সুবীর মণ্ডল, বাঁকুড়া জেলা প্রতিনিধি:

রাতভোর বৃষ্টিতে বাঁকুড়া গন্ধেশ্বরি নদী পুরো কানাই কানাই ভরে উঠেছে। সতীঘাটের কজওয়ে   জলের তলায়। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ভয়ঙ্কর ভাবে  ফুঁসছে।

অশনি সংকেত দিচ্ছে কোন  মহাপ্রলয়ের। মানুষের মধ্যে আতঙ্কের  পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একটার পর একটা  বিপদ নেমে আসছে  জেলাবাসীর জীবনে। এই নদীর তীরে জেলার সদর শহর। লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাস। বিপন্ন শহরের এক দিকে। পরিণতি নিয়ে  মানুষ ভীষণ সন্ত্রস্ত।  জল বাড়ছে  শিলাবতী নদীরও। সোনামুখীতে শালি নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপরে বইছে। কংসাবতী নদীতে বাড়ছে  জল। সবজি চাষে বড় ক্ষতির সম্মুখীন চাষিরা। কম- বেশি জেলার বিভিন্ন স্থানে জলে মাঠ- খেত প্লাবিত।

বিশেষ করে  বাঁকুড়া শহরের  বস্তি এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে । ৭নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি বাড়ি  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরসভার উদ্যোগ গ্রহণ প্রশংসনীয়। শহরের বিভিন্ন গণসংগঠনের  কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। একদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সমগ্র জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আসলে  “মরার উপরে খাঁড়ার  ঘা” । একটার পর একটা  আঘাত  নেমে  আসছে  জেলাবাসীর জীবনে। লকডাউন আরো ১৫ দিন বেড়েছে, ইয়াসের তাণ্ডবলীলায় বিধ্বস্ত জেলার ক্ষত এখন  শুকিয়ে যায় নি। তার মধ্যেই  প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন করে বড় ক্ষত সৃষ্টি করলো।সাধারণ মানুষ দিশেহারা। কয়েক দিন  বজ্রপাতে অকালে ঝরে গেল বহু তাজা প্রাণ। গতকাল গভীর রাতে ভারি বৃষ্টি শুরু  হয়েছে ।গোটা জেলা জুড়ে নিম্নচাপের প্রভাবে  ভারি বৃষ্টি  চলছে । নিচু এলাকায়  ইতিমধ্যেই  মাটির বহু বাড়ি  নষ্ট হয়ে গেছে। প্রশাসন  নিরাপদ জায়গায় মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার  কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় করছে। জেলার সব নদীতে জলস্তর  বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে জেলা সদরের পাশ দিয়ে  প্রবাহিত গন্ধেশ্বরীর জল বিপদ  সীমার উপর দিয়ে  বইতে শুরু করেছে।

বছর দুয়েক  আগে ২০১৮তে প্লাবিত হয়ে  এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘটিয়েছিল  এই নদী। শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ক্রমশই বাড়ছে জলের স্তর। নীচু এলাকার মানুষের মধ্যে  পুরনো দিনের  ভয়ঙ্কর স্মৃতি জেগে  উঠেছে। একটা  নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে  দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। নানান কারণে আজ এই ভয়ঙ্কর অবস্থা বলে মনে করেন  শহরের প্রবীণ মানুষজন। জমি  মাফিয়াদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নদীর বুকে  চর ।বহু বছর আগে কিছু  সংস্কার  হয়েছিল। তারপর দীর্ঘদিন কোন  কাজ  হয়নি। সরকার এসেছে, আবার চলেও গেছে,  সমস্যা কোন  সমাধান হয়নি। নদী   জল ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে  ।নদীর নাব্যতা সংকট নিরসনে  দীর্ঘদিন কোন ইতিবাচক  পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি প্রশাসন।  শুধু  খাতা- কলমে কাজ হয়েছে। বাস্তবে  নিট  ফল  জিরো।  বেআইনি দখলদারিরা  নদীর গতিপথকে অবরুদ্ধ করে চলেছে।  নদীর বুকে  বেআইনি নির্মাণ নদীর  স্বাভাবিক গতিপথকে অবরুদ্ধ করছে।ফলে  হঠাৎ বেশি  বৃষ্টি হলে  জল দুকুল ছাপিয়ে জনবসতির দিকে এগিয়ে  আসছে। এছাড়া  জলনিকাশি  ব্যবস্থা ভালো  নেই। শহরের  সমস্ত বর্জ্য পড়ছে  নদীতে। জনপদ আর নদী  অনেক  জায়গায় একাকার হয়ে গেছে।  সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  এলাকা  মানকানালি। পরিবেশ দূষণের কারণে আজ মৃত্যুর  সঙ্গে  গন্ধেশ্বরী নদী লড়াই করছে। হয়তো একদিন  নদী  হারিয়ে যাবে। গন্ধেশ্বরী নদী  বাঁচাও কমিটি  বহু আন্দোলন করেছে, কিন্তু খুব  পরিবর্তন  হয় নি। আসলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে  বাধা ঘটলে  নদী প্রতিশোধ নেবেই। জন সচেতনতা  ও গণ আন্দোলন ছাড়া দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের নদী ও জনজীবন  হয়তো  রক্ষা করা যাবে না। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শুধু হবে না। সমস্যার মূলকে উৎপাটিত করতে হবে  সবাইকে নিয়ে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে