সুবীর মণ্ডল, বাঁকুুুড়া জেলা প্রতিনিধি:
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মুকুটমণিপুর।ইয়াসের দুর্যোগ কাটলেও করোনার আবহে লকডাউনের দুর্ভোগ কাটেনি। চারদিকে শ্মশানের নিস্তব্ধতা ,শুনশান ।বহুদিন পর্যটক শূন্য। এক সময়ে পর্যটকদের সমাগমে মুখর হয়ে উঠত। গতবছর করোনার বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছিল,কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ায় এবং লকডাউন চালু হওয়ায় পুরো পর্যটন কেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছে।
এই পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। কাজ হারিয়ে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি কয়েক হাজার মানুষ। সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে টোটো, ভ্যান আর নৌচালকরা। সেই সঙ্গে হোটেল মালিক ও কর্মচারীরাও।সরকারি- বেসরকারি লজ আছে ২০ টির মতো। খাতড়া, রানিবাঁধ,ঝিলিমিলিতে আছে ১০ টির মতো লজ-রেস্টুরেন্ট আর হোটেল। হস্তশিল্পের ৪০ স্টলে বেচা-কেনা বন্ধ।
ভোটের পর লাগাতর করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায়, লকডাউন জারি হতেই মুকুটমণিপুর পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা থেকে টোটো, ভ্যান আর নৌচালকরা। অনেকেই অন্য পেশার সাথে জড়িত হয়েছেন এবং হচ্ছেন । আর যাদের আর অন্য কোনো উপায় নেই, তারা অসহায় অবস্থায় সুদিনের আশায় দিন কাটাচ্ছেন। কবে আবার নতুন করে খুলবে, তা অনিশ্চিত। কাজ হারানো বিভিন্ন পেশার মানুষের বক্তব্য সরকার আমাদের একটু সহযোগিতা করুক।ভ্যান চালক সমিতির অন্যতম সদস্য গোলাপ সাউ জানালেন–“সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমরা পরিবার- পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব কিনা জানি না।”
বিধান চন্দ্র রায়ের স্মৃতিবিজড়িত মুকুটমণিপুরের সবুজ প্রকৃতির টানে সারা বছর ধরে পর্যটকরা দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন, সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। দীর্ঘ দেড় বছরের চিত্র একেবারে বদলে গেছে। গত বছরের পুজোর সময় থেকে নতুন ছন্দে ফির ছিল। নতুন করে একটা আশার আলো দেখতে শুরু করেছিল সবাই। বৈদ্যুতিক বিল,কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে গিয়ে লজ- হোটেল মালিকরা গভীর সংকটের মধ্যে। লোকসানের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। লজ-হোটেল সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা শ্রী সুদীপ সাহু ও তাপস মণ্ডল তাদের দুর্ভোগ ও চরম দুঃখের কথা জানালেন-” সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না মনে হয়। ” সেই সঙ্গে সরকার ও মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কাছে প্রার্থনা, বৈদ্যুতিক বিলে বিশেষ ছাড় দেওয়া হোক। খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ শ্রী সুব্রত মহাপাত্র জানালেন “এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সবার পাশে দাঁড়িয়ে সংকট দূরীকরণের ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়া হবে।”
পঞ্চাশের দশকে কংসাবতী আর কুমারী নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এশিয়ার দ্বিতীয় মাটির তৈরী বাঁধ। বাঁধের আনুমানিক দৈর্ঘ ১০-১১ কিমি। বাঁধের উপরে দাঁড়ালে দুটি দৃশ্য দেখা যায়, একদিকে জলাধারের নীলটলটলে জল,দূরে সবুজ জঙ্গলের মনোমুগ্ধকর উপত্যকা।
ইতিউতি সবুজে মোড়া টিলা।বাঁধের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আর প্যানোরোমিক ভিউ এক কথায় অনন্য। মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির হাত ধরে এখন আরও বেশি আলোকপ্রাপ্ত ও নয়নাভিরাম মুকুটমণিপুর। কেবল পুজোর ছুটি কিংবা পর্যটন মরসুমে নয়, সারা বছর ভ্রমণকারীদের কাছে মুকুটমণিপুর প্রিয় ডেস্টিনেশন হয়ে উঠেছে। এখানে নগর সভ্যতার কোলাহল মুক্ত সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য চেটেপুটে উপভোগ করতে পারে। সেই কারণেই বাঁকুুুড়া রাণী মুকুটমণিপুর পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য নাম।