প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বায়ুমন্ডলীয় ওজোন ক্ষয়কারী মানব সৃষ্ট দ্রব্যগুলোর উৎপাদন ও ব্যবহার রোধ করলেই পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যকে সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
আজ বুধবার বিশ্ব ওজন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দেয়া এক বাণীতে তিনি এজন্য ব্যাপক হারে জনসচেতনতা সৃষ্টি, বনায়ন, বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক পরিবেশ বান্ধব বিকল্প প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের জীবন রক্ষাকারী প্রতিরক্ষা স্তর সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করলেও একটি দীর্ঘ সময় পুরো পৃথিবী একসঙ্গে লক-ডাউন হওয়ায় বায়ুদূষণ কমে প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছিলো এবং পৃথিবী একটি গাঢ় সবুজ গ্রহে পরিণত হয়েছিল, যা নিশ্চিতভাবে ওজোন স্তর পুনর্গঠনে সহায়ক হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও বিশ্ব ওজন দিবস-২০২০ পালিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত এবং এ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ওজন স্তর সূর্য থেকে নিঃসরিত অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে মানব দেহে চর্ম-ক্যান্সার, চোখের ছানিসহ অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ, শষ্যকে বিবিধ বিরুপ প্রতিক্রিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওজন স্তর রক্ষার জন্য ১৯৮৫ সালে ভিয়েনা কনভেনশন এবং এর আওতায় ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। ফলে বিগত ৩৫ বছরে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষয়িষ্ণু ওজন স্তর ধীরে ধীরে পুনর্গঠিত হতে শুরু করেছে এবং সূর্যালোক মানুষসহ পৃথিবীর সকল জীবের জন্য নিরাপদ হচ্ছে।’
“এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ওজোন দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রাণ বাঁচাতে ওজন : ওজন স্তর সুরক্ষার ৩৫ বছর’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী হয়েছে” বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির পর তিনি অন্যান্য গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশব্যাপী বনায়ন ও উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা মন্ট্রিল প্রটোকল যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। ১৯৯৭ সালে বায়ু দূষণ ও ওজন স্তর ক্ষতিকারক গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার রোধে বায়ুর মানমাত্রা নির্ধারণ করে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন শুরু করেছিলাম। ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফা সরকার গঠনের ফলে আমরা ওজন স্তর পুনর্গঠনে নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা ইতোমধ্যে দেশে এইচসিএফসিসহ অধিকাংশ ওজন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে এবং ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর জিডিপি’র এক শতাংশ বা দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য অর্থ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে অভিযোজনের উদ্দেশ্যে ব্যয় করছেন। তিনি বলেন “আমাদের সরকার ২০২০ সালের ৮ জুন মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনীতে অনুস্বাক্ষর করে এইচএফসি ব্যবহার হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মন্ট্রিল প্রটোকল সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও ওজোন সচিবালয় ২০১২, ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশকে প্রশংসামূলক সনদপত্র প্রদান করেছে, যা আমাদের সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন এবং অনুপ্রেরণা।”
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার গ্রিন-হাউজ গ্যাস নির্গমন বন্ধ করার লক্ষ্যে প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশ আদালত আইন-২০১০, বিপদজনক জাহাজ ভাঙ্গার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১১ এবং ২০১৪ সালে একটি সংশোধিত ও পরিমার্জিত ওজন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করেছে।
জাতীয় পরিবেশ নীতি-২০১৮, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন-২০১৯ এবং বিশুদ্ধ বায়ু আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা দেশে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন এডাপটেশন জিসিএ’র (Global Centre on Adaptation GCA) দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস চালু করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ওজন দিবস ২০২০ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন