আজ ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করবে লখনৌয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত। ঘটনার প্রায় তিন দশক বাদে এদিনের রায়েই ভাগ্য নির্ধারিত হবে লালকৃষ্ণ আডবানি, উমা ভারতী, মুরলী মনোহর যোশীদের। রায় দানের সময় অভিযুক্তদের এদিন এজলাসে হাজির থাকার নির্দেশ আগেই দিয়েছিলেন আদালত। তবে বয়সের কারণে আডাবানি, যোশীর উপস্থিতি ঘিরে সংশয় রয়েছে।
২৮ বছর আগে, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভাঙা হয় বাবরি মসজিদ। মামলায় অভিযুক্ত ৩২ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবানি ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলিমনোহর যোশি, বিনয় কাটিহার, সাক্ষী মহারাজ প্রমুখ।
কী হয়েছিল:
যেখানে বাবরি মসজিদের অবস্থান সেখানেই রামচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল বলে বিশ্বাস করসেবকদের। যার দরুন করসেবকরা বাবরি মসজিদটি ভেঙে দেয়। এরপর দেশ জুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়। সরকারি হিসাবমতো ওই দাঙ্গায় ১৮০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ। তাদের মৌখিক সাক্ষ্য এই মামলায় বড় ভূমিকা পালন করেছে। সিবিআই মোট ১০২৬ জন সাক্ষীর তালিকা প্রস্তুত করেছিল।
কোন পথে মামলা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর পুলিশের পক্ষ থেকে যে দু’টি এইআইআর হয়েছিল তার প্রথমটি করা হয় লক্ষ লক্ষ করসেবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এরাই ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর মসজিদের ওপরে উঠে গিয়ে হাতুড়ি-কুড়ুল দিয়ে সৌধ ভেঙে ফেলেছিলেন। দ্বিতীয় এফআইআরটি হয় আটজনের বিরুদ্ধে। তারা হলেন বিজেপির এল কে আডবানি, মুরলী মনোহর যোশি, উমা ভারতী এবং বিনয় কাটিহার এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিঙ্ঘল, গিরিরাজ কিশোর, বিষ্ণুহরি ডালমিয়া এবং সাধ্বী ঋতাম্ভরা। তাদের মধ্যে বিষ্ণুহরি ডালমিয়া, গিরিরাজ কিশোর ও অশোক সিঙ্ঘল প্রয়াত।
করসেবকদের বিরুদ্ধে মামলাটির তদন্ত করে সিবিআই। অন্যদিকে, বিজেপি ও ভিএইচপি নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব পায় উত্তরপ্রদেশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট।
মামলার গতিপ্রকৃতি:
এই মামলায় সিবিআই প্রথমবার চার্জশিট দেয় ১৯৯৩ সালের ৫ অক্টোবর। তাতে আট নেতা-নেত্রী সহ ৪০ জনের নাম ছিল। পরে ১৯৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি সিবিআই একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেয়। তাতে অভিযোগ করা হয়, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য বড় আকারে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরে ও মোরেশ্বর সাভের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনে সিবিআই। ১৯৯৭ সালে লখনউয়ের এক বিচারক মোট ৪৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করার নির্দেশ দেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ের ওপরে স্থগিতাদেশ দেয়।
২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, আডবাণী, যোশি, উমা ভারতী, কল্যাণ সিং এবং আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চার্জ বাতিল করা হোক। ওই বছরই ৪ মে লখনউয়ের বিশেষ আদালত নির্দেশ দেয়, ২১ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা হবে রায়বেরেলি কোর্টে। অপর ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হবে লখনউতে। সিবিআই হাইকোর্টে আবেদন করে, নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চার্জ বাতিল করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক। যদিও হাইকোর্ট সেই আবেদন নাকচ করে দেয়।
২০০৩ সালের জুলাই মাসে সিবিআই আডবাণীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের চার্জ তুলে নেয়। রায়বরেলি কোর্টে তার নামে নতুন করে চার্জশিট দাখিল করে। ২০১১ সালে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালত রায়বরেলি কোর্টে চলা মামলাগুলি লখনউ আদালতে স্থানান্তরিত করতে নির্দেশ দেয়।
সুপ্রিম নির্দেশ:
এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া তিন দশক ধরে খুব শ্লথ গতিতে চলে। পরে, ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশে প্রত্যহ এই মামলার শুনানি চলে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন বিচারককে বদলি করা চলবে না। সেই নির্দেশ মেনেই চলে বিচার প্রক্রিয়া। অভিযুক্ত শীর্ষ সব বিজেপি নেতারাই আদালতে বয়ান নেওয়া হয়। সশরীরে হাজিরা দিয়ে আদালতে বয়ান দিয়েছেন তাঁরা।
অযোধ্যা জমি মামলার রায়:
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার রায় দিয়েছে। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, বাবরি মসজিদ ভেঙে অভিযুক্তরা আইন লংঘন করেছেন।