Dhaka ০৬:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিংড়ায় অপ-সাংবাদিকতা দিন দিন বেড়েই চলেছে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৩৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ৪৯৬ Time View

আশরাফুল ইসলাম সুমন, সিংড়া (নাটোর):

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় অপ-সাংবাদিকতা দিনদিন বেড়েই চলেছে আর নকল সাংবাদিকদের ভিড়ে আসল সাংবাদিকদের হারিয়ে যেতে বেশি দিন অপেক্ষায় থাকতে হবেনা।

আমার ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশাটি নীতি নৈতিকতা আর দক্ষতার মাপকাঠিতে অনেকটাই নিচে নেমে গেছে।
আমি জানি সিংড়া উপজেলায় যে সকল সাংবাদিকদের সংগঠন (প্রেসক্লাব), এর নেতারা রাজনৈতিক দলের মতো করে নিজ নিজ দলে সদস্য তৈরি করেছেন এবং নিজেদের গ্রুপকে শক্তিধর মনে করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে সাংবাদিক সংগঠনের নিজেকে যোগ্য নেতা হিসেবে জাহির করছেন আর আমি মনে করি, সিংড়া উপজেলায় একটি মাত্র প্রেসক্লাব যথেষ্ট ছিল কিন্তু রাজনৈতিক দলের মতো একটি থেকে চার খন্ডিত হয়ে গেছে আর এর মূল কারণ হচ্ছে, সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব পাশাপাশি সততা, ব্যক্তিত্ব, ব্যবহার, বস্তুনিষ্ঠতা, বিচক্ষণতা, দায়বদ্ধতা ও নিয়মানুবর্তিতা এবং যোগাযোগের ঘাটতি।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে একথা স্বীকার করতেই হবে, এ পেশায় আজও সিংহভাগ জনশক্তিই আনাড়ি। তারা অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও প্রশিক্ষণহীন। সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে এ পেশায় এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্ত নগন্য। পড়ালেখা করাতো দূরে থাক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন লোকই বা কোথায়। অথচ একটি সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা আজ দেশে-বিদেশে অনেক উঁচু মাপের পেশা। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা আছে সাংবাদিকতা তার মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে।

সিংড়া উপজেলায় যে কয়েকটি প্রেসক্লাব রয়েছে আমি মনে করি ওই সকল প্রেসক্লাবের নেতা থেকে শুরু করে উক্ত সংগঠনের সাংবাদিকদের যোগ্যতা নিয়ে যাচাই বাছাই শুরু হলে অনেকেই নাখোশ হবেন, এক সময় আমিও ভাবতাম শিক্ষাগত যোগ্যতা সাংবাদিকতার জন্য বাধ্যবাধকতা হতে পারে না, কিন্তু আজ সিংড়া উপজেলায় সাংবাদিকতা পেশাটা এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে সেখানে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ জরুরি বলে আমি মনে করছি। কারণ আমরা সাংবাদিকরা এই পেশাটির মান মর্যাদা ধরে রাখতে পারছিনা। আমাদের মধ্যে প্রচুর অর্ধশিক্ষিত, ক্ষেত্রবিশেষ মূর্খসহ নানা ধান্দাবাজ ঢুকে পড়েছে। তাদের কারণেই সাংবাদিকতার নামে আজ অপ-সাংবাদিকতা বেড়েছে, দায়িত্বশীলতা কমেছে।

রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় সাংবাদিকদের ছড়াছড়ি পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পার হতে পারেনি কিন্তু সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক টাউট বাটপার। এসব আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার পাশাপাশি ঘরে বসে অনলাইন পোর্টাল খুলে নানা জায়গা থেকে নিউজ কপি পেস্ট করেও অনেক নামধারী সাংবাদিক জন্ম হয়েছে। ষ্টুডিও এন্ড ভিডিও দোকানদার, ইলেক্ট্রিশিয়ান, মুদি দোকানি, কবিরাজ, সরকারি বে-সরকারি স্কুল শিক্ষক, এমনকি রাজনীতি দলের নেতারাও এখন সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে। ফেসবুকিং করে এমন অনেকেই নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেলের সামনে প্রেস লাগিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেদারছে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তাদের হাত থেকে সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই যোগ্যতার বিষয়টি ভাবতে হবে। সাংবাদিকদের সব সংগঠনের উচিত এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলার প্রশাসন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্যমন্ত্রীকে সব রকমের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা।

সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও পেশার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতেই এটা করতে হবে নয়তো সিংড়া উপজেলায় অপসাংবাদিকতা দিনদিন বেরেই চলবে আর নকল সাংবাদিকদের ভিড়ে আসল সাংবাদিকদের হারিয়ে যেতে বেশিদিন আর অপেক্ষায় থাকতে হবেনা।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

সিংড়ায় অপ-সাংবাদিকতা দিন দিন বেড়েই চলেছে

Update Time : ০৯:৩৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

আশরাফুল ইসলাম সুমন, সিংড়া (নাটোর):

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় অপ-সাংবাদিকতা দিনদিন বেড়েই চলেছে আর নকল সাংবাদিকদের ভিড়ে আসল সাংবাদিকদের হারিয়ে যেতে বেশি দিন অপেক্ষায় থাকতে হবেনা।

আমার ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশাটি নীতি নৈতিকতা আর দক্ষতার মাপকাঠিতে অনেকটাই নিচে নেমে গেছে।
আমি জানি সিংড়া উপজেলায় যে সকল সাংবাদিকদের সংগঠন (প্রেসক্লাব), এর নেতারা রাজনৈতিক দলের মতো করে নিজ নিজ দলে সদস্য তৈরি করেছেন এবং নিজেদের গ্রুপকে শক্তিধর মনে করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে সাংবাদিক সংগঠনের নিজেকে যোগ্য নেতা হিসেবে জাহির করছেন আর আমি মনে করি, সিংড়া উপজেলায় একটি মাত্র প্রেসক্লাব যথেষ্ট ছিল কিন্তু রাজনৈতিক দলের মতো একটি থেকে চার খন্ডিত হয়ে গেছে আর এর মূল কারণ হচ্ছে, সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব পাশাপাশি সততা, ব্যক্তিত্ব, ব্যবহার, বস্তুনিষ্ঠতা, বিচক্ষণতা, দায়বদ্ধতা ও নিয়মানুবর্তিতা এবং যোগাযোগের ঘাটতি।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে একথা স্বীকার করতেই হবে, এ পেশায় আজও সিংহভাগ জনশক্তিই আনাড়ি। তারা অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও প্রশিক্ষণহীন। সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে এ পেশায় এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্ত নগন্য। পড়ালেখা করাতো দূরে থাক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন লোকই বা কোথায়। অথচ একটি সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা আজ দেশে-বিদেশে অনেক উঁচু মাপের পেশা। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা আছে সাংবাদিকতা তার মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে।

সিংড়া উপজেলায় যে কয়েকটি প্রেসক্লাব রয়েছে আমি মনে করি ওই সকল প্রেসক্লাবের নেতা থেকে শুরু করে উক্ত সংগঠনের সাংবাদিকদের যোগ্যতা নিয়ে যাচাই বাছাই শুরু হলে অনেকেই নাখোশ হবেন, এক সময় আমিও ভাবতাম শিক্ষাগত যোগ্যতা সাংবাদিকতার জন্য বাধ্যবাধকতা হতে পারে না, কিন্তু আজ সিংড়া উপজেলায় সাংবাদিকতা পেশাটা এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে সেখানে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ জরুরি বলে আমি মনে করছি। কারণ আমরা সাংবাদিকরা এই পেশাটির মান মর্যাদা ধরে রাখতে পারছিনা। আমাদের মধ্যে প্রচুর অর্ধশিক্ষিত, ক্ষেত্রবিশেষ মূর্খসহ নানা ধান্দাবাজ ঢুকে পড়েছে। তাদের কারণেই সাংবাদিকতার নামে আজ অপ-সাংবাদিকতা বেড়েছে, দায়িত্বশীলতা কমেছে।

রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় সাংবাদিকদের ছড়াছড়ি পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পার হতে পারেনি কিন্তু সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক টাউট বাটপার। এসব আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার পাশাপাশি ঘরে বসে অনলাইন পোর্টাল খুলে নানা জায়গা থেকে নিউজ কপি পেস্ট করেও অনেক নামধারী সাংবাদিক জন্ম হয়েছে। ষ্টুডিও এন্ড ভিডিও দোকানদার, ইলেক্ট্রিশিয়ান, মুদি দোকানি, কবিরাজ, সরকারি বে-সরকারি স্কুল শিক্ষক, এমনকি রাজনীতি দলের নেতারাও এখন সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে। ফেসবুকিং করে এমন অনেকেই নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেলের সামনে প্রেস লাগিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেদারছে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তাদের হাত থেকে সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই যোগ্যতার বিষয়টি ভাবতে হবে। সাংবাদিকদের সব সংগঠনের উচিত এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলার প্রশাসন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্যমন্ত্রীকে সব রকমের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা।

সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও পেশার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতেই এটা করতে হবে নয়তো সিংড়া উপজেলায় অপসাংবাদিকতা দিনদিন বেরেই চলবে আর নকল সাংবাদিকদের ভিড়ে আসল সাংবাদিকদের হারিয়ে যেতে বেশিদিন আর অপেক্ষায় থাকতে হবেনা।