আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাত্র আট মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করেছে অন্তত ‘২৬টি নতুন রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম’। এর মধ্যে রয়েছে ২২টি রাজনৈতিক দল ও ৪টি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রবণতা শুধু নতুন নয় বরং পুরনো অভ্যাসেরই ধারাবাহিকতা।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরই যেন রাজনীতির মঞ্চে হঠাৎ করেই ‘দলবৃক্ষের’ পাতা গজাতে শুরু করে। একেকটির নাম যেন আরেকটির চেয়েও অভিনব- ‘নিউক্লিয়াস পার্টি, জাগ্রত পার্টি, আমজনতার দল, আ-আম জনতা পার্টি, জনতার বাংলাদেশ পার্টি’ এমন অন্তত দুই ডজন দলের খোঁজ মিলেছে গণমাধ্যমে।
ইলিয়াস কাঞ্চনের নতুন দল: বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঘোষণা এলো আরও একটি নতুন দলের ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’। এর উদ্যোক্তা চলচ্চিত্র অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিচিত মুখ ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলছেন, নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগ হবে জনমানুষের কথা বলার মঞ্চ।
কারা, কেন আসছে রাজনীতিতে: ডেসটিনি কেলেঙ্কারির আসামি মোহাম্মদ রফিকুল আমীন কারাভোগ শেষে গড়েছেন নতুন দল ‘আ-আম জনতা পার্টি’। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লেবেল না থাকায় আমাকে ছাড়া হয়নি। দল গড়ে প্রশাসনের কাছে নিজের কথা তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনেকের ক্ষেত্রেই দল গড়ার পেছনে ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুরক্ষা’ বড় চালিকাশক্তি।
মাসে গড়ে তিনটি দল: ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল এই আট মাসে গড়ে প্রতি মাসে তিনটি করে নতুন দল আত্মপ্রকাশ করেছে।
কিছু আলোচিত দলের নাম- ন্যাশনাল কনজারভেটিভ পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), সমতা পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), ভাসানী জনশক্তি পার্টি, গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে তৈরি হচ্ছে ছাত্র সংগঠনও, যেমন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনের মৌসুম এলেই এমন দল গজায় ব্যাঙের ছাতার মতো। এরশাদের আমলেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল।’ তিনি জানান, এক সময় ১২০টির বেশি দল গঠন হয়েছিল, যার মধ্যে ৯০টিরও বেশি ছিল শুধুই সংখ্যার খাতায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমদ বলেন, ‘রাজনীতি এখন অনেকের কাছে দ্রুত প্রভাব বিস্তার ও অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার। এ কারণেই এইসব দলে আদর্শের বদলে থাকে রাজনৈতিক অর্থনীতির ছায়া।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকর বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, এমন অনেক দল আসে, আবার মিলিয়ে যায় সময়ের সাথে। টিকতে পারে কেবল তারাই, যারা জনভিত্তিক রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। সূত্র: বিবিসি বাংলা