ঈদ মানে খুশি।ঈদ মানে আনন্দ।ঈদ হল পাপ মুক্তির আনন্দ। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মনের কালিমা দূর করে বুকে বুক মেলানো।সাম্য ভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দ্য সম্প্রীতির বন্ধন।ঈদ আরবী শব্দ যা মূল আওদ থেকে এসেছে।এর শাব্দিক অর্থ হল ঘুরে ঘুরে আসা। প্রচলিত অর্থে ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানদের দুটি ঈদের মধ্যে একটা হচ্ছে রোজার ঈদ বা ঈদুল ফিতর ‌‌‌‌‌।ঈদের দিন সারা বিশ্বে মুসলমানরা নতুন জামা কাপড় পড়ে, ঘরে ঘরে নানা ধরনের খাবারের আয় করা হয়। ঈদের দিন দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে কুশল বিনিময় করে । সমাজের ধনী ও সক্ষম ব্যাক্তিরা নির্দিষ্ট হারে গরীবদের ফিতরা বা শর্তহীন অনুদান বিতরন করে থাকে যা ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ধনীদের জন্য বাধ্যতামূলক। সর্বাধিক মহিমান্বিত ও সওয়াব পূর্ণ পবিত্র রমজান মাসের পরেই সাওয়ালের আগমন।সাওয়ালের বাঁকা চাঁদ বয়ে আনে মুসলমানদের আনন্দ উৎসব ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সাওয়ালের প্রথম দিনে ইসলামী শরীয়তে মুসলমানদের জন্য যে উৎসব নির্ধারণ করা হয়েছে তাই ঈদুল ফিতর। রোজাদার মুসলমানরা মাসব্যাপী রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর হুকুমে ঈদ বা আনন্দ উপভোগ করে থাকে।
      ইতিহাস মতে ১২০৪ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে আসার বেশ আগে থেকেই ঈদ উৎসবের প্রচলন হয়েছে। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী জাহেলী যুগ থেকে মদিনাবাসী শরতের পূর্ণিমায়  ‘ নওরোজ’ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় ‘ মেহেরজান’ নামে দুটি উৎসব পালন করতো যেটা ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন পবিত্র মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় যাচ্ছিলেন তখন তখন তাদেরকে বৎসরে দুদিন আমোদ প্রমোদ ও খেলাধুলা করতে দেখে তাদের কে জিজ্ঞাসা করলেন ,এ দুদিন কিসের? সাহাবাগণ জবাবে বললেন জাহেলী যুগে এই দুদিন খেলাধুলা ও আনন্দ উল্লাস করতাম ।তখন রাসুলের পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমালেন  , আল্লাহ তায়ালা উক্ত দিন দুটির পরিবর্তে তা অপেক্ষা উত্তম দুটি দিন তোমাদের খুশি প্রকাশের জন্য দিয়েছেন।এর একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং আরেকটি হচ্ছে ঈদুল আজহা।তখন থেকেই ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী দুটি ঈদ পালিত হয়ে আসছে।
    ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য অপরিসীম।এ ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ র বাণী প্রণিধানযোগ্য। তিনি এরশাদ করেন….. ” যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যারা রোজা পালন করেছেন তাদের সম্পর্কে ফিরিশতাদের নিকট গৌরব করে বলেন , হে আমার ফিরিশতাগণ তোমরা বলতো ! যে শ্রমিক তার কাজ পুরোপুরি সম্পাদন করে তার প্রাপ্য কি হওয়া উচিত? উত্তরে ফিরিশতাগণ বললেন ,হে মাবুদ! পুরোপুরি পারিশ্রমিক ই প্রাপ্য।ফিরিশতাগণ, আমার বান্দা বান্দিগণ তাদের প্রতি নির্দেশিত ফরজ আদায় করেছেন। এমনকি দোয়া করতে করতে ঈদের নামাজের জন্য বের হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেব ।এর পর নিজ বান্দাগণকে লক্ষ্য করে আল্লাহ পাক ঘোষণা দেন; তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের কে ক্ষমা করে দিলাম, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ,আর তারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করে।” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের দিন আল্লাহর ফিরিশতাগণ রাস্তায় নেমে আসেন এবং গলিতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন ……” মুসলমান গণ তোমরা আল্লাহর দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তিনি তোমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইবাদত কবুল করে অসংখ্য পূণ্য  দান করে থাকেন।
     ঈদ শুধু আনন্দ নয়, ইবাদত বটে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু উমামা (রা) বলেন ” যে ব্যক্তি ঈদের রাতে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের নিয়তে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে তার অন্তর কিয়ামতের বিভীষিকা হতে মুক্ত থাকবে” । মুয়াজ বিন জাবাল (রা) এ বর্ণিত আছে” যে ব্যক্তি পাঁচটি রজনী জাগ্রত থেকে ইবাদত করে তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব হয়ে যায়। রজনী গুলো হলো …. জ্বিলহজ মাসের অষ্টম,নবম ও দশম তারিখের রাত , ঈদুল ফিতরের রাত এবং শবে বরাতের রাত।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে