আর্থিক খাতে দুর্নীতি, লুটপাট ও অপশাসনের কারণে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার এই খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বাজেট উপস্থাপনকালে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বিগত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসনের মাধ্যমে এই খাতকে বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে। ব্যাপক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে এবং সেগুলো বারবার পুনঃতফসিল করে প্রকৃত অবস্থা আড়াল করা হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং চালু করায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালের জুনে যেখানে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২০ শতাংশে—অর্থাৎ মাত্র ছয় মাসে খেলাপি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর নতুন সরকার আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই সংস্কারের অংশ হিসেবে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ খসড়া করা হয়েছে, যা মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট ও সম্ভাব্য দেউলিয়াত্ব মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
এছাড়া তিনটি পৃথক টাস্কফোর্স গঠনের কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা, যার কাজ হবে—
১. ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত পর্যালোচনা,
২. বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে নীতি ও প্রবিধান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা,
৩. দেশি-বিদেশি চুরি বা পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই বাজেট দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পেলো।