ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ উইকেটের সহজ জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

টাইগারদের বোলিং তোপে ১৪৮ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শতকের আগে ৮ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন রভম্যান পাওয়েল। কিন্তু মেহেদি হাসান মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে শেষ পর্যন্ত দেড়শ’ রানও তুলতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। বাংলাদেশ ৩৩.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।

এতে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে স্বাগতিকরা পায় পঞ্চম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ। একই সঙ্গে বিশ্বকাপ সুপার লিগে আরও ১০ পয়েন্ট যোগ হলো বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে স্বাগতিকদের পয়েন্ট হলো ২০।

১৪৯ রানের টার্গেটে আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলা শুরু করেছিলেন লিটন দাস। তামিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে করেছিলেন ২২ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে ব্যাট করা লিটন অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আকিল হোসেইনের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরেছেন এই ওপেনার। যাওয়ার আগে ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে করেন ২২ রান।

এরপর শান্ত এসে হাল ধরেন। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া এই ব্যাটসম্যান দারুণ কিছু শট খেলে দলের রান বাড়িয়ে নিয়েছেন। যদিও উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। জেসন মোহাম্মদের শিকার হওয়ার হওয়ার আগে ২৬ বলে ২ বাউন্ডারিতে খেলে যান ১৭ রানের ইনিংস।

এরপরই তামিমের সঙ্গে জ্বলে ওঠে সাকিবের ব্যাট। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান দলকে নিয়ে যান জয়ের দিকে। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তামিম ইকবাল। রেমন রেইফারের বলে আউট হওয়ার আগে পূরণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম হাফসেঞ্চুরি। ৭৬ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কা খেলেন ৫০ রানের ইনিংস।

বাকি কাজটা সেরেছেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। দীর্ঘ বিরতির পর সাকিব ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ম্যাচ জেতানোর পথে খেলেছেন হার না মানা ৪৩ রানের ইনিংস। ৫০ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৪ বাউন্ডারিতে। আর মুশফিক ২৫ বলে অপরাজিত থাকেন ৯ রানে।

জেসন মোহাম্মদ, আকিল হোসেইন ও রেমন রেইফার একটি করে উইকেট নেন।

এরআগে ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে টাইগারদের বোলিং তোপে ১৪৮ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা মিরপুরে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে কার্টার মাস্টার মুস্তাফিজের বিধ্বংসী বোলিংয়ের মুখে পড়েন ক্যারিবিয়রা। প্রথম ম্যাচের ন্যায় এ ম্যাচেও অন্ধকার দেখতে থাকেন অ্যামব্রিসরা। শুরুতে ক্যারিবিয়ান শিবিরে আঘাত হানেন মুস্তাফিজ।

ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিসকে মাত্র ৬ রানে ফেরান তিনি। দলীয় ১০ রানের মাথায় ফিজের বলে মেহেদি হাসান মিরাজের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন অ্যামব্রিস। এরপর জোরা আঘাত হানেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও  সাকিব আল হাসান।

অ্যামব্রিসের বিদায়ের পর মাত্র ২৭ রান যোগ করতেই দলীয় ৩৬ রানের মাথায় মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে সাজঘরে ফেরেন অপর ওপেনার জর্ন ওটলে। ৪৪ বলে ২৪ রান করে তামিম ইকবালের হাতে ধরে পড়েন তিনি। দলে এক রান যোগ হতেই একই ওভারে এবার প্যাভিলিয়নে ফেরেন জশুয়া ডি সিলভা। তাকে সরাসরি বোল্ড করেন মিরাজ।

এরপর সফরকারীদের খাদের কিনারে পাঠিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। কোমড় সোজা করে দাঁড়ানোর আগেই দলীয় ৩৯ রানের মাথায় আন্দ্রে ম্যাককার্থির (০৩) স্টাম্প ভাঙেন প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট পাওয়া সাকিব। এছাড়া রান আউটের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন কাইল মায়ের্স।

খাদের কিনারে থাকা উইন্ডিজকে বড় স্কোরের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক জেসন মোহাম্মাদ। কিন্তু দলীয় ৬৭ রানের মাথায় সাকিবের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। ২৬ বল খেলে মাত্র ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন জেসন।

সেখান থেকে মাত্র ৪ রান যোগ করতেই এবার আঘাত হানেন হাসান মাহমুদ। রুমাহ বোনারের সরাসরি স্টাম্প উড়িয়ে দেন এ পেসার। শেষ দুই উইকেট নেন মিরাজ। রেমন রেইফারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি।

১২০ রানে ৯ উইকেট খোয়ানো সফকারীদের বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন দেখান রভম্যান পাওয়েল। তবে তাকে বেশিদূর যেতে দেননি মিরাজ। দলীয় ১৪৮ রানের মাথায় মিরাজের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে মুশফিকের স্টাম্পিংয়ের শিকার হন পাওয়েল। বিদায় নেয়ার আগে ১ ছয় ও ২ চারে দলীয় সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন এই ক্যারিবীয়। নট আউট থেকে ১২ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন আকিল হোসেন।

অপরদিকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১০ ওভার বলে করে মাত্র ২৫ রান নিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান ২টি, সাকিব আল হাসান ২টি ও হাসান মাহমুদ একটি করে উইকেট লাভ করেন।

এর আগে টসে জিতে দুই পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হয়েছে ম্যাচটি। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), টিভি চ্যানেল টি-স্পোর্টস ও নাগরিক টিভিতে।

গত বুধবার (২০ জানুয়ারি) প্রথম ম্যাচে সফরত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারায় টাইগাররা। এক ম্যাচ হাতে রেখেই আজ সিরিজ জয় নিশ্চিত করল তামিম ইকবালরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে