বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্বে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য এখান থেকেই চলে। তাই এখানে আমাদের অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করা মানুষদের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির উৎস এটি। তারা সবসময় অবহেলিত। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সমুদ্র সম্পদকে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে লাগাতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে, সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার আছে কোনদিনই তা প্রতিষ্ঠিত হতো না। সমুদ্রসীমা অর্জনের ফলে সমুদ্র সম্পদ আমাদের অর্থনৈতিক কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়েছি।’
আজ শনিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের কমিশনিং অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ৯টি জাহাজ ও একটি ঘাঁটিকে কমিশনিং করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির জন্য আলাদা একটি ভূখন্ড, দেশ এবং আত্ম পরিচয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন। যা তার জীবনের লক্ষ্য ছিল। তিনি ২৪টি বছর সংগ্রাম করেছেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের কথা বলতে গিয়ে জেল-জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন। তার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকাকালে সমুদ্র সীমায় বাংলাদেশের অধিকার আদায়ে ১৯৭৪ সালে আইন পাশ করে দিয়ে যান। তিনি দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যাক্ট প্রণয়ন করেন। সে সময় মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করে আমরা ব্যবহার করতে শুরু করি। কিন্তু জাতির পিতা চলে যাওয়ার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা এই সমস্ত সুযোগগুলোর দিকে তাকায়নি, অধিকারগুলোর কথা তারা বলেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার আছে, তা নিয়ে একবারও কোথাও উল্লেখ করেননি। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা আইন করে যান, আর জাতিসংঘে আইন হয় ১৯৮২ সালে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ কার্যক্রম শুরু করি। পরবর্তীতে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি।’
ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রেখেও আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখান থেকে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্লু ইকোনমি ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই সমুদ্র সম্পদকে কিভাবে আমরা কাজে লাগাবো সে ব্যাপারে ইতোমধ্যে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্ট গার্ডের জন্য ২৭টি কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারসহ ৫৫টি অবকাঠামো ইতিমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১২ বছরে কোস্ট গার্ডের জন্য বিভিন্ন আকারে ৫৫টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের আওতায় কোস্টগার্ডের বেজ সমূহের কর্মকর্তা ও নাবিকদের বাসস্থান, অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস এবং প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।’
পটুয়াখালী অঞ্চলের নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেজ, ডিসিজি বেজ অগ্রযাত্রার মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।