Dhaka ০৮:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন হাওর ইজারা বন্ধ করতে হবে: ফরিদা আখতার ‘ওয়ারেন্টি দিচ্ছি, দেশের মানুষ নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বাঁচবে’ ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেটের ঘোষণা আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে : আলী রীয়াজ ট্রাম্প-জিনপিং তৈরি করবে না, মোদিও ধাক্কা দিয়ে কিছু করতে পারবে না রোববার সারা দেশে মহাসমাবেশের ঘোষণা কারিগরি শিক্ষার্থীদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান যাতে ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারে সংঘটিত চার খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৪৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০
  • ১৪৭ Time View

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারে সংঘটিত চার খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে দাবি করে সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ‘নিহত শাহিনুরের ভাই রায়হানুলই পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। 

বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে সাতক্ষীরাস্থ সিআইডির জেলা কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির খুলনাস্থ অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত রায়হানুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। এজন্য তাকে আজ হাজির করা গেল না। জনাকীর্ন প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন- রায়হানুল তার ভাই শাহিনুর, ভাবী সাবিনা খাতুন এবং তাদের দুই শিশু সন্তান মাহি ও তাসনিম সুলতানাকে একাই ধারালো চাপাতি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক আরও বলেন, এর আগে সে বাজার থেকে ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন-২ ও এনার্জি ড্রিংক কিনে আনে। ১৪ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে সে তার দুই শিশু ভাতিজা-ভাতিজি এবং ভাবীকে ওষুধ মেশানো এই ড্রিংক খাওয়ায়। পরে রাত দেড়টার দিকে তার ভাই শাহিনুর মাছের ঘের থেকে বাড়ি ফিরলে তাকেও ঘুমের ওষুধ মেশানো এনার্জি ড্রিংক খাওয়ায়।

রায়হানুলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, সে নিজ ঘরের ছাদের কার্নিশ বেয়ে উপরে উঠে খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমে তার ভাই শাহিনুরকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে হাতের রগ কেটে পায়ে রশি বেঁধে দেয়। এরপরই সে পাশের কক্ষে ভাবী সাবিনাকে জবাই করে হত্যা করে। এসময় তার চিৎকারে শিশুরা জেগে গেলে সে তাদেরকেও একইভাবে জবাই করে।

সে সিআইডিকে জানিয়েছে, ‘তার ওপর শয়তান ভর করেছিল। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিশু দুটিকে হত্যা করে সে’। খালি গায়ে হত্যার পর সে রক্তমাখা তোয়ালে ও চাপাতি মাছের ঘেরে ফেলে দেয়। পরে ঘের থেকে তার দেখানো মতে তা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ডিআইজি।

কেন সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে- এর জবাবে রায়হানুলের বরাতে সিআইডি অফিসার জানান, রায়হানুল একজন বেকার যুবক। ৯/১০ মাস আগে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সেই থেকে সে ভাইয়ের সংসারে খাওয়া দাওয়া করতো। নিজে কোনও কাজ করে না, খরচও দেয় না। এসব কারণে প্রায়ই ভাই-ভাবীর সঙ্গে তার ঝগড়া হতো। তারা তাকে গালাগালও দিতো।

রায়হানুলের জবানবন্দির বরাতে তিনি আরও জানান, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভাবীর সঙ্গে তার একই বিষয়ে বাদানুবাদ হয়। ভাবী তাকে বকাবকি করেন। পরে সে ঘুমের ওষুধ মেশানো এনার্জি ড্রিংক খাওয়ায় ভাবী ও তার দুই সন্তানকে। এতে তারা ঘুমিয়ে পড়ে।

রায়হানুল আরও জানিয়েছে, ‘রাত দেড়টার দিকে সে ঘরে বসে টিভি দেখছিল। এ সময় তার ভাই শাহিনুর ঘের থেকে এসে তাকে বকাবকি করে বলেন, এতো টিভি দেখিস, বিদ্যুতের বিল দেবে কে’। এ নিয়ে তাকে খানিকটা বকেনও শাহিনুর।

জবাবে রায়হানুল তাকে জানায়, ‘তুমি মাথা ঠাণ্ডা করো, এবারের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেবো। এই বলে সে তাকেও ঘুমের ওষুধ মেশানো এনার্জি ড্রিংক খাওয়ায়। পরে শাহিনুরও ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় সে এক এক করে তাদের খুন করে।

প্রায় ২০ মিনিটের এই প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, হত্যার সময় রায়হানুলের সঙ্গে আর কেউ ছিল না। কেবলমাত্র ভাই-ভাবীর বকাবকির কারণেই সে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানিয়েছে সিআইডিকে। রিমান্ডে থাকা রায়হানুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর রাতে কলারোয়ার খলিসা গ্রামে একই পরিবারে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সেদিনই পুলিশ ঘাতক ভাই রায়হানুলকে গ্রেফতার করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারে সংঘটিত চার খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত

Update Time : ০১:৪৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারে সংঘটিত চার খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে দাবি করে সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ‘নিহত শাহিনুরের ভাই রায়হানুলই পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। 

বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে সাতক্ষীরাস্থ সিআইডির জেলা কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির খুলনাস্থ অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত রায়হানুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। এজন্য তাকে আজ হাজির করা গেল না। জনাকীর্ন প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন- রায়হানুল তার ভাই শাহিনুর, ভাবী সাবিনা খাতুন এবং তাদের দুই শিশু সন্তান মাহি ও তাসনিম সুলতানাকে একাই ধারালো চাপাতি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক আরও বলেন, এর আগে সে বাজার থেকে ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন-২ ও এনার্জি ড্রিংক কিনে আনে। ১৪ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে সে তার দুই শিশু ভাতিজা-ভাতিজি এবং ভাবীকে ওষুধ মেশানো এই ড্রিংক খাওয়ায়। পরে রাত দেড়টার দিকে তার ভাই শাহিনুর মাছের ঘের থেকে বাড়ি ফিরলে তাকেও ঘুমের ওষুধ মেশানো এনার্জি ড্রিংক খাওয়ায়।

রায়হানুলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, সে নিজ ঘরের ছাদের কার্নিশ বেয়ে উপরে উঠে খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমে তার ভাই শাহিনুরকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে হাতের রগ কেটে পায়ে রশি বেঁধে দেয়। এরপরই সে পাশের কক্ষে ভাবী সাবিনাকে জবাই করে হত্যা করে। এসময় তার চিৎকারে শিশুরা জেগে গেলে সে তাদেরকেও একইভাবে জবাই করে।

সে সিআইডিকে জানিয়েছে, ‘তার ওপর শয়তান ভর করেছিল। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিশু দুটিকে হত্যা করে সে’। খালি গায়ে হত্যার পর সে রক্তমাখা তোয়ালে ও চাপাতি মাছের ঘেরে ফেলে দেয়। পরে ঘের থেকে তার দেখানো মতে তা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ডিআইজি।

কেন সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে- এর জবাবে রায়হানুলের বরাতে সিআইডি অফিসার জানান, রায়হানুল একজন বেকার যুবক। ৯/১০ মাস আগে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সেই থেকে সে ভাইয়ের সংসারে খাওয়া দাওয়া করতো। নিজে কোনও কাজ করে না, খরচও দেয় না। এসব কারণে প্রায়ই ভাই-ভাবীর সঙ্গে তার ঝগড়া হতো। তারা তাকে গালাগালও দিতো।

রায়হানুলের জবানবন্দির বরাতে তিনি আরও জানান, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভাবীর সঙ্গে তার একই বিষয়ে বাদানুবাদ হয়। ভাবী তাকে বকাবকি করেন। পরে সে ঘুমের ওষুধ মেশানো এনার্জি ড্রিংক খাওয়ায় ভাবী ও তার দুই সন্তানকে। এতে তারা ঘুমিয়ে পড়ে।

রায়হানুল আরও জানিয়েছে, ‘রাত দেড়টার দিকে সে ঘরে বসে টিভি দেখছিল। এ সময় তার ভাই শাহিনুর ঘের থেকে এসে তাকে বকাবকি করে বলেন, এতো টিভি দেখিস, বিদ্যুতের বিল দেবে কে’। এ নিয়ে তাকে খানিকটা বকেনও শাহিনুর।

জবাবে রায়হানুল তাকে জানায়, ‘তুমি মাথা ঠাণ্ডা করো, এবারের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেবো। এই বলে সে তাকেও ঘুমের ওষুধ মেশানো এনার্জি ড্রিংক খাওয়ায়। পরে শাহিনুরও ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় সে এক এক করে তাদের খুন করে।

প্রায় ২০ মিনিটের এই প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, হত্যার সময় রায়হানুলের সঙ্গে আর কেউ ছিল না। কেবলমাত্র ভাই-ভাবীর বকাবকির কারণেই সে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানিয়েছে সিআইডিকে। রিমান্ডে থাকা রায়হানুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর রাতে কলারোয়ার খলিসা গ্রামে একই পরিবারে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সেদিনই পুলিশ ঘাতক ভাই রায়হানুলকে গ্রেফতার করে।