অনুকূল বিশ্বাস, মালদহ জেলা প্রতিনিধি।

করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ চোখ রাঙানিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সবটা জেলাই কম বেশি আক্রান্ত। তার মধ্যে কলকাতা ,উত্তর 24 পরগনা ও হাওড়ায় প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক।

কিছুদিন আগেও মালদহ জেলার অবস্থাও যথেষ্ঠ ভয়াবহ ছিল। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।রাজ্য সরকারের ঘোষিত আংশিক লকডাউন ও জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় মালদহের করোনা আক্রান্তের গ্রাফ বেশ খানিকটা নিম্নমুখী হয়েছে। এমতাবস্থায় সারা রাজ্যের করোনাকে বাগে আনতে লকডাউনই যে একমাত্র ভরসা সেটা বুঝতে পেরে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নতুন সরকার ১৬ই মে থেকে ৩০মে পর্যন্ত সারা রাজ্যে আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছেন। অসচেতন একশ্রেণির রাজ্যবাসীকে নিয়ন্ত্রণ করার এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোনো পথ খোলা ছিল না। মানুষ বাঁচাতে লকডাউন যেমন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে, তেমনি সেই লকডাউন আবার একশ্রেণির মানুষকে চরম সমস্যার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে সমস্ত লোকজন দিন আনে দিন খায় লকডাউনে তাদের দুর্দশার শেষ থাকে না।

রাজ্য সরকার সবজি , মাছ ,মুদিখানা , ফলসহ অন্যান্য বাজার সকাল ৭টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।মাত্র তিন ঘন্টা বাজার খোলা নিয়ে এক শ্রেণির দোকানদার চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।মালদা জেলার বৃহত্তম খুচরো সবজি,মাছ ও ফল বাজার হল রথবাড়ি বাজার। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন এই বাজার ভোর ৫টা থেকে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই দীর্ঘ সময় ধরে প্রান্তিক খুচরো ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করেন। সারাদিন দোকানদারি করে কারো দুশো টাকা,কারো তিনশ টাকা তো কারো পাঁচশ টাকা আয় হয়, যা দিয়ে কোনক্রমে পরিবারের সকলের দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান হয়। সমস্যা তৈরি হয়েছে এখানেই। আংশিক লকডাউনে দোকানদারি করার সময় মাত্র তিন ঘন্টা। এই স্বল্প সময়ে তাঁদের সেই আয় একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। কেউ ঠিকঠাক সংসার চালাতে পারছেন না।এমনকি কারো কারো দুবেলা উনুনে ভাতের হাঁড়ি পর্যন্ত চড়ছে না। বাড়ির সবাই এক পেটা খেয়ে জীবন ধারণ করছেন। অধিকাংশ সবজি বিক্রেতা ও মাছ বিক্রেতার ক্ষেত্রে যেটা ঘটছে সেটা ভয়ঙ্কর।যেহেতু সকাল দশটায় দোকান বন্ধ করতে হবে তাই সকাল ন’টা বাজলেই অধিকাংশ দোকানদার ক্রেতা সবজি বা মাছের যে দাম বলছেন সেই দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সারাদিন দোকান খোলা থাকলে এগুলো তারা স্বাভাবিক দামে বিক্রি করতে পারতেন। এদের কারও বাড়িতে সবজি বা মাছ সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই শেষ মুহূর্তে যা দাম পাচ্ছেন সেই দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে তাদের আয় অনেক কমে যাচ্ছে। কারো কারো ক্ষেত্রে লাভ তো দূর অস্ত পুঁজি পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে মালদার রথবাড়ি বাজারের মাছ বিক্রেতা মিঠু সেখকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন “আমি গরিব মানুষ বাবু ।বাড়িতে ফ্রিজ নেই তাই তিনশ টাকা কিলোর মাছ একশ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। না হলে যে এই গরমে পচে সব শেষ হয়ে যাবে। এতে আমাদের দোকানদারিই সার হচ্ছে ,লাভ যে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকছে।সংসার চালানো খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে”। সবজি বিক্রেতা কুমকুম হালদারের বক্তব্য “গরীব মানুষের কপাল এমনই হয়। সারাদিন সবজি বিক্রি করে যা আয় হতো তাতে কোনোরকমে সংসার চলতো। কিন্তু এখন যে যা দাম বলছে তাতেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি, পোড়া কপাল আমাদের।দশটা বাজলেই পুলিশ এসে জোর করে আমাদের দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন”।
মুদি দোকানদার শম্ভুর কথায় ” তিন ঘন্টার দোকানদারিতে আমরা মহাজনের ঘর থেকে মালপত্র আনতে যাব, নাকি নিজে দোকানদারি করব ,সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।এই স্বল্প সময়ে দোকানদারি করতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে”।

একদিকে যেমন করোনার ছোবলে জীবন খোয়ানোর আশঙ্কায় লকডাউন ভীষণ জরুরি, তেমনি করোনা থেকে বাঁচতে লকডাউনে না খেতে পাওয়ার যন্ত্রণায় সমাজের একশ্রেণির মানুষের জীবন উভয় সংকটের দোলাচলে কোনোক্রমে চলছে। জীবন মানুষের কাছে যেমন মূল্যবান তেমনি সেই জীবনধারণের খাদ্য সংগ্রহ আজ মহাসংকটে মুখে। খেটে খাওয়া গরিব মানুষ গুলোর জীবনে করোনাভাইরাস অভিশাপ রূপে নেমে এসেছে। জীবনধারণের তাগিদে জীবন হাতে নিয়ে বাড়ির বাইরে তাঁদের বেরোতেই হচ্ছে অথচ দুবেলা অন্নের জোগানের গ্যারান্টি নিতে পারছেন না।অধিকাংশ দোকানদারের বক্তব্য তিন ঘন্টাটা আর একটু বাড়লে তাঁদের রুটিরোজগার একটু বাড়তো।ওদিকে গণ পরিবহন বন্ধ থাকার ফলে বাজারে দূরদুরান্ত থেকে সবজি ,মাছ ও ফলের আমদানী অনেকটা কমেছে।ফলে ক্রেতারা আশঙ্খা প্রকাশ করছেন জিনিসপত্রের দাম দ্রুত বাড়বে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে