বলিউডে মাদকসেবন নিয়ে কঙ্গনা রানাউতের বক্তব্যের (বলিউডের ৯৯ শতাংশই মাদক নেন) বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন ঊর্মিলা মাতন্ডকর। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কঙ্গনার রাজ্য হিমাচল মাদক সেবনের আখড়া। তাঁর উচিত আগে সেই সমস্যার সমাধান করা। যে অভিনেত্রী সাধারণ মানুষের করের টাকায় ওয়াই ক্যাটেগরির সুরক্ষা নিয়ে চলাফেরা করছেন, তিনি কেন পুলিশকে তাঁর রাজ্যের ড্রাগ র‍্যাকেটের খবর দিতে পারছেন না?”

প্রসঙ্গত, এখন দল ছেড়ে দিলেও ঊর্মিলা গত লোকসভা ভোটের সময় কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বস্তুত, তিনি মুম্বই-উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের হয়ে লড়েওছিলেন। কিন্তু হেরে যান। পক্ষান্তরে, কঙ্গনা ‘বিজেপি-ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। ফলে ঊর্মিলার কঙ্গনাকে আক্রমণের পিছনে রাজনৈতিক যোগ রয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রাক্তন কংগ্রেস নেত্রীর আক্রমণের জবাবে ‘পদ্মশ্রী’ কঙ্গনা যা বলেছেন, তাতে এর জল বহুদূর গড়ানোর সম্ভাবনা। কঙ্গনার কথায়, “ঊর্মিলাকে কি কেউ তার অভিনয় দক্ষতার জন্য চেনেন? নাহ্। তা হলে উনি কেন বিখ্যাত? উনি বিখ্যাত সফট পর্নে অভিনয় করার জন্য!’’

সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই কঙ্গনা বলিউডের বড় অংশে মাদকের নিয়মিত ব্যবহার নিয়ে সরব। বস্তুত, এই বিষয়ে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই কঙ্গনার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চন। তিনি বলিউডের মাদকযোগের অভিযোগ উড়িয়ে দেন। দ্রুত জয়ার পাশে দাঁড়ান তাপসী পান্নু, স্বরা ভাস্করের মতো বলিউডের কঙ্গনা-বিরোধী লোকজন। পাল্টা বিবৃতি জারি করেন কঙ্গনাও। এর মধ্যেই প্রকাশ্যে আসে ঊর্মিলার বক্তব্য। একটি সাক্ষাৎকারে ঊর্মিলা কঙ্গনাকে আক্রমণ করেন তার রাজ্য হিমাচলের মাদক-যোগ নিয়ে। পাশাপাশিই বলেন, “শাসকদলের থেকে ভোটের টিকিট পাওয়ার জন্যই বলিউডের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন কঙ্গনা।’’

কঙ্গনা যে পাল্টা মুখ খুলবেন, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। তিনি বলেছেন, চাইলে খুব সহজেই তিনি বিজেপি-র টিকিট পেতে পারেন। তার জন্য তাঁকে এতকিছু করতে হবে না। পাশাপাশিই বলেছেন, ঊর্মিলা বিখ্যাত হয়েছেন সফট পর্নে অভিনয় করে। আর প্রশ্ন করেছেন, ‘‘ঊর্মিলা টিকিট পেতে পারলে আমি পেতে পারি না?”

জয়ার মতোই উর্মিলার পাশে দাঁড়িয়েছে বলিউডের কঙ্গনা-বিরোধী অংশ। যেখানে রয়েছেন স্বরা ভাস্কর, পূজা ভট্ট, অনুভব সিন্হা, ফারহা খানের মতো তারকারা। তাদের বক্তব্যের মোদ্দা কথা, কঙ্গনার কোনও মন্তব্যকেই গুরুত্ব দিতে নারাজ তারা। স্বরা যেমন টুইট করেছেন, ‘এখনও রঙ্গিলা, সত্য, মাসুমের মতো ছবিতে ঊর্মিলার কাজ তাকে অবাক করে’। ফারহা আরও সরাসরি, ‘প্রতিভা নিজগুণেই নজর কাড়ে। গলা ফাটিয়ে তার প্রচারের প্রয়োজন পড়ে না’। প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই কঙ্গনাকে নিয়ে সরগরম মুম্বাই শহর এবং হিন্দি ছবির জগৎ। তাকে কেন্দ্রের শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে ধরে নিয়ে মহারাষ্ট্র্রের উদ্ধব ঠাকরের সরকারের অধীন বৃহন্মুম্বই পুরসভা কঙ্গনার পালি হিলের বাংলোর ‘বেআইনি’ অংশ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তা নিয়ে বম্বে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন কঙ্গনা। সেখানে বাড়ি ভাঙার উপর স্থগিতাদেশ পেয়েছেন তিনি। তারপর সরাসরি উদ্ধবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।

শেষমেশ কঙ্গনা মুম্বাই ছেড়ে হিমাচলের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকেও প্রথমে জয়া এবং তারপর ঊর্মিলার বিরুদ্ধে পরপর বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর আগে তিনি নিজের বক্তব্য বলিউড, মাদক ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঊর্মিলাকে ‘সফট পর্ন অভিনেত্রী’ বলে তিনি পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছেন। টুইটারে তাকে তুলোধনা করা হচ্ছে। কিন্তু কঙ্গনার সমর্থনে সেভাবে প্রকাশ্যে এখনও পর্যন্ত কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। এখন দেখার, ঊর্মিলা নিজে এ নিয়ে কিছু বলেন কি না!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে