গনতন্ত্রের সুতিকাঘর খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক নজীরবিহীন ঘটনার সাক্ষী এখন গোটা বিশ্ব। ২শ’ বছরের ইতিহাস ভেঙে পার্লামেন্টে হামলার পর আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’বার অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি এক সপ্তাহ পর ছাড়ছেন মার্কিন মসনদ। শপথ নেবেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। 

তবে ক্ষমতা ছাড়লেও বিশ্ব দরবারে আমেরিকার গায়ে যে চুনকালি মাখিয়েছেন ট্রাম্প, সেজন্য সহসাই রেহাই মিলছে না মার্কিন এই ধনকুবে প্রেসিডেন্টের।

আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেন শপথ গ্রহণ করলে শিগগিরই সিনেটে বিচারের মুখোমুখি করা হবে তাকে।

ডেমোক্র্যাটরা চেয়েছিল অভিশংসন করেই বিচারের মুখোমুখি করবেন ট্রাম্পকে। কিন্তু সে সুযোগ আর নেই। কংগ্রেসের নিম্নক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ রিপাবলিক্যান প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘দাঙ্গায় উস্কানি’ দেয়ার অভিযোগে অভিশংসন করেছে। কিন্তু উচ্চকক্ষে সেটি পাস হতে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

কেননা, এই মুহূর্তে সিনেটের অধিবেশন আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মূলতবি রয়েছে। তারপরও সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককোনেলের দপ্তর থেকে গতকাল বুধবার জরুরি অধিবেশন ডাকার ব্যাপারে সিনেটের সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমারের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ফলে ট্রাম্প তার শেষ সময়গুলো হোয়াইট হাউজেই যে কাটাতে পারছেন তা অনেকটা নিশ্চিত।

কিন্তু জো বাইডেন শপথ নেয়ার পর পরই ট্রাম্পকে বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়েছেণ ডেমোক্র্যাট সিনেটররা। বিচারে তিনি যদি দোষি সাব্যস্ত হোন তাহলে মার্কিন আইন অনুযায়ী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ট্রাম্প।

সপ্তাহ খানেক পরে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা হতে যাওয়া ডেমোক্র্যাটদলীয় চাক শুমার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হওয়ার লজ্জা বহন করছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে সিনেটের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তার বিচার কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।’

ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হওয়ার সময় প্রশ্ন ছিল একটি—কতজন রিপাবলিকান তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। শেষে দেখা গেল ১০ রিপাবলিকান সদস্য নিজ দলের বাইরে গিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেন। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পকে অভিশংসনে প্রস্তাব ২৩২-১৯৭ ভোটে পাস হয়।

বছরখানেক আগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হওয়ার পর রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তখন নির্বাচনের আগে বাইডেনের পরিবারের তথ্য পেতে তিনি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

গত ৬ জানুয়ারি জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকার সর্বোচ্চ আইন প্রণেতাদের স্বীকৃতির দিনে ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। ওই তাণ্ডবে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচ জনের মৃত্যুর হয়। হামলাকারীদের ‘দেশ প্রেমিক’ বলে অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। যদিও পরে নিজ দেশ ও বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনার মুখে নিজের বক্তব্য পাল্টে ফেলেন তিনি। অঙ্গীকার করেন স্বাভাবিক ক্ষমতা হস্তান্তরের। তবে ভোট চুরির অভিযোগ এখনও করে যাচ্ছেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট।

এরই জেরে মূলত তাকে নির্ধারিত সময়ের আগেই লজ্জাজনকভাবে বিদায় দিতে উঠে পড়ে লাগে প্রতিনিধি পরিষদ। কিন্তু ভাগ্যগুণে শেষ সময় পর্যন্ত হোয়াইট হাউজে থাকতে পারছেন ট্রাম্প। তবে মিলছে না মুক্তি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে