আবু বক্কর সিদ্দিক বিপুল:
সম্প্রতি এসএ টিভিতে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
গত ৭ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রচারিত “ঢাকা বংশাল থানার ওসির নেতৃত্বে পার্সেল মালামাল লুট” শীর্ষক প্রতিবেদনটি ‘অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল,৬ এপ্রিল রাত ৯টা ৫ মিনিটের দিকে বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় সংলগ্ন এসএ পরিবহনের স্টোর রুম এবং আশেপাশের এলাকা থেকে একটি বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি (ভারতীয় ও মায়ানমার) অবৈধ পণ্য জব্দ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫টাকার মালামাল নেই তবুও ৫লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করা হয়েছে। কিন্তু বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত ওই অভিযানে আনুমানিক ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ পণ্য ছিল।—যেমন: তেল, সাবান, চকলেট, পারফিউম, ফেসওয়াশ ও প্যান্টের কাপড় ইত্যাদি। যেসব পন্য —জব্দ করা হয় তাদের বৈধ উপায়ে আমদানীর যথোপযুক্ত ডক্যুমেন্টস তারা প্রদর্শন করতে পারেননি। যেসব পণ্যের যথাযথ আমদানীর কাগজপত্র প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছিল, সেইসব পণ্যের তালিকা খোদ এসএ পরিবহনের পক্ষ থেকেই পুলিশকে দেয়া হয়েছিল, যা আমাদের কাছেই গচ্ছিত রয়েছে। এমনকি যেসব পণ্য জব্ধ করা হয়েছিল, সেইসব পণ্যের চালান নাম্বারসহ তাদের কোড নাম্বার অনুযায়ী তাদের দেয়া লিখিত কাগজে পুলিশের কর্মকর্তাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। যা তারা নিজেরাই আমাদের গাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মালামাল জব্দ করার পর তাদেরকে জব্দকৃত মালামালের বৈধ মালিকদেরকে থানায় যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু মামলা রুজু করে আদালতে পাঠানোর আগ পর্যন্ত কেউ থানায় এসে অভিযোগ জানায়নি।
উক্ত শুল্কবিহীন মালামাল জব্দ করার প্রেক্ষিতে বংশাল থানায় ৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে নিয়মিত মামলা (মামলা নং-০২) রুজু করা হয়। ১৯৭৪ সালের The Special Powers Act-এর 25B (1)(b)/25D ধারায় এতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, “এসএ টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনটিতে ‘কোনরূপ জব্দতালিকা না করে মালামাল লুট’ করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইন অনুযায়ী, জব্দ তালিকা প্রস্তুতের মাধ্যমে সকল আলামত সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়েছে” — এমন অভিযোগও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আদালতের অনুমতি ছাড়া জব্দকৃত মালামাল কাউকে হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। এসব পণ্য এখন আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতেই নিষ্পত্তি হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “থানায় নিয়ে বস্তাগুলো কাটাছেঁড়া করে মালামাল ভাগাভাগি করা হয়েছে”—এমন দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। এ বিষয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, “প্রতিটি মালামালের হিসাব জব্দতালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঐদিন বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়ে কিছু কার্টন নষ্ট হয় ও ছিড়ে যায়, মালামাল সুরক্ষার জন্য তা আমাদের অফিসের লোকজন গুছিয়ে রাখছিল তার ভিডিও। এমনকি সেই ভিডিও হতে পারে মালামাল থানার ভিতরে গুছিয়ে রাখার দৃশ্য এবং থানায় মালামাল ঢুকে যাওয়ার পর ভাগাভাগির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ থানার সবস্থানেই সিসিটিভি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাই এ ধরনের দৃশ্যের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।” আর পুলিশের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব দিয়েছে এমন প্রমান দেখাতে পারলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন।
এই ব্যাপারে লালবাগ জোনের ডেপুটি কমিশনার আমাদের জানান, আমরা দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে সুন্দর ও স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ দিনরাত পরিশ্রম করছে। অবৈধ পথে আসা বিদেশী পণ্যগুলো বেশিরভাগ ট্রান্সপোর্ট ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ করাকে নিরাপদ মনে করে অপরাধীরা। তাই গোপন সূত্র পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমরা অনেক অপরাধ দমন করার চেষ্টা করি এবং সফলও হই। একইভাবে গত ২৫ মার্চ প্রায় বংশাল থানার ওসির নেতৃত্বে আর্মানিটোলায় হোসেন ট্রান্সপোর্ট থেকে আনুমানিক ২৬ লক্ষ টাকার শুল্কবিহীন অবৈধ পথে আসা শাড়ী জব্দ করে আদালতে প্রেরণ করা হয়, মামলা নং ২৮, তারিখ ২৫/০৩/২৫ ইং। একইভাবে গত ৩০ মার্চ প্রায় বংশাল থানার ওসির নেতৃত্বে এসএ পরিবহন থেকে আনুমানিক ১১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার শুল্কবিহীন অবৈধ পথে আসা শাড়ী জব্দ করে আদালতে প্রেরণ করা হয়, যার মামলা নং ৩২ তারিখ ৩০/০৩/২৫ইং। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় আড়াই টনের বেশি পলিথিন জব্দ করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছিল। দেশের পুলিশ প্রশাসন দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার করার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে আর পেশাদার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং বাহিনীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত। তাই সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীলতা ও যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।