Dhaka ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৌদিতে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ালো ইসি সংস্কার না করে কোনো নির্বাচনেই ভালো ফল পাওয়া যাবে না : কমিশন প্রধান ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস, বাড়বে গরমের অনুভূতি জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় টেকসই কর্মসূচি বাড়ানো হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা রাজনৈতিক পর্যায়ে সার্কের অগ্রগতি হয়নি : নেপালের রাষ্ট্রদূত শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ১৯১ রানেই অলআউট টাইগাররা প্রধান উপদেষ্টা কাতার সফরে যাচ্ছেন সোমবার

ম্যাসেডোনিয়ায় নাইটক্লাবে আগুন, ৫৯ জনের মৃত্যু

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:১৩:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • ৩৬ Time View

উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার কোচানি শহরের একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের তদন্তের অংশ হিসেবে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় রোববার (১৬ মার্চ) দিনরাত আড়াইটার দিকে কোচানির ‘পালস’ ক্লাবে এই আগুন লাগে। সে সময় জনপ্রিয় হিপ-হপ ব্যান্ড ডিএনকের কনসার্ট চলছিল, যেখানে প্রায় ৫০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের মুখপাত্র বিলজানা আরসোভস্কা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আটক ১০ জনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও রয়েছেন, যারা অবৈধভাবে ক্লাবটির অনুমোদন দিয়েছিলেন।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যানসে তোস্কোভস্কি জানিয়েছেন, ক্লাবটির কার্যক্রম পরিচালনার কোনো বৈধ অনুমতি ছিল না। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে কীভাবে ক্লাবটি চালানো হচ্ছিল।

স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, আগুন লাগা ক্লাবটি আসলে একটি পুরনো কার্পেট গুদাম ছিল, যেটিকে পরে ‘সাময়িক নাইটক্লাব’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। ক্লাবটিতে মাত্র একটি কার্যকরী প্রবেশ ও বহির্গমন পথ ছিল। পেছনের দরজা তালাবদ্ধ থাকায় অনেকেই বের হতে পারেননি।

প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, কনসার্টের সময় ব্যবহার করা পাইরোটেকনিক ডিভাইস থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মঞ্চে দুইটি ফ্লেয়ার জ্বলে ওঠার পর সেখান থেকে ছিটকে আসা স্ফুলিঙ্গ ছাদে লেগে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মঞ্চে আগুন লাগার পর দর্শকদের কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন, অনেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু একটিমাত্র নির্গমন পথ থাকায় হুড়োহুড়িতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবক মুস্তাফা সাইদভ জানিয়েছেন, হতাহতদের অধিকাংশই ১৮-২০ বছর বয়সী তরুণ। নিহতদের মধ্যে অন্তত তিনজনের বয়স ১৮ বছরের কম।

২০ বছর বয়সী মারিজা তাসেভা স্থানীয় চ্যানেল ফাইভ টেলিভিশনকে জানান, তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার ২৫ বছর বয়সী বোনের মৃত্যু হয়েছে।

‘আমি জানি না কীভাবে, কিন্তু কোনোমতে বের হতে পেরেছি। কিন্তু আমার বোন পারেনি,’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী হ্রিস্টিজান মিকোস্কি এই ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন। সরকার সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং জরুরি বৈঠক করেছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট গর্ডানা সিলজানোভস্কা-দাভকোভা বলেছেন, ‘একজন মা, একজন মানুষ এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই ট্র্যাজেডি আমাকে মর্মাহত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্য বুলগেরিয়া, গ্রিস, সার্বিয়া ও তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার জনগণের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংহতি রয়েছে।’

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচ বলেছেন, ‘এটি একটি বিশাল ট্র্যাজেডি। আহতদের অনেকেই হয়তো প্রাণে বাঁচতে পারবেন না।’

এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার তদন্তে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার কর্তৃপক্ষ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

ম্যাসেডোনিয়ায় নাইটক্লাবে আগুন, ৫৯ জনের মৃত্যু

Update Time : ০৪:১৩:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার কোচানি শহরের একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের তদন্তের অংশ হিসেবে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় রোববার (১৬ মার্চ) দিনরাত আড়াইটার দিকে কোচানির ‘পালস’ ক্লাবে এই আগুন লাগে। সে সময় জনপ্রিয় হিপ-হপ ব্যান্ড ডিএনকের কনসার্ট চলছিল, যেখানে প্রায় ৫০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের মুখপাত্র বিলজানা আরসোভস্কা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আটক ১০ জনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও রয়েছেন, যারা অবৈধভাবে ক্লাবটির অনুমোদন দিয়েছিলেন।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যানসে তোস্কোভস্কি জানিয়েছেন, ক্লাবটির কার্যক্রম পরিচালনার কোনো বৈধ অনুমতি ছিল না। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে কীভাবে ক্লাবটি চালানো হচ্ছিল।

স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, আগুন লাগা ক্লাবটি আসলে একটি পুরনো কার্পেট গুদাম ছিল, যেটিকে পরে ‘সাময়িক নাইটক্লাব’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। ক্লাবটিতে মাত্র একটি কার্যকরী প্রবেশ ও বহির্গমন পথ ছিল। পেছনের দরজা তালাবদ্ধ থাকায় অনেকেই বের হতে পারেননি।

প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, কনসার্টের সময় ব্যবহার করা পাইরোটেকনিক ডিভাইস থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মঞ্চে দুইটি ফ্লেয়ার জ্বলে ওঠার পর সেখান থেকে ছিটকে আসা স্ফুলিঙ্গ ছাদে লেগে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মঞ্চে আগুন লাগার পর দর্শকদের কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন, অনেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু একটিমাত্র নির্গমন পথ থাকায় হুড়োহুড়িতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবক মুস্তাফা সাইদভ জানিয়েছেন, হতাহতদের অধিকাংশই ১৮-২০ বছর বয়সী তরুণ। নিহতদের মধ্যে অন্তত তিনজনের বয়স ১৮ বছরের কম।

২০ বছর বয়সী মারিজা তাসেভা স্থানীয় চ্যানেল ফাইভ টেলিভিশনকে জানান, তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার ২৫ বছর বয়সী বোনের মৃত্যু হয়েছে।

‘আমি জানি না কীভাবে, কিন্তু কোনোমতে বের হতে পেরেছি। কিন্তু আমার বোন পারেনি,’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী হ্রিস্টিজান মিকোস্কি এই ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন। সরকার সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং জরুরি বৈঠক করেছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট গর্ডানা সিলজানোভস্কা-দাভকোভা বলেছেন, ‘একজন মা, একজন মানুষ এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই ট্র্যাজেডি আমাকে মর্মাহত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্য বুলগেরিয়া, গ্রিস, সার্বিয়া ও তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার জনগণের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংহতি রয়েছে।’

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচ বলেছেন, ‘এটি একটি বিশাল ট্র্যাজেডি। আহতদের অনেকেই হয়তো প্রাণে বাঁচতে পারবেন না।’

এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার তদন্তে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার কর্তৃপক্ষ।