Dhaka ১২:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিএনজি চালক দেলোয়ার আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে এখন শীর্ষ মাদক সম্রাট

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:১৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০
  • ১৯০ Time View

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূ নির্যাতনের মূলহোতা দেলোয়ার এক সময় ছিলেন সিএনজি চালক। যোগ দেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। বনে যান দলের নেতা। তারপরই মাদক বিক্রেতা, সেখান থেকে ধীরে ধীরে বনে যান বাহিনীর প্রধান।

দলের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে তুলেছেন অস্ত্র ও মাদকের রমরমা ব্যবসা। গ্রেফতার হলেও এখনও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় এলাকাবাসী। তার নিয়ন্ত্রণে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত মাদকের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটও রয়েছে বলে জানা গেছে। 

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বেগমগঞ্জের সীমান্তবর্তী পূর্ব এখলাশপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কিশোর গ্যাং। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা এই বাহিনীগুলোর মূল পেশা। এর মধ্যে একটি গ্রুপের প্রধান হচ্ছে মো. দেলোয়ার। একসময় সিএনজি চালালেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে দেলোয়ার এখন এলাকার শীর্ষ মাদক সম্রাট ও এলাকার ত্রাস।

গত মাসের (২ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূ (৩৫) এর বসত ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানি করে দেলোয়ার ও তার সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দল। ঐ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।

গত রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ঘটনার ৩২ দিন পর  গৃহবধূকে নির্যাতনের ঐ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়ে গেলে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ থেকে দেলোয়ারকে গ্রেফতার করে। তবে এখনও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় এলাকাবাসী।

গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় নোয়াখালীতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। দাবি করেছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুরো এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে দেলোয়ার বাহিনী। জিম্মি করে রেখেছে এলাকাবাসীকে। কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তার ওপর গুলি চালানো হয়, তার বাড়িঘরে হামলা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এই দেলোয়ার অস্ত্র ও মাদকসহ তিনবার গ্রেফতার হন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বারবারই পেয়েছেন মুক্তি। বিচার না হওয়ার প্রবণতার কারণেই সন্ত্রাসীরা আরও বড় অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

এই বাহিনী সদস্যদের চাঁদা না দিয়ে কেউ কোনো ভবনও তৈরি করতে পারে না। দাবি অনুযায়ী চাঁদা না পেলে বন্ধ করে দেয়া হয় নির্মাণাধীন ভবনের কাজ। বাধ্য হয়েই তাদের চাঁদা দিয়ে কাজ শুরু করাতে হয়।

এখলাসপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম জানান, ‘পাশের ইউনিয়নের সন্ত্রাসীদের ক্ষমতা দেখিয়ে দেলোয়ার এখলাশপুরে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করছে। সে আমাদের দলের কেউ না, সে দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই।’

নিরক্ষতার কারণে মানুষ তেমন সচতেন না, যার করণে পূর্ব এখলাশপুরে সচেতন মানুষের হার কম। এই ধরনের সন্ত্রাসী গ্রুপের কারণে ভালো পরিবারের সদস্যরাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।

মেঠোপথ ও খালপাড়ের কারণে এই এলাকায় পুলিশ তেমন আসে না, আর পুলিশ না আসার কারণেই সন্ত্রাসীরা তাদের অপকর্ম করে খুব সহজেই পার পেয়ে যায়।

জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান,‘পুলিশ এখন অনেক বেশি তৎপর। কোনো বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিই। ইতিমধ্যে আমরা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

সিএনজি চালক দেলোয়ার আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে এখন শীর্ষ মাদক সম্রাট

Update Time : ০৯:১৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূ নির্যাতনের মূলহোতা দেলোয়ার এক সময় ছিলেন সিএনজি চালক। যোগ দেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। বনে যান দলের নেতা। তারপরই মাদক বিক্রেতা, সেখান থেকে ধীরে ধীরে বনে যান বাহিনীর প্রধান।

দলের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে তুলেছেন অস্ত্র ও মাদকের রমরমা ব্যবসা। গ্রেফতার হলেও এখনও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় এলাকাবাসী। তার নিয়ন্ত্রণে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত মাদকের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটও রয়েছে বলে জানা গেছে। 

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বেগমগঞ্জের সীমান্তবর্তী পূর্ব এখলাশপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কিশোর গ্যাং। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা এই বাহিনীগুলোর মূল পেশা। এর মধ্যে একটি গ্রুপের প্রধান হচ্ছে মো. দেলোয়ার। একসময় সিএনজি চালালেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে দেলোয়ার এখন এলাকার শীর্ষ মাদক সম্রাট ও এলাকার ত্রাস।

গত মাসের (২ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূ (৩৫) এর বসত ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানি করে দেলোয়ার ও তার সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দল। ঐ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।

গত রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ঘটনার ৩২ দিন পর  গৃহবধূকে নির্যাতনের ঐ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়ে গেলে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ থেকে দেলোয়ারকে গ্রেফতার করে। তবে এখনও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় এলাকাবাসী।

গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় নোয়াখালীতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। দাবি করেছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুরো এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে দেলোয়ার বাহিনী। জিম্মি করে রেখেছে এলাকাবাসীকে। কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তার ওপর গুলি চালানো হয়, তার বাড়িঘরে হামলা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এই দেলোয়ার অস্ত্র ও মাদকসহ তিনবার গ্রেফতার হন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বারবারই পেয়েছেন মুক্তি। বিচার না হওয়ার প্রবণতার কারণেই সন্ত্রাসীরা আরও বড় অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

এই বাহিনী সদস্যদের চাঁদা না দিয়ে কেউ কোনো ভবনও তৈরি করতে পারে না। দাবি অনুযায়ী চাঁদা না পেলে বন্ধ করে দেয়া হয় নির্মাণাধীন ভবনের কাজ। বাধ্য হয়েই তাদের চাঁদা দিয়ে কাজ শুরু করাতে হয়।

এখলাসপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম জানান, ‘পাশের ইউনিয়নের সন্ত্রাসীদের ক্ষমতা দেখিয়ে দেলোয়ার এখলাশপুরে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করছে। সে আমাদের দলের কেউ না, সে দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই।’

নিরক্ষতার কারণে মানুষ তেমন সচতেন না, যার করণে পূর্ব এখলাশপুরে সচেতন মানুষের হার কম। এই ধরনের সন্ত্রাসী গ্রুপের কারণে ভালো পরিবারের সদস্যরাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।

মেঠোপথ ও খালপাড়ের কারণে এই এলাকায় পুলিশ তেমন আসে না, আর পুলিশ না আসার কারণেই সন্ত্রাসীরা তাদের অপকর্ম করে খুব সহজেই পার পেয়ে যায়।

জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান,‘পুলিশ এখন অনেক বেশি তৎপর। কোনো বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিই। ইতিমধ্যে আমরা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।