Dhaka ০৮:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’: সিআইএ প্রধান

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
  • 24

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাতে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিআইএর পরিচালক জন র‌্যাটক্লিফ। বিবিসি জানায়, তার এই বক্তব্য একটি ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে খণ্ডন করে, যেখানে হামলার প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম দেখানো হয়েছিল—যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

একইসঙ্গে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডও র‌্যাটক্লিফের বক্তব্যের সমর্থন করে বলেন, ‘ইরান যদি পুনরায় তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম গড়তে চায়, তবে নাতাঞ্জ, ফোরদো এবং ইস্পাহানের স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করতে হবে—যাতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’

এর আগে পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এক ফাঁস হওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছিল, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান উপাদানগুলো এখনো অক্ষত আছে এবং হামলার ফলে তাদের কার্যক্রম সর্বোচ্চ কয়েক মাস পিছিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ওই মূল্যায়নটি অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এবং পরবর্তীতে তা বদলাতেও পারে।

এদিকে হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘এই হামলা ছিল সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক—ইরানের উচ্চাভিলাষকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ ট্রাম্প জানান, আগামী আলোচনায় ইরানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। যদিও ইরান এখনও এ ধরনের আলোচনার কথা স্বীকার করেনি।

এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ হচ্ছে।’

স্যাটেলাইট চিত্রে ফোরদোর প্রবেশপথে ছয়টি গর্ত এবং ইস্পাহানের কিছু এলাকায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেলেও ভেতরের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোর প্রকৃত ক্ষতি এখনো নিশ্চিত নয়।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেন, ‘হামলার আগেই হয়তো ইরান ইউরেনিয়ামের বড় অংশ সরিয়ে নিয়েছিল।’

তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে, এটা সত্যি।’ তিনি আরও বিস্তারিত দেননি।

এদিকে ইসরায়েলের পারমাণবিক শক্তি কমিশন দাবি করেছে, ফোরদোতে হামলায় ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে’। তাদের মতে, এসব ক্ষতি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জনে ‘বহু বছর পিছিয়ে দিয়েছে’।

তবে ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন ইরানি সংসদের উপদেষ্টা মেহেদী মোহাম্মাদি। তিনি বলেন, ‘ফোরদোতে কোনো অপূরণীয় ক্ষতি হয়নি।’

ইরান বারবার দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও জানিয়েছিল, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্রিয় নয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’: সিআইএ প্রধান

Update Time : ০৭:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাতে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিআইএর পরিচালক জন র‌্যাটক্লিফ। বিবিসি জানায়, তার এই বক্তব্য একটি ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে খণ্ডন করে, যেখানে হামলার প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম দেখানো হয়েছিল—যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

একইসঙ্গে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডও র‌্যাটক্লিফের বক্তব্যের সমর্থন করে বলেন, ‘ইরান যদি পুনরায় তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম গড়তে চায়, তবে নাতাঞ্জ, ফোরদো এবং ইস্পাহানের স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করতে হবে—যাতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’

এর আগে পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এক ফাঁস হওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছিল, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান উপাদানগুলো এখনো অক্ষত আছে এবং হামলার ফলে তাদের কার্যক্রম সর্বোচ্চ কয়েক মাস পিছিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ওই মূল্যায়নটি অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এবং পরবর্তীতে তা বদলাতেও পারে।

এদিকে হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘এই হামলা ছিল সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক—ইরানের উচ্চাভিলাষকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ ট্রাম্প জানান, আগামী আলোচনায় ইরানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। যদিও ইরান এখনও এ ধরনের আলোচনার কথা স্বীকার করেনি।

এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ হচ্ছে।’

স্যাটেলাইট চিত্রে ফোরদোর প্রবেশপথে ছয়টি গর্ত এবং ইস্পাহানের কিছু এলাকায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেলেও ভেতরের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোর প্রকৃত ক্ষতি এখনো নিশ্চিত নয়।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেন, ‘হামলার আগেই হয়তো ইরান ইউরেনিয়ামের বড় অংশ সরিয়ে নিয়েছিল।’

তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে, এটা সত্যি।’ তিনি আরও বিস্তারিত দেননি।

এদিকে ইসরায়েলের পারমাণবিক শক্তি কমিশন দাবি করেছে, ফোরদোতে হামলায় ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে’। তাদের মতে, এসব ক্ষতি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জনে ‘বহু বছর পিছিয়ে দিয়েছে’।

তবে ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন ইরানি সংসদের উপদেষ্টা মেহেদী মোহাম্মাদি। তিনি বলেন, ‘ফোরদোতে কোনো অপূরণীয় ক্ষতি হয়নি।’

ইরান বারবার দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও জানিয়েছিল, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্রিয় নয়।