Dhaka ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে জীবন পেয়ে অন্য নারীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন স্বামী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • 36

ঢাকার সাভার উপজেলায় ৩৫ বছর বয়সী স্ত্রী নিজের কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচিয়েছেন, কিন্তু সেই স্বামী সুস্থ হয়ে পরকীয়া ও অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এমনকি কিডনি দাতা স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস করছেন ওই স্বামী।

এ ঘটনায় অকৃতজ্ঞ স্বামী মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি। অভিযুক্ত তারেককে গ্রেপ্তার করা হলেও বর্তমানে জামিনে আছেন। অমানবিক ও হৃদয়বিদারক এমন ঘটনাটি সাভার সদর ইউনিয়নের ১নং কলমা এলাকার ঘটেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে তারেক ও টুনির বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের একটি পুত্রসন্তান হয়। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তারেক অসুস্থ হয়ে পড়লে জানা যায় তার দুটি কিডনিই অচল। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু করার পরামর্শ দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য টুনি স্বামীকে ভারতে নিয়ে যান। কয়েক বছর পর চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তখন টুনি নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দান করেন। এমনকি তারেকের চিকিৎসার খরচ জোগাতে টুনি নিজের বাড়িতে একটি বিউটি পার্লার খোলেন এবং বুটিকসের কাজ শুরু করেন। তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। আয়ের সিংহভাগ অসুস্থ স্বামী তারেকের চিকিৎসায় ব্যয় হতো। নিজের জমানো টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যান। চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রতি বছর তিনবার তারেককে ভারতে নিয়ে যেতে হতো, যাতে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হতো।

অসুস্থ থাকাকালীন তারেক কোনও কাজ করতে পারতেন না। একটা সময় তার পরিবারও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসক কৈলাস নাথ সিংয়ের তত্ত্বাবধানে টুনি ও তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর নতুন জীবন পেয়ে দিন দিন তারেকের আচরণ বদলাতে থাকে। একপর্যায়ে তারেক অন্য নারীর সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।

টুনি জানান, কিডনি দেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ অনুভব হয়। আইসিইউ থেকে কেবিনে আসার পরই তিনি তারেকের ভিন্নরূপ দেখতে পান। টুনির এক খালা অপারেশনের আগে টাকা পাঠাতে দেরি করেছিলেন, এই অজুহাতে তারেক তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। ঢাকায় ফেরার পর তারেক টুনিকে তার উপার্জনের সব টাকা দিতে এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে চাপ দেন। তাহমিনা নামের একজন ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে তারেক পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন এবং টুনিকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ২ ফেব্রুয়ারি সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দেন টুনি। পরে তারেক মুচলেকা দিয়ে অভিযোগ তুলে নেন। এরপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় টুনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং গত ২২ এপ্রিল বাদী হয়ে তারেকের নামে আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন।

টুনির মা বলেন, আমার পেনশনের সব টাকা তারেকের চিকিৎসায় খরচ করেছি। আজ সেই ছেলে আমার মেয়েকে তাড়িয়ে দিলো। আমরা আদালতের কাছে তারেকের কঠিন শাস্তি দাবি জানাই। যাতে আর কোনও মেয়ের জীবন ধ্বংস না হয়।

তারেক জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে পলাতক থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া, তারেকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে, জানতে চাইলে টুনির আইনজীবী নেহার ফারুক বলেন, তারেক শুধু নারী নির্যাতন নয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন লঙ্ঘন করেছেন। প্রতারণার মাধ্যমে স্ত্রীর কিডনি নিয়ে পরে তার ওপর নির্যাতন করেছেন। আমরা চার্জশিট হাতে পেলেই তার জামিন বাতিলের আবেদন করবো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে জীবন পেয়ে অন্য নারীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন স্বামী

Update Time : ০৪:০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

ঢাকার সাভার উপজেলায় ৩৫ বছর বয়সী স্ত্রী নিজের কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচিয়েছেন, কিন্তু সেই স্বামী সুস্থ হয়ে পরকীয়া ও অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এমনকি কিডনি দাতা স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস করছেন ওই স্বামী।

এ ঘটনায় অকৃতজ্ঞ স্বামী মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি। অভিযুক্ত তারেককে গ্রেপ্তার করা হলেও বর্তমানে জামিনে আছেন। অমানবিক ও হৃদয়বিদারক এমন ঘটনাটি সাভার সদর ইউনিয়নের ১নং কলমা এলাকার ঘটেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে তারেক ও টুনির বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের একটি পুত্রসন্তান হয়। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তারেক অসুস্থ হয়ে পড়লে জানা যায় তার দুটি কিডনিই অচল। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু করার পরামর্শ দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য টুনি স্বামীকে ভারতে নিয়ে যান। কয়েক বছর পর চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তখন টুনি নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দান করেন। এমনকি তারেকের চিকিৎসার খরচ জোগাতে টুনি নিজের বাড়িতে একটি বিউটি পার্লার খোলেন এবং বুটিকসের কাজ শুরু করেন। তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। আয়ের সিংহভাগ অসুস্থ স্বামী তারেকের চিকিৎসায় ব্যয় হতো। নিজের জমানো টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যান। চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রতি বছর তিনবার তারেককে ভারতে নিয়ে যেতে হতো, যাতে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হতো।

অসুস্থ থাকাকালীন তারেক কোনও কাজ করতে পারতেন না। একটা সময় তার পরিবারও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসক কৈলাস নাথ সিংয়ের তত্ত্বাবধানে টুনি ও তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর নতুন জীবন পেয়ে দিন দিন তারেকের আচরণ বদলাতে থাকে। একপর্যায়ে তারেক অন্য নারীর সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।

টুনি জানান, কিডনি দেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ অনুভব হয়। আইসিইউ থেকে কেবিনে আসার পরই তিনি তারেকের ভিন্নরূপ দেখতে পান। টুনির এক খালা অপারেশনের আগে টাকা পাঠাতে দেরি করেছিলেন, এই অজুহাতে তারেক তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। ঢাকায় ফেরার পর তারেক টুনিকে তার উপার্জনের সব টাকা দিতে এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে চাপ দেন। তাহমিনা নামের একজন ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে তারেক পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন এবং টুনিকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ২ ফেব্রুয়ারি সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দেন টুনি। পরে তারেক মুচলেকা দিয়ে অভিযোগ তুলে নেন। এরপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় টুনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং গত ২২ এপ্রিল বাদী হয়ে তারেকের নামে আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন।

টুনির মা বলেন, আমার পেনশনের সব টাকা তারেকের চিকিৎসায় খরচ করেছি। আজ সেই ছেলে আমার মেয়েকে তাড়িয়ে দিলো। আমরা আদালতের কাছে তারেকের কঠিন শাস্তি দাবি জানাই। যাতে আর কোনও মেয়ের জীবন ধ্বংস না হয়।

তারেক জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে পলাতক থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া, তারেকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে, জানতে চাইলে টুনির আইনজীবী নেহার ফারুক বলেন, তারেক শুধু নারী নির্যাতন নয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন লঙ্ঘন করেছেন। প্রতারণার মাধ্যমে স্ত্রীর কিডনি নিয়ে পরে তার ওপর নির্যাতন করেছেন। আমরা চার্জশিট হাতে পেলেই তার জামিন বাতিলের আবেদন করবো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।