বিনোদন ডেস্ক :

খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ১৮ অক্টোবর, সোমবার। ২০১৮ সালের আজকের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কলেজে জীবনে বন্ধুদের নিয়ে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নামে একটা ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন আইয়ুব বাচ্চু। পরে অবশ্য এর নাম পাল্টে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর ছোটখাটো নানা অনুষ্ঠানে গান করতো তাদের এই ব্যান্ডদল। আইয়ুব বাচ্চুর বন্ধুরা যে যার মতো একেক দিকে ছড়িয়ে পড়েন। এরপর আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ডদল ‘ফিলিংস’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। ১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন ‘সোলস’ ব্যান্ডে। এই ব্যান্ডের লিডগিটার বাজানোর দায়িত্বে ছিলেন টানা ১০ বছর। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’।

আইয়ুব বাচ্চু মঞ্চ পারফরম্যান্সে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শ্রোতা-ভক্তদের কাছে ‘এবি’ নামে পরিচিত এই গুণীশিল্পীর ডাকনাম রবিন। মূলত রক ধাঁচের কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক, ক্লাসিকাল সংগীত এবং লোকগীতি গেয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধতায় ভাসিয়েছেন ‘এবি’।

আইয়ুব বাচ্চুর অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে’, ‘এক আকাশের তারা তুই একা গুনিসনি’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো,  ‘এই রূপালি গিটার ফেলে একদিন…’।

আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’ প্রকাশ হয়েছিলো ১৯৮৬ সালে। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ (১৯৮৮) দিয়ে। এরপর ১৯৯১ সালে বাচ্চু ‘এলআরবি’ ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সঙ্গে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো।

১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। ‘সুখ’ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ পুরো দেশে আলোড়ন তৈরি করে। এর মধ্যে ‘চলো বদলে যাই’ গানটি বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। সেটিও সাফল্য পায়। আইয়ুব বাচ্চুর সর্বশেষ তথা ১০ম অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ প্রকাশ হয় ২০১৫ সালে।

এই রক আইকন স্মরণে সোমবার সন্ধ্যায় আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম মিউজিশিয়ান ক্লাব। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর মগবাজারের সেলিব্রেশন কমিউনিটি পয়েন্টে এ আয়োজন করা হয়েছে।

আয়োজকরা জানান, দেশীয় সংগীতে আইয়ুব বাচ্চু নতুন এক মাত্রা এনে দিয়েছেন। তার গান শুনে কয়েক প্রজন্মের বেড়ে ওঠা। একই সঙ্গে তার হাত ধরে অনেক শিল্পী ও মিউজিশিয়ান পা রাখার সুযোগ পেয়েছেন গানের ভুবনে। সংগীতে তার যে অবদান, তা কখনও ভুলে যাওয়ার নয়। সৃষ্টির মধ্য দিয়েই তিনি বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ। তাই নন্দিত এই সংগীত স্রষ্টার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ এবং আত্মার মাগফিরাত কামনায় আমাদের এই উদ্যোগ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে