Dhaka ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রথমদিনে অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২ পোল্যান্ডের বাংলাদেশের দূত হলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলাম ‘পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে উঠতে প্রস্তুত বাংলাদেশ’ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সাক্ষী আবছার আটক ১৩ দিন বৃষ্টিবলয়ে থাকবে পুরো দেশ, হবে কালবৈশাখী-বজ্রপাত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লুট হওয়া অস্ত্র নিরাপত্তার জন্য হুমকি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

এই শহরে আমাকে একা করে দিলো করোনা : জান্নাতুল ফারিয়া শাপলা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:১৪:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১
  • ২০৭ Time View

জীবনের মানে বুঝতাম না যদি না হতো এই মরনব্যাধী করোনা। বিষাক্তে ছেয়ে গেছে চারিদিক।চারিদিকে শুধু আত্মীয় স্বজন হারানোর কান্না আর হাহাকার। কত মানুষ হারাচ্ছে তার প্রিয়জনকে।

আমি এখনও বুঝিনি প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা, কিন্তু একটু হলেও অনুভব হয়েছে।
এতো কিছু পরেও আমার পরিবার এখনও আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছে। পরিবার বলতে মা নানী আর আমি। বাবা জন্মের আগেই হারিয়ে গেছে। মা একটা বড় কম্পানিতে চাকরি করে।
ভালোই চলছিলো আমাদের ছোট্ট সংসার। সুখে শান্তিতে পরিপূর্ণ ছিলো।অনেক সুন্দর ভাবেই মা আমার আবদার গুলো মেনে নিতো আর পূর্ণ করতো।একদিন নানী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যায়।অসুস্থ হবার কয়েক দিনের মাথায় নানী আমাদের মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায়।

নানী শোক সামলে না উঠতেই মা অফিস থেকে এসে বলে শরীর খারাপ লাগছে। জ্বর জ্বর লাগছে।
রাত ১২:৩০ মিনিট মায়ের কপালে হাত দিয়ে দেখি প্রচুর জ্বর মধ্যেরাতে কোথায় যাবো কাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। মায়ের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে এগতে লাগলো। কোনো মতে রাতটা শেষ হলো।ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই মাকে নিয়ে ছুটলাম হাসপাতালে।
করোনা পরীক্ষা করে মায়ের করোনা পজিটিভ আসে। এটা শুনার পরে আমার পায়ের নিচে থেকে যেনো মাটি সরে গেলো।

ভাবিনি কখনও এই ভাবে সবাই আমাকে একা করে দিয়ে চলে যাবে।

কি করবো বুঝতে পারছি না।এক আত্মীয়র কাছে গেলাম। শুনেছে মায়ের করোনা হয়েছে। আমার মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিলো।

আমাদের সাথে সবাই যেনো যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিলো। মাকে নিয়ে কি করবো বুঝতে পারছি না। মায়ের জমানো টাকা থেকে একটু একটু করে খরচ করতে লাগলাম। কিন্তু এতে আর কতোদিন অসুস্থ মা হাসপাতালে বিল ঔষুধের খরচ। কতো দিনই বা আর যাবে এতে।

পড়াশোনা মাত্র শেষ করেছি। লকডাউনের মাঝে চাকরি পাওয়াও খুব কষ্টকর। তবুও চেষ্টা করলাম। এক সপ্তাহের মাথায় স্বল্প বেতনে একটা চাকরি পেয়ে গেলাম। আজ আমার চাকরির মাত্র পনেরো দিন।অফিসে কাজ করছি। হঠাৎ করে হাসপাতাল থেকে ফোন আসলো, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে বললো। আমি কোনো প্রশ্ন না করেই চলে গেলাম হাসপাতালে।

কিছুক্ষন পরে আমার সামনে সাদা কাপড়ে ঢাকা একটা লাশ নিয়ে আসলো। আমার বুকের মধ্যে কেমন যেনো আজান ভয় কাজ করতে লাগলো।
লাশের মুখে থেকে সাদা কাপড় টা সড়ালো। আমি লাশটা দেখে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম। ওই লাশটা যে অন্য কারো লাশ না। ওটা যে আমার মায়ের লাশ। আমার পুরো পৃথিবীর লাশ।
এক দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরবো তার আগেই কয়েক জন আমাকে ধরে নিলো।
শেষ বারের জন্য ধরতে দিলো না আমার মাকে। শেষ বারের জন্য মায়ের বুকে কোলে মাথা রাখতে দিলো না। এই করোনা আমার সব কেড়ে নিলো। আমার পুরো পৃথিবী কেড়ে নিলো।এই শহরে আমাকে একা করে দিলো। একটি বারের জন্য মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিলো না।
এই করোনা আমাকে নিস্য করে দিলো। এটাও বুঝিয়ে দিলো এই শহরে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো নয়।

মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতে ইচ্ছে করছে, এই নিষ্ঠুর শহরে আমি একা কোথায় থাকবো? কে দেখবে আমাকে? কে মিটাবে আমার আবদার গুলো.? কিন্তু পারছি না। করোনা যে আমার মায়ের কাছে যেতে দিচ্ছে না।এই শহরে আমাকে যে একা করে দিলো করোনা।

বিঃদ্রঃ এটা শুধু গল্প।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

প্রথমদিনে অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২

এই শহরে আমাকে একা করে দিলো করোনা : জান্নাতুল ফারিয়া শাপলা

Update Time : ০৫:১৪:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১

জীবনের মানে বুঝতাম না যদি না হতো এই মরনব্যাধী করোনা। বিষাক্তে ছেয়ে গেছে চারিদিক।চারিদিকে শুধু আত্মীয় স্বজন হারানোর কান্না আর হাহাকার। কত মানুষ হারাচ্ছে তার প্রিয়জনকে।

আমি এখনও বুঝিনি প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা, কিন্তু একটু হলেও অনুভব হয়েছে।
এতো কিছু পরেও আমার পরিবার এখনও আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছে। পরিবার বলতে মা নানী আর আমি। বাবা জন্মের আগেই হারিয়ে গেছে। মা একটা বড় কম্পানিতে চাকরি করে।
ভালোই চলছিলো আমাদের ছোট্ট সংসার। সুখে শান্তিতে পরিপূর্ণ ছিলো।অনেক সুন্দর ভাবেই মা আমার আবদার গুলো মেনে নিতো আর পূর্ণ করতো।একদিন নানী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যায়।অসুস্থ হবার কয়েক দিনের মাথায় নানী আমাদের মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায়।

নানী শোক সামলে না উঠতেই মা অফিস থেকে এসে বলে শরীর খারাপ লাগছে। জ্বর জ্বর লাগছে।
রাত ১২:৩০ মিনিট মায়ের কপালে হাত দিয়ে দেখি প্রচুর জ্বর মধ্যেরাতে কোথায় যাবো কাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। মায়ের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে এগতে লাগলো। কোনো মতে রাতটা শেষ হলো।ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই মাকে নিয়ে ছুটলাম হাসপাতালে।
করোনা পরীক্ষা করে মায়ের করোনা পজিটিভ আসে। এটা শুনার পরে আমার পায়ের নিচে থেকে যেনো মাটি সরে গেলো।

ভাবিনি কখনও এই ভাবে সবাই আমাকে একা করে দিয়ে চলে যাবে।

কি করবো বুঝতে পারছি না।এক আত্মীয়র কাছে গেলাম। শুনেছে মায়ের করোনা হয়েছে। আমার মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিলো।

আমাদের সাথে সবাই যেনো যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিলো। মাকে নিয়ে কি করবো বুঝতে পারছি না। মায়ের জমানো টাকা থেকে একটু একটু করে খরচ করতে লাগলাম। কিন্তু এতে আর কতোদিন অসুস্থ মা হাসপাতালে বিল ঔষুধের খরচ। কতো দিনই বা আর যাবে এতে।

পড়াশোনা মাত্র শেষ করেছি। লকডাউনের মাঝে চাকরি পাওয়াও খুব কষ্টকর। তবুও চেষ্টা করলাম। এক সপ্তাহের মাথায় স্বল্প বেতনে একটা চাকরি পেয়ে গেলাম। আজ আমার চাকরির মাত্র পনেরো দিন।অফিসে কাজ করছি। হঠাৎ করে হাসপাতাল থেকে ফোন আসলো, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে বললো। আমি কোনো প্রশ্ন না করেই চলে গেলাম হাসপাতালে।

কিছুক্ষন পরে আমার সামনে সাদা কাপড়ে ঢাকা একটা লাশ নিয়ে আসলো। আমার বুকের মধ্যে কেমন যেনো আজান ভয় কাজ করতে লাগলো।
লাশের মুখে থেকে সাদা কাপড় টা সড়ালো। আমি লাশটা দেখে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম। ওই লাশটা যে অন্য কারো লাশ না। ওটা যে আমার মায়ের লাশ। আমার পুরো পৃথিবীর লাশ।
এক দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরবো তার আগেই কয়েক জন আমাকে ধরে নিলো।
শেষ বারের জন্য ধরতে দিলো না আমার মাকে। শেষ বারের জন্য মায়ের বুকে কোলে মাথা রাখতে দিলো না। এই করোনা আমার সব কেড়ে নিলো। আমার পুরো পৃথিবী কেড়ে নিলো।এই শহরে আমাকে একা করে দিলো। একটি বারের জন্য মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিলো না।
এই করোনা আমাকে নিস্য করে দিলো। এটাও বুঝিয়ে দিলো এই শহরে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো নয়।

মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতে ইচ্ছে করছে, এই নিষ্ঠুর শহরে আমি একা কোথায় থাকবো? কে দেখবে আমাকে? কে মিটাবে আমার আবদার গুলো.? কিন্তু পারছি না। করোনা যে আমার মায়ের কাছে যেতে দিচ্ছে না।এই শহরে আমাকে যে একা করে দিলো করোনা।

বিঃদ্রঃ এটা শুধু গল্প।