দেশীয় ই-কমার্সে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে চায় ইভ্যালি। সব বাধা পেরিয়ে এবং গ্রাহকের আস্থা নিয়ে ই-কমার্সে এক নম্বর অবস্থান ধরে রাখতে চান বলে জানিয়েছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল। 

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে মোহাম্মদ রাসেল অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, একটি ই-কমার্সের লক্ষ্য হলো প্রচুর ক্রেতা। এটা এমনি এমনি হয় না। এজন্য অ্যাকশন প্ল্যান থাকতে হয়। আমরা তা হাতে নিয়ে আমরা প্রচুর ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাবেশ ঘটিয়ে এক নম্বর অবস্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এই অবস্থান ধরে রাখতে চাই।

মোহাম্মদ রাসেল জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইভ্যালি ২১ লাখ পণ্য বিক্রি করেছে, যার আর্থিক মূল্যমান ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ৫ জন কর্মী নিয়ে ইভ্যালির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা ৭ শতাধিক। তার দাবি, ইভ্যালির ৩৭ লাখ গ্রাহক নিয়ে বর্তমানে দেশের ই-কমার্স খাতে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে। তিনি আরও জানান, ইভ্যালি বর্তমানে ৪ হাজার কোটি টাকার কোম্পানি। শিগগিরই বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে বিশাল বিনিয়োগ ইভ্যালিতে যুক্ত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সম্প্রতি ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমরা সব ধরনের পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানাই। আমাদের আশা কোনও ধরনের অভিযোগ প্রমাণ হবে না। ফলে আমরা দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে আসবো। আমরা আশা করছি ৩০ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগেই ইভ্যালির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হবে। ফলে আমরা সেই অবধি অপেক্ষা করবো।

মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ হয়তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছি। ব্যাংক হিসাব বন্ধ করার ৫ দিনের মধ্যে সব কাগজপত্র আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে ইভ্যালি প্রধান বলেন, আমরা মনে করি না কারও প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। আমাদের ক্যাশব্যাক অফার, প্রবৃদ্ধি, শীর্ষ অবস্থান নিয়ে কারও মনে হয়তো কোনও প্রশ্ন ছিল। সেখান থেকেই এ ঘটনার উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। আশা করি এই বিষয়টির একটা চমৎকার সুরাহা হবে।

মোটরবাইক ডেলিভারিতে দেরির বিষয়ে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, গত ১২ মাসে বাইক ডেলিভারিতে আমাদের গড় সময় লেগেছে ২৫ দিন। দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পরে বিশেষ করে এপ্রিল মাসের পর থেকে সরবরাহ ঘাটতির কারণে মোটর বাইক ডেলিভারিতে বেশি সময় লাগছে। এছাড়া অনেক সময় মোটর বাইক উৎপাদকরা আমাদের সময় মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। হয়তো আমরা বিশাল সংখ্যার পণ্যের অর্ডার একসঙ্গে দিয়ে থাকি, এটাও একটা কারণ হতে পারে।

অন্যান্য পণ্য ডেলিভারিতে দেরির বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, পণ্য সরবরাহে আমাদের ডেটলাইন ৭-১০ দিন। যারা অভিযোগ করেন ৯০ দিনেও পণ্য পাননি তাদের সংখ্যা আসলে খুব বেশি নয়। হয়তো সিঙ্গেল কেউ পণ্য পেলেন না সময় মতো। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে গিয়ে অভিযোগ পোস্ট করেন। ফলে সেটা সংখ্যায় অনেক মনে হয়। এরকম সিঙ্গেল ঘটনা এক এক করে জমতে জমতে বেশি হয়ে যায়। তবে পণ্য ডেলিভারিতে দেরির জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

বিশ্বের বড় বড় ই-কমার্সেও অভিযোগ সেল আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদেরও অভিযোগ বক্সে অভিযোগ জমা হয়। সমাধানও দেয় তারা। ইভ্যালির অভিযোগ নিষ্পত্তির টিমে বর্তমানে ৭০ জন কাজ করছেন বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই স্বপ্নের মর্ম আমরা এখন পুরোপুরি বুঝতে পারছি। পৃথিবীর যে সকল দেশ উন্নত, তাদের লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারি যে, প্রযুক্তি তাদের উন্নয়নে কতটা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। অর্থনীতির একটি বড় চাকা হলো বাণিজ্য। আজ আমেরিকা, চায়না এবং ভারত সহ বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যের অন্যতম শাখা হলো ইকমার্স। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে ইকমার্স এ। এই ইকমার্স কি আসলে একটি ইনোভেশন বিজনেস মডেল। আমাদের ইকমার্স এ ও বিনিয়োগ আসার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ কারিরা মার্কেট রেডিনেস এর উপর নির্ভর করেই প্রধানত আসে। এই মার্কেট রেডি করতে যেয়ে বিজনেস মডেলে কিছু পরিবর্তন আনাতে হয়তো সাময়িকভাবে এটার কেউ কেউ ভূল ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন । এই ব্যাখ্যা শুধু আমাদের একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় । আপনাদের সহযোগিতা এখানে একান্ত প্রয়োজন।

আমি আপনাদের বিনীত অনুরোধ করছি এই ইভ্যালির জম্নের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার সরাসরি সমন্বয়ের মাধ্যমে ভোক্তার ও বিক্রেতার উভয়কে সুবিধা দেওয়া। অতএব তাদের বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে আপনাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় একান্ত কাম্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে