কোথাকার খেলা কোথায় গড়ায়, এই বাগধারার উদাহরণ হয়ে রইল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব আর রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচ।
একেই বলে খেলা। একেই বলে ক্রিকেট ম্যাচ। কোথাকার খেলা কোথায় গড়ায়, এই বাগধারার উদাহরণ হয়ে রইল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব আর রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত একেবারে হারা ম্যাচ পকেটে পুরল রাজস্থান।
রাজস্থানের হয়ে বোলিং শুরু করেন উনাদকট। ব্যাটে কে এল রাহুল আর ময়াঙ্ক আগরওয়াল। শুরুটা দেখে করলেও পরে ধীরে ধীরে ব্যাট খুলতে থাকেন ময়াঙ্ক। তৃতীয় ওভারে উনাদকাটের থেকে ১৭ রান তুলে নেয় পঞ্জাব। উল্লেখ্য, এই ওভারেই ১০০ তম ছয় হয়ে যায় এবারের আইপিএল–এর। ৩ ওভারে ২৮ রানে পৌঁছয় পঞ্জাব। পরের ওভারে বল করতে আসেন বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ড দলের জোফ্রা আর্চার। কিন্তু প্রথম তিন বলেই তাঁকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠান কে এল রাহুল। আগের দিনের ইনিংসের ভূত দেখতে শুরু করে রাজস্থান। ছ’ওভার শেষে পঞ্জাবের রান দাঁড়ায় ৬০–এ। দুজনেই এক দারুণ শুরু করেন, একদিকে রাহুল, অন্যদিকে ময়াঙ্ক। রাজস্থানের বোলিং অ্যাটককে একেবারে সাধারণ মানে নামিয়ে আনেন দুজনে। এরপর স্পিনাররা অ্যাটাকে এলেও বিশেষ লাভ হয়নি দু’দিক থেকেই ভয়ঙ্কর ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার। আট ওভার শেষে পঞ্জাবের রান পৌঁছে যায় ৮৬–তে। তখনও একটিও উইকেট পড়েনি। স্বাভাবিক কারণে চাপে পড়ে যায় স্টিভ স্মিথের রাজস্থান। অষ্টম ওভারেই নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ময়াঙ্ক। ছয় মেরে পৌঁছে যান ৫৪ রানে। দিশেহারা রাজস্থানের বোলিং তখন একটা উইকেটের জন্য হাপিত্যেশ করছে। ৮.৪ ওভারেই ১০০ রান পেরিয়ে যায় পঞ্জাবের। ১১ তম ওভারে সর্বোচ্চ পার্টানারশিপের রেকর্ড গড়েন কে এল রাহুল আর ময়ঙ্ক আগরওয়াল। পেরিয়ে যান ১২৩ রান। তখনও বিনা উইকেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পঞ্জাবের দুই ওপেনার। ৩৫ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি সেরে নেন কে এল রাহুল। আগের দিনের মতো না হলেও এদিনও তাঁর ইনিংস ছিল চোখ ধাঁধানো। ১৪ ওভারের মাথায় ১৬১ রানে পৌঁছে যায় পঞ্জাব। তখনও একটাও উইকেট পড়েনি। ১৪ ওভারেই নিজের সেঞ্চুরি করে ফেলেন ময়াঙ্ক আগরওয়াল। মাত্র ৪৫ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১৫ ওভারে ১৭০–এর কোঠা পেরিয়ে যায় পঞ্জাব। শেষে ব্যক্তিগত ১০৬ রানের মাথায় ফেরেন ময়াঙ্ক। প্রথম উইকেট পড়ে পঞ্জাবের। ১৭ তম ওভারে, ১৮৩ রানের মাথায়। ১৮ ওভারে ফেরেন কে এল রাহুল। দুর্দান্ত ৬৯ রানের ইনিংস শেষে। ২০ ওভারে ২২৩ রানে ইনিংস শেষ করে পঞ্জাব।
ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালই করে রাজস্থান। শুরুতেই বাটলারের উইকেট হারালেও প্রায় ১২ গড়ে রান তুলতে থাকে রাজস্থান। একদিকে সঞ্জু স্যামসন অন্যদিকে স্মিথ খেলা ধরার চেষ্টা করেন। খেলা ধরেও ফেলেন তাঁরা। শারজার ছোট মাঠে তাঁদের চওড়া ব্যাটে রান উঠতে থাকে দ্রুত। মাত্র ৭ ওভারের মাথায় ৮০ রানে পৌঁছে যায় পঞ্জাব। এক উইকেটের বিনিময়ে। ৯ ওভারের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট যায় পঞ্জাবের। ফিরে যান স্মিথ। তবে ৯ ওভারে ১০০ রানে পৌঁছে যায় রাজস্থান রয়্যালস। আজও ঝলসে ওঠে সঞ্জু স্যামসনের ব্যাট। ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি সেরে ফেলেন তিনি। কিন্তু দলের রান যেন থমকে যায় স্মিথ ফিরে যাওয়ার পরেই। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রান রেট। আলাদা করে বলতেই হবে পঞ্জাবের ফিল্ডিংয়ের কথা। জন্টি রোডসের হাতে বদলে গেছ যেন ফিল্ডিংয়ের চেহারা। কম বেশি ১০–১২ রান তাঁরা বাঁচিয়েছেন ফিল্ডিংয়ে। তবু একদিক থেকে ক্রমাগত ব্যাটে রান তুলে যান সঞ্জু। ১৫ ওভারে ১৫০ রান পেরিয়ে যায় রাজস্থান। হাতে তখনও আটটি উইকেট। কিন্তু ১৬ ওভারে শামি এসে স্যামসনকে ফেরাতেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় রাজস্থানের। ৮৫ রানে শামির বলে ফিরে যান সঞ্জু। তখন আশা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু কর্টরেলের ওভারে হঠাৎ জ্বলে ওঠে রাহুল তেওয়াটিয়ার ব্যাট। কর্টরেলকে এক ওভারে পাঁচটি ছয় মেরে ম্যাচ একেবারে ঘুরিয়ে দেন তিনি। পরের ওভারের প্রথম বলেই আবার শামির স্লোয়ারে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রবিন উথাপ্পা। তখন ১১ বলে ২১ রান বাকি। নামেন আর্চার। প্রথম বলেই ছয়। খেলা ঘুরিয়ে দেন তিনি। দু’বলে দুটি ছয় মেরে। তারপর ফের তেওয়াটিয়ার ছয়। বাকি থাকে শেষ ওভার। দরকার মাত্র ২ রান। কিন্তু ৫৩ রানে আউট হয়ে ফিরে যান তেওয়াটিয়া। কাজের কাজটা করে দিয়েছিলেন তিনি। পরের ওভারে আরও একটি উইকেট হারায় রাজস্থান। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ যেতে চার উইকেটে। আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নেয় রাজস্থান।