মিয়ানমারের পুলিশ সোমবারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির নির্বাচিত বেসামরিক নেতা অং সান সু চির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

পুলিশের নথিতে দেখা যাচ্ছে তাকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

অং সান সু চির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে আমদানি রফতানি নীতির লংঘন এবং অবৈধ যোগাযোগ যন্ত্র রাখা। তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে যে তাকে রাজধানী নেপিডোতে তার বাসভবনে আটক রাখা হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ত-এর বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে নথিপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কোভিড মহামারিরর মধ্যে জমায়েত নিষিদ্ধ করার আইন লংঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকেও দুই সপ্তাহের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

পয়লা ফেব্রুয়ারি সকালের দিকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে প্রেসিডেন্ট বা মিজ সু চি কাউকে দেখা যায়নি বা তাদের কোন খবর পাওয়া যায়নি। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মিন অং লাইং-এর নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট যে সামরিক জান্তা ক্ষমতা গ্রহণ করেছে তারা এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে দেশ শাসন করবে।

সেনাবাহিনী এই পদক্ষেপের পেছনে যুক্তি হিসাবে গত নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। ওই নির্বাচনে মিজ সু চির ন্যাশানাল লিগ ফর ডেমোক্রাসি বিপুলভাবে বিজয়ী হয়।

অভিযোগে বিস্তারিত কী রয়েছে?

আদালতে পেশ করা পুলিশের নথিতে এইসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে সু চি যোগাযোগের জন্য ওয়াকি-টকি যন্ত্র অবৈধভাবে আমদানি করেছেন এবং তা ব্যবহার করেছেন। “বিবাদী পক্ষকে জেরা করার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং আইনী সহায়তা নেয়া পর্যন্ত” সু চিকে হেফাজতে রাখা হবে বলে পুলিশের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

উইন মিন্তকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা আইনের অধীনে অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি মোটর গাড়ির বহর নিয়ে সমর্থকের সাথে দেখা করেছেন।

অভ্যুত্থানের বিরোধিতা: মিয়ানমারের বিরোধী আন্দোলনকারীরা গণভাবে আইন অমান্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীদের অনেকে হয় কাজ বন্ধ করেছেন, অন্যরা কাজ করলেও মিয়ানমারে স্বল্পস্থায়ী গণতন্ত্রকে দমন করায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে তারা প্রতিবাদী প্রতীক পরিধান করেছেন।

প্রতিবাদকারী চিকিৎসাকর্মীরা বলছেন তারা সু চির মুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন। তারা কালো অথবা লাল রিবন পরে এবং তিন আঙুল তুলে স্যালুট দেয়া তাদের ছবি পোস্ট করছেন, হাঙ্গার গেমস নামের চলচ্চিত্রের কায়দায়। গত বছর থাইল্যান্ডের প্রতিবাদ বিক্ষোভেও এইভাবে প্রতিবাদীদের দেখা গেছে।

অনেকেই অনলাইনে সোশাল মিডিয়াতে তাদের প্রোফাইল ছবি বদলে দিয়েছে, সেখানে ছবির বদলে তারা প্রোফাইলে দিয়েছে শুধু লাল রং। ”বেসামরিক পর্যায়ে আইন অমান্য আন্দোলনকে পুরো মিয়ানমারে ছড়িয়ে দেয়া এখন তরুন প্রজন্মের অন্যতম একটি কৌশল,” ইয়াঙ্গন ইউথ নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা থিনজার শুনলেই বিবিসিকে বলেছেন।

“তারা সরকারি কর্মচারিদের এই আহ্বানে সাড়া দেবার অনুরোধ করছে। যাতে তারা সামরিক জান্তা সরকারের পক্ষে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।”

আইন অমান্য আন্দোলন সমন্বয়ের জন্য ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও বড়ধরনের প্রতিবাদের কিছু নমুনা দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাতে প্রধান শহর ইয়াঙ্গনে গাড়ির চালকরা হর্ন বাজিয়ে এবং বাসিন্দারা রান্নার পাত্র বাজিয়ে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে মূলত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী রাস্তায় টহল দিচ্ছে এবং রাতের বেলা কারফিউ বলবৎ রয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ সমর্থন করেও বিক্ষোভ হয়েছে। একটি সমাবেশে প্রায় ৩০০০ হাজার মানুষের উপস্থিতির খবর দিয়েছে এপি বার্তা সংস্থা।

অভ্যুত্থানে অন্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া: সাতটি উন্নত অর্থনীতির দেশের গোষ্ঠী বলেছে তারা এই ঘটনায় ”গভীরভাবে উদ্বিগ্ন” এবং তারা দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে।

”আমরা সেনা বাহিনীকে অবিলম্বে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার, অন্যায়ভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তিদানের এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি,” বলা হয়েছে লন্ডন থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে। এই জি-সেভেন গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলো হল কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও আমেরিকা।

তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে চীন এব্যাপারে একমত না হওয়ার কারণে। শান্তিরক্ষার ব্যাপারে জাতিসংঘের এই কাউন্সিলে যে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের ভেটো দানের অধিকার রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে চীন।

সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে চীন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা আন্তর্জাতিক চাপ দেশটির পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে।

আন্তর্জাতিক মহলের নজরদারি থেকে মিয়ানমারকে সুরক্ষা দেবার ক্ষেত্রে সবসময়ই চীন একটা ভূমিকা পালন করে এসেছে। চীন মিয়ানমারকে তার অর্থনীতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে গণ্য করে এবং মিয়ানমারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর একটি হল চীন।

দেশটির রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর দমন ও নিপীড়ন নিয়ে জাতিসংঘের সমালোচনায় বারবার মিয়ানমারের পাশে ছিল চীন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে