ইদের চাঁদ
মহীতোষ গায়েন
কারখানার গেটে তালা,তার উপর লকডাউন…
গেল বছর থেকে কাশেম ভাইয়ের কাজে যাওয়া বন্ধ…
বুড়ো বটগাছতলায় বসে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে…
রোজার উপবাস তাই বাঁচোয়া।
ছোট ছেলেটার ধুম জ্বর,বিকেলে আমিনা
মাখন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল ওষুধ নিতে,
মেয়েটা স্কুলে পড়ে,এবার মাধ্যমিক দেবে-
করোনা সংকটে নতুন জামা কেনা হয়নি তার।
পাখিরা বাসায় ফেরে,কাশেমভাই নামাজ পড়ে…
সাঁঝের দাওয়ায় বিরস হাওয়া বয়ে যায়,
বউ আমিনা মানিকপীরের দরগায় গিয়েছিল
ছেঁড়া শাড়ি পরে,বুকে ছিল তার অগাধ স্বপ্ন।
প্রত্যাবর্তনের হাওয়া লেগেছে;মেয়ে এসে
আব্বাকে বলে-“জানো আব্বা,বাদল কাকু
আমাকে আই.সি ডি এস-এর কাজ দেবে বলেছে…’
রাখতো ছাই; পাতা পড়ার শব্দ কাশেমের বুকে বাজে।
সন্ধ্যে থেকে রেজিনা বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদে
পাড়ার ক্লাবে জটলা,এই অতিমারিতেও সর্বনাশের
মধ্যে পড়তে পড়তে বেচেঁ গেছে রেজিনা,এটাই কি
প্রত্যাবর্তন ? ছিঃ বাদল কাকু ছিঃ!
আকাশে ইদের চাঁদ হাসছে-আজ খুশির ইদ,
আমিনার সংসারে উনুন জ্বলেনি,উপবাসী রাত
কেটে ভোর হয়,দুপুর গড়িয়ে কালবেলা,পিওনের
হাতের খাম খুলে কাশেমের মনে যেন ফাগুন হাওয়া।
সরকারের কল্যাণমন্রক থেকে চিঠি;স্বনিযুক্তি প্রকল্পে
কাশেমের নামে দেড় লক্ষ টাকা পাস;কাশেম কর্জ করে
হাটে যায়,আনাজ কেনে,আমিনার জন্য সবুজ পেড়ে
শাড়ি,মেয়ের ফ্রক,নাসিমের জন্য নতুন জামা আনে।
সমূহ সংকটে গোটা পাড়ায় আসে সম্প্রীতির হাওয়া..
রাত বাড়ে,সোহাগি ইদের চাঁদ খড়ের চালের
ফাঁক দিয়ে ঢুকে খুশির আলোক-ধারায়
সিক্ত করে কাশেম-আমিনার সাধের সংসারকে।
————
(ইদ বানানটি ঈদ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়)