষেবায় ডাক্তার, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মেডিকেল সুবিধা নিয়ে হাজির খাতড়া  পঞ্চায়েত সমিতি।পঞ্চায়েতের  সমিতির  কৃষিকর্মাধ্যক্ষ মাননীয়  সুব্রত মহাপাত্র মহাশয়  জানালেন–” ১লা  মার্চ  থেকে  খাাতড় মহকুমা শহর  ও তার পার্শ্বস্থ  সমস্ত  গ্রাম পঞ্চায়েতে এই পরিষেবায় মানুষ ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছেন,আমরা  মানুষের কাছে গভীর ভাবে দায়বদ্ধ। রাত্রি দশটা থেকে ভোর পাঁচটা, শুধুমাত্র একটি কলেই ডাক্তার সহ  পঞ্চায়েত সমিতির  গাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে করোনা রোগীর বাড়ি। প্রাথমিক চিকিৎসার পর যদি ডাক্তারের মনে হয় যে রোগীকে হসপিটালে নেওয়ার দরকার আছে, অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাবস্থা সহ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে হসপিটালেও। এখানেই শেষ নয়, করোনা রোগীর বাড়ি স্যানিটাইজ করা, বয়স্ক ও মুমুর্ষ রোগীর বাড়িতে ওষুধ, খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটলে তার বাড়ি বা হসপিটাল থেকে নিয়ে আসা এবং অন্তস্টিক্রিয়ায়ও পাশে থাকছে  পঞ্চায়েত সমিতির  তত্ত্বাবধানে একটি  বিশেষ  টিম  । শুধু  বাঁকুড়া  নয় বাংলায় রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো  পঞ্চায়েত  সমিতির  এই রকম উদ্যোগ এই প্রথম। যে কারণে  স্থানীয়  ব্লক প্রশাসন  প্রকৃত বন্ধু হয়ে   উঠেছে এলাকার   মানুষের কাছে।  ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামিল হয়েছে বেশ কিছু  তরুণ।তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য  শান্তনু  সিংহ।নিজের গাড়ি ও ওষুধপত্র ,খাদ্য সামগ্রী  দিয়ে  সঙ্কটজনক  রুগিকে নিজের  দায়িত্বে খাতড়া  মহকুমা শহরের  হাসপাতালে  পৌঁছে দিয়েছেন এবং  পাশে  থেকেছেন। এ-এক অনন্য দৃষ্টান্ত। অসহায়  মানুষের সাথে থেকে  এই  ধরনের মানবিক  কাজ শহরে ও   গ্রামে কিছু  যুবক করে চলেছে। বিশেষ করে অতিমারির সময়  খাতড়ার  “লাইফ লাইন  স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা ” ধারাবাহিক  ভাবে  যে অসাধারণ  সেবা কাজ  করে চলেছে  তার কোন  তুলনা নেই। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে  তাদের  কর্মসূচির  কথা বললেন  সংস্হার সভাপতি   শ্রী দিলীপ গড়াই, ও গুরুত্বপূর্ণ আর দুজন সদস্য  স্বরূপ মণ্ডল  ও   সুপ্রভাত  বন্দ্যোপাধ্যায় (সম্পাদক)।ওনারা জানালেন— “Covid-19 এর দ্বিতীয় ঢেউ- আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি এর ফলে আতঙ্ক টাও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না থাকার কারণে অধিকাংশ আক্রান্তদের নিজের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।
গতবছরের মতো খাদ্য সংকট তৈরি হয়নি কিন্তু বাড়িতে থাকা কোভিড আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় খাবার,ঔষধ পৌঁছে দেবার বা তাদের খবর নেবার লোকের খুব অভাব আমরা লক্ষ্য করেছি।
তাই আমরা প্রাথমিকভাবে খাতড়া মহকুমার নানা জায়গা থেকে আমাদের সদস্যদের নিয়ে ৫০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেছি । নিকটবর্তী সদস্যরা কোভিড আক্রান্তের বাড়িতে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে সদা তৎপর। এর সাথে সাথে অক্সিজেন, এম্বুলেন্স ও হাসপাতালের সাথে সঠিক যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজ টাও আমরা করছি। কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃতদেহ দাহ করতেও এগিয়ে এসেছে আমাদের লাইফলাইন স্বেচ্ছাসেবক। লকডাউন পরিস্থিতিতে দুঃস্থ পরিবারে যদি কেউ আক্রান্ত হচ্ছে সেক্ষেত্রে তাদের বিনামূল্যে রেশনের যোগান দেওয়া হচ্ছে লাইফলাইন এর তরফ থেকে।”
অন্যদিকে এই পরিস্থিতির জন্য রক্তদান শিবির সেভাবে না হওয়ায় রক্তসংকট দেখা দিচ্ছে হাসপাতাল গুলোতে,সে জায়গায় ঘাটতি মেটাতে খবর পেলেই লাইফলাইন এর সদস্যরা যাচ্ছে সরাসরি রক্তদান করতে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এভাবেই লাইফলাইন যুদ্ধ করছে তাদের যৎসামান্য অস্ত্র নিয়ে।
এছাড়াও লাইফলাইনের সদস্য স্বরূপ মণ্ডল নিজস্ব চিন্তাভাবনা নিয়ে তার সামর্থ্য অনুযায়ী তার এলাকায় আক্রান্ত দের বিভিন্ন সহযোগিতা ছাড়াও তাদের হাতে ভেপোরাইজার মেশিন বিনামূল্যে তুলে দিচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন “এই ইচ্ছে গুলো আর কিছু না হোক মানসিক শান্তি ও আনন্দিত হয়। তিনি জানিয়েছেন আগামী দিনে আরও সমাজ ও মানুষের হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার বদ্ধ হতে চাই”
মানুষ  বড় কাঁদছে, তুমি  মানুষ  হয়ে  মানুষের পাশে দাঁড়াও কিংবা  ভূপেন হাজারিকার কাল জয়ী গান– ” মানুষ -মানুষেরই  জন্য ” এই মন্ত্রে মানুষের কাজ করে চলেছে  একদল সেবাব্রতী তরুণেরা’- সমাজ জীবনে  অনন্য নজির রেখে যাচ্ছে।