Dhaka ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জন্মবার্ষিকী আজ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৫১:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৩৫ Time View

বিনোদন ডেস্ক :

উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জন্মবার্ষিকী আজ। ভারতের আসামের সদিয়ায় ১৯২৬ সালের আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

দরাজ গলার অধিকারী এই কণ্ঠশিল্পীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। অসমিয়া চলচ্চিত্রে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় গান গেয়ে ভারত এবং বাংলাদেশে সুনাম অর্জন করেন।

ভূপেন হাজারিকা ১৯৪২ সালে গুয়াহাটির কটন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট আর্টস, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে বিএ এবং ১৯৪৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ভূপেন হাজারিকা তার ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর ও কোমল ভঙ্গির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তার রচিত গানগুলো ছিল কাব্যময়। গানের উপমাগুলো তিনি প্রণয়সংক্রান্ত, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয় থেকে তুলে আনতেন। তিনি আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে লোকসংগীত গাইতেন।

১৯৩৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি অসমিয়া ভাষায় নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা পরিচালিত ‘ইন্দুমালতী’ ছবিতে ‘বিশ্ববিজয় নওজোয়ান’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছিলেন। পরে তিনি অসমিয়া চলচ্চিত্রের একজন নামজাদা পরিচালক হয়ে ওঠেন। অসমিয়া ছাড়াও বাংলা ও হিন্দি ভাষাতেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন এবং অনেক গান গেয়েছেন। অবশ্য এসব গানের বেশিরভাগই মূল অসমিয়া থেকে বাংলায় অনূদিত।

ভূপেন হাজারিকার গানগুলোতে মানবপ্রেম, প্রকৃতি, ভারতীয় সমাজবাদের, জীবন-ধর্মীয় বক্তব্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এছাড়াও, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী সুরও উচ্চারিত হয়েছে বহুবার।

‘মানুষ মানুষের জন্যে/ জীবন জীবনের জন্যে /একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?/ ও বন্ধু …’ এর মত তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’, ‘আমি এক যাযাবর’, ‘আমায় ভুল বুঝিস না’, ‘একটি রঙ্গীন চাদর’, ‘ও মালিক সারা জীবন’, ‘গঙ্গা আমার মা’, ‘প্রতিধ্বনি শুনি’, ‘বিস্তীর্ণ দুপারে’, ‘মানুষ মানুষের জন্যে’, ‘সাগর সঙ্গমে’, ‘হে দোলা হে দোলা’, ‘চোখ ছলছল করে’ অন্যতম।

সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১৯৭৯ সালে অল ইন্ডিয়া ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে অসম সরকারের শঙ্করদেব পুরস্কার, ১৯৯২ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে পদ্মভূষণ, ২০০১ সালে অসম রত্ন এবং ২০০৯ সালে সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার। ২০১৯ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ পদকে সম্মানিত হন ভূপেন হাজারিকা। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রুদালী ছবির শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার অর্জন।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পী ২০১১ সালের ৫ নভেম্বর ৮৫ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানী হাসপাতালে মারা যান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জন্মবার্ষিকী আজ

Update Time : ০৫:৫১:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিনোদন ডেস্ক :

উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জন্মবার্ষিকী আজ। ভারতের আসামের সদিয়ায় ১৯২৬ সালের আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

দরাজ গলার অধিকারী এই কণ্ঠশিল্পীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। অসমিয়া চলচ্চিত্রে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় গান গেয়ে ভারত এবং বাংলাদেশে সুনাম অর্জন করেন।

ভূপেন হাজারিকা ১৯৪২ সালে গুয়াহাটির কটন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট আর্টস, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে বিএ এবং ১৯৪৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ভূপেন হাজারিকা তার ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর ও কোমল ভঙ্গির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তার রচিত গানগুলো ছিল কাব্যময়। গানের উপমাগুলো তিনি প্রণয়সংক্রান্ত, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয় থেকে তুলে আনতেন। তিনি আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে লোকসংগীত গাইতেন।

১৯৩৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি অসমিয়া ভাষায় নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা পরিচালিত ‘ইন্দুমালতী’ ছবিতে ‘বিশ্ববিজয় নওজোয়ান’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছিলেন। পরে তিনি অসমিয়া চলচ্চিত্রের একজন নামজাদা পরিচালক হয়ে ওঠেন। অসমিয়া ছাড়াও বাংলা ও হিন্দি ভাষাতেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন এবং অনেক গান গেয়েছেন। অবশ্য এসব গানের বেশিরভাগই মূল অসমিয়া থেকে বাংলায় অনূদিত।

ভূপেন হাজারিকার গানগুলোতে মানবপ্রেম, প্রকৃতি, ভারতীয় সমাজবাদের, জীবন-ধর্মীয় বক্তব্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এছাড়াও, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী সুরও উচ্চারিত হয়েছে বহুবার।

‘মানুষ মানুষের জন্যে/ জীবন জীবনের জন্যে /একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?/ ও বন্ধু …’ এর মত তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’, ‘আমি এক যাযাবর’, ‘আমায় ভুল বুঝিস না’, ‘একটি রঙ্গীন চাদর’, ‘ও মালিক সারা জীবন’, ‘গঙ্গা আমার মা’, ‘প্রতিধ্বনি শুনি’, ‘বিস্তীর্ণ দুপারে’, ‘মানুষ মানুষের জন্যে’, ‘সাগর সঙ্গমে’, ‘হে দোলা হে দোলা’, ‘চোখ ছলছল করে’ অন্যতম।

সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১৯৭৯ সালে অল ইন্ডিয়া ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে অসম সরকারের শঙ্করদেব পুরস্কার, ১৯৯২ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে পদ্মভূষণ, ২০০১ সালে অসম রত্ন এবং ২০০৯ সালে সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার। ২০১৯ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ পদকে সম্মানিত হন ভূপেন হাজারিকা। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রুদালী ছবির শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার অর্জন।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পী ২০১১ সালের ৫ নভেম্বর ৮৫ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানী হাসপাতালে মারা যান।