Dhaka ০৩:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ শিক্ষার অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যের দিবস- ‘শিক্ষা দিবস’

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৩৩:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ২৬১ Time View

১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন ছিল বাঙ্গালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে এক মাইলফলক। ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সাল, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ শরিফ শিক্ষাকমিশনে পরবর্তীকালে হামদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে সারা দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচী পালন করে। ছাত্রদের সাথে সাধারণ মানুষও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্র জনতা সমাবেশে উপস্থিত হয়। সমাবেশ শেষে মিছিল বের হয়। খবর আসে জগন্নাথ কলেজে গুলি হয়েছে। মিছিল তখন দ্রুত নবাবপুরের দিকে যায়। হাইকোর্টে পুলিশের সাথে সংঘাতে না গিয়ে মিছিল আব্দুল গনি রোড ধরে যেতে থাকে। পুলিশ তখন পিছন থেকে মিছিলে হামলা চালায়। পুলিশের সাথে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ বাধে ঢাকা কোর্টের সামনে। এখানেও পুলিশ ও ইপিআর গুলি চালায়। এতে বাবুল, গোলাম মোস্তফা ও ওয়াজিউল্লাহ–৩ জন শহীদ হন, আহত হন শতাধিক এবং শত শত ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। ঐ দিন শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। টঙ্গিতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিককে। সেই থেকেই ১৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয়ে আসছে ছাত্র সমাজের শিক্ষার অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যের দিবস- ‘শিক্ষা দিবস’। বাংলাদেশ নামক ভুখণ্ডের অভ্যুদয়ের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে শিক্ষার সার্বজনীন অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন। সেই সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ৯ সেপ্টেম্বর ১৪৪ ধারা জারি করে শোভাযাত্রা , পিকেটিং নিষিদ্ধ করলেও ১০ সেপ্টেম্বর ছাত্ররা মিছিল শুরু করলে দশজনকে গ্রেফতার করা হয়। কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ঢাকায় মিছিল করে। পুলিশ আবুল হাসনাত, আব্দুর রহিম আজাদ, আবু হেনা, কাজী জাফর আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, শাহ্‌ মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করে। ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিল না করলে সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতালের ডাক দেয়া হয়। সোহরাওয়ার্দি জাতীয় পরিষদে এই রিপোর্ট বিবেচনার প্রস্তাব দেন। ১৬ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দি ঢাকা আসেন। ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৬ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দেন সরকার শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বিবেচনা করবে। কিন্তু ছাত্ররা তাদের হরতালের কর্মসূচী ঠিক রাখে। ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ সারা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ, লাঠিচার্জ এবং গুলি চলে। ঢাকায় ৫২ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মোট আহতের সংখ্যা ছিল ২৫৩ জন, ১০৫৯ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। দুপুর ১২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সামরিক বাহিনী নামানো হয়। নবাব হাসান আসকারির গাড়ী আক্রান্ত হয়, নিহত হন গোলাম মোস্তফা। ১৮ সেপ্টেম্বর মৌন মিছিল বের করা হয়। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ দিবস পালনের মাধ্যমে ছাত্ররা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে।

সেই দিন পল্টন ময়দানে ছাত্রদের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রদের আন্দোলনের উত্তপ্ত অবস্থায় ৬২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর লাহোরে গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠিত হয় সোহরাওয়ার্দি, শেখ মুজিব, মাওলানা মওদুদি, মাহমুদ আলী, জহিরুউদ্দিনের উদ্যোগে। তারপর শুরু হয় ধারাবাহিক আন্দোলন যা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৬৯ সত্তরের গন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বলতে হয় বাংলাদেশে বর্তমানে কোন শিক্ষানীতি কার্জকর নাই, বহুবিধ ধারায় শিক্ষা চলছে ,শিক্ষা পণ্যে পরিনত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মৌলবাদী ভাব্ধারায় সিলেবাস আক্রান্ত, শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য চলছে, শিক্ষার মান আশংকাজনক ভাবে নীচে নেমে এসেছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্জক্রম নাই বললেই চলে, থিসিস চুরি করে ডিগ্রী নেয়া হচ্ছে —শিক্ষার প্রসার ঘঠালেই হবে না—মান সম্মত শিক্ষা চাই।

সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে ।
তথ্য প্রযুক্তির যুগে নিজস্ব জাতীয় বাস্তবতা মিলিয়ে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। করতে হবে গণমুখী শিক্ষানীতি যেখানে কোন বৈষম্য থাকবে না। তাহলেই বাস্তবায়িত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অন্যথায় নয়।

বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের অভ্যুদয়ের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে শিক্ষার সার্বজনীন অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

আজ শিক্ষার অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যের দিবস- ‘শিক্ষা দিবস’

Update Time : ০৬:৩৩:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন ছিল বাঙ্গালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে এক মাইলফলক। ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সাল, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ শরিফ শিক্ষাকমিশনে পরবর্তীকালে হামদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে সারা দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচী পালন করে। ছাত্রদের সাথে সাধারণ মানুষও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্র জনতা সমাবেশে উপস্থিত হয়। সমাবেশ শেষে মিছিল বের হয়। খবর আসে জগন্নাথ কলেজে গুলি হয়েছে। মিছিল তখন দ্রুত নবাবপুরের দিকে যায়। হাইকোর্টে পুলিশের সাথে সংঘাতে না গিয়ে মিছিল আব্দুল গনি রোড ধরে যেতে থাকে। পুলিশ তখন পিছন থেকে মিছিলে হামলা চালায়। পুলিশের সাথে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ বাধে ঢাকা কোর্টের সামনে। এখানেও পুলিশ ও ইপিআর গুলি চালায়। এতে বাবুল, গোলাম মোস্তফা ও ওয়াজিউল্লাহ–৩ জন শহীদ হন, আহত হন শতাধিক এবং শত শত ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। ঐ দিন শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। টঙ্গিতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিককে। সেই থেকেই ১৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয়ে আসছে ছাত্র সমাজের শিক্ষার অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যের দিবস- ‘শিক্ষা দিবস’। বাংলাদেশ নামক ভুখণ্ডের অভ্যুদয়ের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে শিক্ষার সার্বজনীন অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন। সেই সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ৯ সেপ্টেম্বর ১৪৪ ধারা জারি করে শোভাযাত্রা , পিকেটিং নিষিদ্ধ করলেও ১০ সেপ্টেম্বর ছাত্ররা মিছিল শুরু করলে দশজনকে গ্রেফতার করা হয়। কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ঢাকায় মিছিল করে। পুলিশ আবুল হাসনাত, আব্দুর রহিম আজাদ, আবু হেনা, কাজী জাফর আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, শাহ্‌ মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করে। ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিল না করলে সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতালের ডাক দেয়া হয়। সোহরাওয়ার্দি জাতীয় পরিষদে এই রিপোর্ট বিবেচনার প্রস্তাব দেন। ১৬ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দি ঢাকা আসেন। ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৬ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দেন সরকার শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বিবেচনা করবে। কিন্তু ছাত্ররা তাদের হরতালের কর্মসূচী ঠিক রাখে। ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ সারা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ, লাঠিচার্জ এবং গুলি চলে। ঢাকায় ৫২ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মোট আহতের সংখ্যা ছিল ২৫৩ জন, ১০৫৯ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। দুপুর ১২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সামরিক বাহিনী নামানো হয়। নবাব হাসান আসকারির গাড়ী আক্রান্ত হয়, নিহত হন গোলাম মোস্তফা। ১৮ সেপ্টেম্বর মৌন মিছিল বের করা হয়। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ দিবস পালনের মাধ্যমে ছাত্ররা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে।

সেই দিন পল্টন ময়দানে ছাত্রদের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রদের আন্দোলনের উত্তপ্ত অবস্থায় ৬২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর লাহোরে গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠিত হয় সোহরাওয়ার্দি, শেখ মুজিব, মাওলানা মওদুদি, মাহমুদ আলী, জহিরুউদ্দিনের উদ্যোগে। তারপর শুরু হয় ধারাবাহিক আন্দোলন যা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৬৯ সত্তরের গন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বলতে হয় বাংলাদেশে বর্তমানে কোন শিক্ষানীতি কার্জকর নাই, বহুবিধ ধারায় শিক্ষা চলছে ,শিক্ষা পণ্যে পরিনত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মৌলবাদী ভাব্ধারায় সিলেবাস আক্রান্ত, শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য চলছে, শিক্ষার মান আশংকাজনক ভাবে নীচে নেমে এসেছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্জক্রম নাই বললেই চলে, থিসিস চুরি করে ডিগ্রী নেয়া হচ্ছে —শিক্ষার প্রসার ঘঠালেই হবে না—মান সম্মত শিক্ষা চাই।

সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে ।
তথ্য প্রযুক্তির যুগে নিজস্ব জাতীয় বাস্তবতা মিলিয়ে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। করতে হবে গণমুখী শিক্ষানীতি যেখানে কোন বৈষম্য থাকবে না। তাহলেই বাস্তবায়িত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অন্যথায় নয়।

বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের অভ্যুদয়ের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে শিক্ষার সার্বজনীন অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন।