ডঃসুবীর মণ্ডল, বাঁকুুুড়া জেলা প্রতিনিধি:
মন্দির সুর আর ঘোড়া/এই তিন নিয়েই বাঁকুড়া। শিল্পরূপময় বাঁকুড়া জেলা সম্পর্কে এই বর্ণময় প্রবাদ বহু পুরনো।
মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরের বালুচরি শিল্পীরা আজ চরম দুঃসময়ের মুখোমুখি। গতবছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের মাঝেই উৎসব মরশুম কেটে গেটে গেছে। সেই সময় শিল্পীরা ভেবে ছিল দুুঃসময় কেটে গিয়ে আবার সুদিন ফিরবে । সমস্ত তাঁতী পাড়া জুড়ে প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। সবাই মিলে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ,ঠিক সেই সময়ে দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ায় শিল্পীরা এখন দিশেহারা।
এরই মধ্যে ভয়ঙ্কর যশের আতঙ্কও গ্রাস করেছে। এলাকার কয়েকজন শিল্প্পী জানান , আসন্ন উৎসবের মরশুমে যেখানে শিল্পীরা দম ফেলার সময় পেতেন না ,এখন সেই জায়গায় তারা শুয়ে বসে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। বালুচরির আঁতুড়ঘর বিষ্ণুপুর দেখার জন্য দেশ- বিদেশের মানুষ ছুুটে আসতেন। আজ চারিদিকে শুধু খাঁ খাঁ করছে। শ্মশানের নিস্তব্ধতা বিরাজমান।
সময়ের হাত ধরে করোনার আবহে বিক্রি কমে গেছে। দেশে- বিদেশে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে।দীর্ঘ সময় ধরে শিল্পীরা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। জগৎবিখ্যাত বালুচরি শিল্প গভীর সঙ্কটে। সরকারি সহযোগিতা সত্ত্বেও সমস্যার সমাধান হয়নি আজও ।চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন কয়েক হাজার মানুষ । এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ ।শাড়ি কেনার চাহিদা ভীষণ ভাবে কমে গেছে। তৈরি করা বহু শাড়ি পড়ে আছে শিল্পীদের ঘরে। কিছুদিন আগেও মহকুমা প্রশাসনের ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ‘পোড়মাটির হাট নামে’ একটি অসাধারণ বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থা একটা নতুন জোয়ার এনেছিল।
সেই হাট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এছাড়াও বড় বড় ব্যবসায়ীরা ক্রমশ মুখ ফেরাচ্ছেন । একলাখি বালুচরি শাড়ি আর বিদেশে যাচ্ছে না। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে যে ভাবে সকাল ৭থেকে ১০ টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তাতে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। লাভের মুখ দেখা এখন অধরা স্বপ্ন । অনেকের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে । সুদিনের অপেক্ষায় কষ্টে দিন কাটছে মন্দিরনগরী তাঁত শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের । গতবছর করোনার জন্য বেসরকারি বরাত না থাকলেও মেলে সরাসরি সরকারি ও বেসরকারি নানান সাহায্য। এবার এখনো পর্যন্ত কোনরকমের সাহায্যই মেলেনি। বালুচরি শিল্পী অশোক তন্তবায়ু,কৃষ্ণা দে বলেন, ” পুুজোর আগে এই সময় সমগ্র বিষ্ণুপুরের বালুচরি শাড়ির শিল্পীদের এলাকা জুড়ে কাজের জোয়ার থাকতো, ৭-৮ লাখ টাকার বরাত পেত একজন শিল্পী ।এবার করোনার ভয়াবহ আবহে বরাত শূন্য। উৎসবের মরশুমের আয়ের টাকার বিনিময়ে আমাদের সারাবছর সংসার চলে। তাই এই মোহময় দুঃসময়ে কোন কাজ না থাকায় খুব চিন্তায় আছি। একটাই প্রশ্ন খাব কী? সংসার চলবে কীভাবে?”