রাজশাহী প্রতিনিধি:

করোনাকালেও থেমে নেই মাদকের ব্যবসা। করোনার ভয়াবহতাকে ভর করে রাজশাহী নগরীর মতিহার থানাধিন চর শ্যামপুর মিজানের মোড় ডাঁশমারী,মহব্বতের ঘাট,জাহাজঘাট,এলাকার চিহ্নিত মাদকের ডিলার শাহিন (৫০) পিতাঃ মোঃ পাজ্জাতোন পুলিশের নাকের ডগায় প্রকাশে চালিয়ে যাচ্ছেন তার মাদকের সম্রাজ্য।

মতিহার থানা এলাকায় মাদকের কারবার বেড়েই চলেছে। পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্যের সাথে চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বিশেষ সখ্যতা থাকায় মাদকের কারবার দিনে দিনে বাড়ছে-এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তারপরেও এ অবস্থার পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

রাজশাহী মহানগরীর মধ্যে মতিহার থানা অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাতেই হাত বাড়ালেই মেলে মাদক। সেই কয়েক যুগ ধরে এ অঞ্চলটি মাদকের আঁতুড়ঘর বা স্বর্গরাজ্য। থানায় নতুন ওসি যোগদান করার পর কিছুদিন কারবার চলে গোপনে। তারপর অদৃশ্য কারনে প্রকাশ্যেই চলে এই কারবার।

এ অঞ্চলে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেট ও ফেনসিডিলে কোন কমতি নাই। হাত বাড়ালেই মেলে এসব মাদক। এছাড়া মতিহার থানার নাকের ডগায় পলি, রোহিসহ কয়েকজন প্রকাশ্যে দিন-রাত বিক্রি করছে গাঁজা ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক। তারপরও তারা নিরাপদ। ওই এলাকার স্থানীয়দের দাবি, থানায় তথ্য দিলেও পুলিশ ধরেনা। আর যদি আসে তার আগেই মাদক কারবারীদের পুলিশ গোপনে জানিয়ে দেয়।

বর্তমানে মতিহার থানা অঞ্চলে এক বোতল ফেনসিডিলের দাম দুই হাজার টাকা। আর এই টাকা যোগাড় করতে দিন রাত এক করে ফেলছে মাদক সেবিরা। কম খরচে নেশা পুশিয়ে নিতে অনেকে সেবন করছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও টাফএ্যানটাডল ট্যাবলেট। মাদকের টাকা যোগাড় করতে চুরি ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

সম্প্রতি কাজলা অক্ট্রয় মোড় এলাকায় রুয়েট ও রাবির দুই শিক্ষার্থীর গলায় ছুরি ধরে দামি মোবাইল, নগদ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ করেন ওই দুই শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রাবির শিক্ষার্থী চোর সনাক্ত করাসহ বাড়িও চেনে। কিন্তু আজ আবদি কোন ছিনতাইকারী আটক বা মালামাল উদ্ধার হয়নি। এ এলাকার মোড়ে দোকান ঘরে ও একাধিক বাড়িতে চুরি ঘটনা ঘটলেও আটক হচ্ছেনা চোর। উদ্ধার হচ্ছে না চুরির মালামাল। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা নিয়েই বসবাস করছেন এখানকার বাসিন্দারা।

মতিহার অঞ্চলে পুলিশের উল্লেখ যোগ্য কোন অভিযান নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে, অভিযানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে মাঝে মধ্যে মাদক সেবিদের ধরে ব্যবসায়ী বানিয়ে ১০/১৫ পিস ইয়াবা, ৫/৭ গ্রাম হেরোইন, ১০০/২০০ গ্রাম গাঁজা দিয়ে আদালতে চালান দেয়া হচ্ছে। এই রকম উদাহরনের শেষ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একাধিক মাদক মামলার আসামী ও মূল মাদক কারবারীরা প্রকাশ্যেই বুক ফুলিয়ে বিক্রি করছে সকল প্রকার মাদক।

তাদের সাথে মতিহার থানার কয়েকজন অসাধু এসআই ও এএসআই-এর সখ্যতা রয়েছে। এবং জাহাজ ঘাট মোড়ে নামেমাত্র ঔষুধের ফার্মেসী খোলে নাম যশ কামিয়েছে ডাক্তার।সে দোকান আবার সারা রাত খোলা রেখে কখনো সাজে পুলিশের সোর্স,আবার কখনো মাদক ব্যবসায়ী,কখনো ডাঃ সাহেব,কখনো,মাদক কারবারীর মাসহারা তুলে অসাধু কিছু পুলিশ অফিসারদের দেয়।আবার পুলিশ কখনো কোন মাদক ধরলে তার মাধ্যমে আসল গুলো বিক্রি করায়।আর সেই ডাঃ নকল মাদক তৈরী করে পুলিশকে দেয়,সেটা দিয়ে সাধারণ জনগণকে ধরিয়ে দিয়ে টাকা চায় না দিতে পারলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। উল্লেখ্য থাকে যে,মতিহার থানায় নতুন কিংবা পুরাতন পুলিশ যে পোস্টিং আসে তাদেরকে এই ঔষুধের ফার্মেসির মালিক ডাঃসাহেবের সাথে (অরিয়েন্টেশন) সখ্যতা রাখতে হয়।কারন এই এলাকায় তাকে ছাড়া কেহ ব্যবসা করতে পারবেনা, পুলিশের সাথে সখ্যতা করিয়ে দেওয়া একমাত্র দায়িত্ব তার।এই সকল চিহ্নিত মাদক কারবারীদের পুলিশ ধরেনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মতিহার থানা এলাকার মহব্বতের ঘাট, সাতবাড়িয়া, ডাসমারী, চর-শ্যামপুর মিজানের মোড় এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে মাসোহারা আদায়ের ঘটনা কখনই থেমে নেই।

মতিহার থানা এলাকার উল্লেখযোগ্য মাদক কারবারীদের মধ্যে রয়েছে- ডাসমারীর মৃত মুক্তারের ছেলে পালা। তার সহযোগী মাদক কারবারী সাবদুল, কামরুল, সোহেল (জানু), সুমন, রশিদ, সাকিব, শাহজামাল, ডাসমারী স্কুলের পেছনে জাকা ও মিলন। নাজিমের ছেলে মাদক কারবারী জামাল। তার সহযোগীরা হলো- জাকা, জামিল, সাক্কার, রফিক, ছাদেক ও মাসুম। একই এলাকার মালেক, তার স্ত্রী হানুফা, তার ছেলে হাবিল। তেল রফিক ও তার স্ত্রী। ডাসামরী গোরস্থান মোড়ের চান্দু বাবু।

জাহাজ ঘাট এলাকার মৃত ইসাহাকের ছেলে বকুল। মহব্বতের ঘাটের মাদক কারবারী জিল্লুর ছেলে পিন্টু ও টিটু, জাহাঙ্গীর, সজিব, ছাইদুর, রিয়াজ।

সুরাপানের মোড় এলাকার অলি, জনি, সুমন। এদের মধ্যে অন্যতম অলি ইয়াবা, হেরোইনের ডিলার হিসেবে কাজ করলেও ধরা ছোয়ার বাইরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষেত্র বিশেষে অলি নিজকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও থাকে। তার সহযোগীরা হলো, বকুল, জনি, সুমন, প্রিয়া।

চরশ্যামপুর এলাকায় মাদক কারবারীদের নেতা মনিরুল। কিন্তু সে নিজেকে কখনো কখনো এমপি এবং মেয়রের লোক বলেও পরিচয় দিয়ে থাকে। সম্প্রতি মনিরুলের ভাই আসলাম ২০ বোতল ফেনসিডিলসহ ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। এছাড়া বোন চাম্পা ওই এলাকার বড় মাদক কারবারীদের মধ্যে একজন। মাদক মামলা রয়েছে তার দুই ভাসতির নামেও।

মাদক কারবারীদের মধ্যে আরো রয়েছে- ওই এলাকার হামিদের ছেলে ইয়াসিন, নেদার মন্ডলের ছেলে রবিউল, আকতার, মিঠু, কামরুল, হালিম, সুজন, আকবোরের ছেলে সুমন তার স্ত্রী রঙ্গিলা,(স্থানীয়রা বলছে বর্তমানে রঙ্গিলা হেরোইনের (ডিলার) অনেক বড় ব্যবসায়ী। সরাসরি গোদাগাড়ি থেকে পার্টি এসে পাইকারী হেরোইন দিয়ে যায় তাকে। ৭/৮জন কর্মচারী দিয়ে খদ্দেরের কাছে হেরোইন পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করে সে। প্রকাশ্যে বলে পুলিশ আমার পকেটে। এছাড়াও কাদো, শাহীন, রুপচাঁন, আলিমসহ শতাধিক খুচরা ও পাইকারী মাদক কারবারী রয়েছে এ এলাকায়।

এত অপরাধ যখন মতিহারে তাহলে জুয়ার ব্যবসা থেমে থাকবে কেন ? যুক্ত হয়েছে জুয়ার আসর। আসরটি চলে বটতলা থেকে ফকির মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত কোন এক স্থানে। যাহা পুলিশ অবগত। কারা কিভাবে জুয়ার আসর পরিচালনা করছে। জুয়ার ঘরে ঢুকতে লাগে মাথা পিছু ১০০ টাকা। বোর্ড পরিচালনাকারীর ভাষ্য অনুযায়ী মিট দিয়ে কারবার চলছে।

জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, মাদকের উপর জিরো টলারেন্স ঘোষনা আছে। মতিহারের বর্তমান অবস্থা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান মূখপাত্র।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে