স্পোর্টস ডেস্ক:

সিরিজের প্রথম টেস্টের একাদশে তাকে রাখেনি ইংল্যান্ড। স্টুয়ার্ট ব্রড নিজের ক্ষোভ ও হতাশা উগড়ে দিয়েছিলেন প্রকাশ্যেই। পরের ম্যাচ থেকে সুযোগ পেয়ে জ্বলে উঠেছেন ৩৪ বছর বয়সী পেসার। তার ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। দ্বিতীয় টেস্টে ৬ উইকেট নিয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন দলের সমতা ফেরানো জয়ে। চলতি টেস্ট তো পুরোই ব্রডময়।

এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৪৫ বলে ৬২ রানের ঝড়ো এক ইনিংসও খেলেছিলেন দশ নম্বরে নেমে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আগের দিন সকালেও রাজত্ব ছিল তার। ২২ বলে ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেজ ছেটে দিয়েছিলেন ব্রড। তাতে এবার ইনিংসে ৬ উইকেটও হয়ে যায় ইংলিশ পেসারের। আর জেসন হোল্ডারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে অলআউট ১৯৭ রানে। ১৭২ রানের লিড পায় ইংল্যান্ড।
ফাইনাল হয়ে ওঠা শেষ টেস্টের শেষ বিকেলটাও রাঙালেন সেই ব্রডই। ম্যাচ জিততে করতে হবে ৩৯৯ রান। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেই আবার এই গতিতারকার তোপের মুখে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা। নিজের প্রথম ওভারে ওপেনার জন ক্যাম্পবেলকে স্লিপে অধিনায়ক রুটের ক্যাচ বানানোর পর পরের ওভারের প্রথম বলেই তুলে নিলেন নৈশপ্রহরী হিসেবে নামা কেমার রোচকে। উইকেটটি টেস্ট ক্রিকেটে ব্রডের ৪৯৯। ক্যারিবিয়ানরা আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ ওভারে ১০ রান তুলে দিন শেষ করেছে সেই সাথে প্রথম বোলার হিসেবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে উইকেটের হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেললেন ব্রড। ম্যানচেস্টার টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে এই আসরে তার উইকেট ৫১টি। আরও বড় একটি মাইলফলক থেকে মাত্র এক কদম দূরে আছেন ইংলিশ পেসার। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫০০ উইকেট ছুঁতে তার প্রয়োজন কেবল আর ১ উইকেট।
গতকালই ইতিহাসের সপ্তম ও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এই মাইলকলক ছুঁতে পেরেছেন কি না তা জানতে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে ম্যানচেস্টারের আকাশের দিকে। আবহাওয়া অফিস যে বলছে ভেসে যেতে পারে পুরো চতুর্থ দিনের খেলাই। রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬টা) শুরু হবার সময় দু ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও মাঠে নামা যায়নি বেরসিক বৃষ্টির কারণে। আগের দিনের দুই উইকেটে ১০ রান নিয়ে দিন শুরুর অপেক্ষায় উইন্ডিজ।
তবে আজ শেষ দিনে আবার বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। সেটিকে মাথায় রেখেই তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে ব্যাট হাতে আগুন ঝরিয়েছেন জো রুট ও ররি বার্নস। সময় কম, কিন্তু উইজডেন ট্রফি ফিরে পেতে জয় ছাড়া উপায় নেই। কম সময়ে বেশি রান তুলে বড় লক্ষ্য দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও অলআউট করার মতো সময় তো বের করতে হবে! দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ১৭.১ ওভারেই ১১২ রান যোগ করলেন দুজন। ৯০ রান করে বার্নস আউট হতেই ২২৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করলেন ৫৬ বলে ৬৮ রান করা রুট। অথচ ডম সিবলি-বার্নসের উদ্বোধনী জুটি ১১৪ রান করতে লাগিয়ে ফেলেছিল ৪০.৫ ওভার। যা দেখে মাইকেল ভনের মতো সাবেকরা সমালোচনাও করেছিলেন। উদ্বোধনী জুটিটা অবশ্য ভাঙতে পারত ৩৮ রানেই। হয়নি মুখে বল লেগে আহত হয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়া উইকেটকিপার শেন ডওরিচের বদলি হিসেবে নামা জশুয়া ডি সিলভার জন্য। রোস্টন চেজের বলে বার্নসকে স্টাম্পিং করার সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন ২২ বছর বয়সী উইকেটকিপার। বার্নসের রান তখন ১২।
টেস্ট ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত ৫০০ উইকেটের অভিজাত ক্লাবে জায়গা করে নিতে পেরেছেন মোটে ৬ জন বোলার। টেস্টের শীর্ষ তিন উইকেট শিকারিই স্পিনার, মুত্তিয়া মুরালিধরন (৮০০), শেন ওয়ার্ন (৭০৮) ও অনিল কুম্বলে (৬১৯)। এরপর তিন পেসার জেমস অ্যান্ডারসন (৫৮৯), গ্লেন ম্যাকগ্রা (৫৬৩) ও কোর্টনি ওয়ালশ (৫১৯)। ব্রড মাইলফলকে পা রাখলে পেসারদের পাল্লা হবে ভারী।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চলতি ম্যাচসহ ১১ ম্যাচে ৫১ উইকেট ব্রডের। ১০ টেস্টে ৪৯ উইকেট নিয়ে ঠিক পেছনেই অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স, ১০ টেস্টে ৪৭ উইকেট অফ স্পিনার ন্যাথান লায়নের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে