আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

আজ ১৫ আগস্ট, ভারতের ৭৫তম মহান স্বাধীনতা দিবস। দিবসটিকে সরকারি-বেসরকারি নানাভাবে পালন করছে দেশটি।

এ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছেছে ভারতে।

 ১৫ আগস্ট ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই একদিনেই ভারত স্বাধীন হয়নি। এর পেছনে রয়েছে লম্বা ইতিহাস।

১৯২৯ সালে জওহরলাল নেহারু কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিয়েছিলেন। তার আহ্বানে ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণার কথা ছিল। ১৯৩০ সাল থেকে ২৬ জানুয়ারিকেই কংগ্রেস স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করত, যতদিন না ভারত স্বাধীনতা পায়।

তাহলে ১৫ আগস্ট কীভাবে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হলো? লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আদেশপত্র দিয়েছিলেন তাতে বলা ছিল ১৯৪৮-এর ৩০ জুনের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে সি রাজাগোপালাচারী বলেছিলেন, ইংরেজরা যদি ১৯৪৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করত, তাহলে হস্তান্তর করার মতো কোনো ক্ষমতাই তাদের হাতে থাকত না। ফলে মাউন্টব্যাটেন সে কাজ এগিয়ে এনেছিলেন ১৯৪৭ সালের আগস্টে।

সে সময়ে মাউন্টব্যাটেন দাবি করেছিলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি এগিয়ে আনার মধ্য দিয়ে তিনি দাঙ্গা ও রক্তপাত এড়িয়ে যেতে পেরেছেন। তার দাবি ভুল প্রমাণিত হওয়ার পর আত্মপক্ষ সমর্থনে মাউন্টব্যাটেন লিখেছিলেন, ‘যেখানেই সাম্রাজ্যের শাসনের অন্ত হয়েছে, সেখানেই রক্তপাত হয়েছে। এ দাম দিতেই হবে।’

মাউন্টব্যাটেনের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে ভারতের স্বাধীনতা বিল ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সে পেশ করা হয় ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই। দুই সপ্তাহের মধ্যেই তা পাস হয়ে যায়। এর ভিত্তিতে ভারতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয় এবং তৈরি হয় ভারত ও পাকিস্তান। এ দুই রাষ্ট্রকেই ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ গ্রন্থে মাউন্টব্যাটেনকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ‘আমি দিনটি এমনিই বেঁছে নিয়েছিলাম। আমি বদ্ধপরিকর ছিলাম যে আমি দেখাব, আমিই গোটা বিষয়টির নিয়ন্ত্রক। ওরা যখন জিজ্ঞাসা করেছিল যে আমি কোনো দিন নির্দিষ্ট করেছি কিনা। আমি বুঝে গিয়েছিলাম দ্রুত বিষয়টি সেরে ফেলতে হবে। আমি তা নিয়ে ভাবিনি তখনও। আমি ভাবছিলাম আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে কিছু একটা হোক। তারপর আমি বলে দেই ১৫ আগস্ট। কারণ এ দিনটি জাপানের আত্মসমর্পণের দ্বিতীয় বার্ষিকী’।

১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপানের সম্রাট হিরোহিতো একটি রেকর্ডের রেডিও ভাষণ দেন। সেটি জুয়েল ভয়েস ব্রডকাস্ট নামে পরিচিত হয়। সেই রেডিও ভাষণে তিনি মিত্রশক্তির কাছে জাপানের আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করেন। মাউন্টব্যাটেন স্মরণ করতে পেরেছিলেন যে তিনি সে ভাষণ শুনেছিলেন চার্চিলের ঘরে বসে এবং মিত্রশক্তির সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে জাপানের আত্মসমর্পণের নথিতে ১৯৪৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরও করেছিলেন।

কিন্তু পাকিস্তান ১৪ আগস্ট স্বাধীন হলো কীভাবে?

ভারতের স্বাধীনতা বিলে দুই দেশকেই ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা ছিল। পাকিস্তান প্রথমে ১৫ আগস্টকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মেনেছিল। পাকিস্তানের প্রথম ভাষণে জিন্না বলেছিলেন, ‘১৫ আগস্ট স্বাধীন, সার্বভৌম পাকিস্তানের জন্মদিন’।

তবে ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তান ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করতে শুরু করে। তার একটা কারণ হতে পারে করাচিতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। অথবা ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ছিল ২৭তম রমজান যা মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে