বড় তারকা হতে গেলে প্রচারণার বিকল্প নেই। বিশেষ করে শোবিজ অঙ্গনে। একসময় গণমাধ্যমই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু আধুনিকতার এই যুগে বদলে গেছে সেই ধরণ। তারকারা নিজেদের নতুন সৃষ্টি কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের যে কোনো ঘটনা মুহূর্তেই ভক্তদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে। কিন্তু এতে ভালোর পাশাপাশি মন্দটাও গ্রহণ করতে হচ্ছে তাদের। প্রতিনিয়ত অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তারকারা।
দেখা গেছে, বেশিরভাগ তারকার কমেন্ট সেকশন অশালীন মন্তব্যে পূর্ণ। অনেক সময় তাদের ছবি দিয়ে খোলা হয় ফেক অ্যাকাউন্ট। যা দিয়ে বিভিন্ন আইনবহির্ভূত কার্যক্রমও ঘটানো হচ্ছে। পাশাপাশি তারকাদের আইডি হ্যাক হওয়ার ঘটনা এখন হরহামেশাই হচ্ছে। এর বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে ফেসবুকে। অনুসারীদের কাছ থেকে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বিব্রত তারকারা।
কিছুদিন আগে প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার আক্রান্ত হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে কিছু মানুষ শেয়ার করে এর নিচে বাজে মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সংগীতশিল্পী বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
চলতি বছরে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা দাম্পত্য জীবনের ১০ বছর পার করেছেন। এমন খবরেও ফেসবুকে অনেকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
ভুয়া আইডি নিয়ে অনেক যন্ত্রণার মধ্যে আছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। প্রতারকরা প্রতিনিয়ত তার নামে নতুন নতুন আইডি খুলছে। এসব আইডির মধ্যে তার পুরো নামসহ আরও রয়েছে- মিষ্টি মেয়ে পরী, রূপালী পরী, পরীকন্যা ইত্যাদি। সব আইডিতে তার নতুন নতুন ছবি আপলোড করা হচ্ছে। ফলে এটা যে ফেইক আইডি, তা ভক্তদের বোঝার কোনো উপায় থাকছে না।
অনলাইন বিড়ম্বনা নিয়ে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, এখন আমি বাংলাদেশ ও কলকাতায় নিয়মিত কাজ করি। কিন্তু বাংলাদেশে যে পরিমাণ বুলিংয়ের শিকার হই, তা ভয়াবহ। এখন এসব গায়ে মাখি না।
সাইবার বুলিং রুখতে আরও কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি করে শাকিব খান বলেন, সাইবার বুলিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটা সবার আগে বুঝতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজনের পোস্টে কমেন্ট করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে মানে এই নয়, যা খুশি তা লিখতে হবে। কাকে কী লিখব, কোথায় কোন ভাষা ব্যবহার করব, এটা না জানলে তার তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকার প্রয়োজন নেই।
সম্প্রতি সাকিব আল হাসানের ছোট্ট মেয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে। নির্মাতা অমিতাভ রেজা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের কারণে আমরা খুবই শক্তিশালী; যা খুশি তাই মন্তব্য করতে পারি। একজন তারকাকে নিয়ে মুখে যা আসে তা বলতে পারি। কিন্তু তা অনেক বড় অপরাধ।
জাকিয়া বারী মম বলেন, একটা শ্রেণি আছে যারা অন্যদের বিষয়ে সবসময় নোংরা ভাষায় কথা বলে। আগে যেটা অনলাইনের বাইরে ছিল, এখন সেই বিকৃত মানসিকতার লোকরাই অনলাইনের দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে। এদের কোনো বাছবিচার নেই।
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস সাইবার হয়রানি প্রসঙ্গে বলেন, ‘অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ আমরা পুরস্কার পাই। বাহবা পাই। দর্শক ভক্তরা আমাদের অভিনয়কে ভালোবেসেই তা করেন। এতে যেমন আমরা খুব খুশি হই, পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখতে হবে আমরা কিন্তু শুধু আলোচনার ঊর্ধ্বে নই। আমাদের সবাই পছন্দ করেন না। তাই সমালোচনা কিংবা বকাঝকা সহ্য করার মতো মানসিকতা আমাদের থাকতে হবে। এখন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা। তাই সব কিছু মেনে নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
নাটকের প্রিয়মুখ মেহজাবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি যেমন আমার ফেসবুক কিংবা আমার ব্যক্তিগত কাজকে শুধুই আমার মনে করে করি। তেমন আমাদের ভক্ত কিংবা দর্শকদের নিজস্বতা আছে। তারা যা কিছু করছেন সেটি তাদের বিষয়। তবে খুব যে ভালো করছেন তা কিন্তু নয়। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ নিয়ে আমাদের প্রশাসনে যারা কাজ করছেন তাদের আরও কঠোর এবং সচেতন হয়ে আমাদের এবং আমাদের মতো যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তাদের সহযোগিতা করা উচিত। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা করছেন। তবে আমি একটা কথা বলতে চাই, সমালোচনার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের কাজেরই ক্ষতি। সুতরাং কারও কথায় কান না দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, ভালোই আছি।’
অভিনেত্রী মিথিলা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিষয়টি আমাদের জাতিগত অবনতি। তবে এটি শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বে হচ্ছে। সাইবার বুলিং বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সমালোচনাগুলো যে দেখি না বা পড়ি না, তা কিন্তু নয়। আমি আমার জায়গায় সঠিক। কাউকে জবাবদিহি করতে হবে বলে আমার মনে হয় না। তাই আমি আমার সঠিক কাজটাই করে যাচ্ছি। কারও সমালোচনায় কান দিচ্ছি না।’