Dhaka ১১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বউ পেটানোয় শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ: বিবিএস

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:০৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
  • 49

ঘর কিংবা বাইরে, প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগজনক ও মর্মান্তিক বাস্তবতা হলো, এই নির্যাতনের বড় একটি অংশ ঘটছে তাদের আপনজন, বিশেষ করে স্বামী বা সঙ্গীর হাতেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর যৌথভাবে পরিচালিত ২০২৪ সালের এক জরিপে উঠে এসেছে নারীর প্রতি সহিংসতার একটি ভয়াবহ চিত্র।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তাদের স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।  

জরিপ অনুযায়ী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি। বরিশালে ৮২ শতাংশ এবং খুলনায় ৮১ শতাংশ নারী তাদের জীবনকালে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ নারীর মধ্যে চারজনেরও বেশি এমন সহিংসতার অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াচ্ছেন, যা সমাজে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।

যেখানে ঘর হওয়ার কথা ছিল নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল, ভালোবাসার পরিবেশ- সেই ঘরই পরিণত হয়েছে নীরব এক কারাগারে। যেখানে একজন নারী যিনি সমাজে মা, স্ত্রী, কর্মজীবী বা শিক্ষার্থী হিসেবে সম্মান পান, সেখানে ঘরে ফিরে তাঁর সেই পরিচয়ের কোনো মর্যাদা থাকে না। বরং তিনি সহ্য করেন অব্যাহত নির্যাতন, যা অনেক সময় তাকে পরিণত করে চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া এক ‘শিকারী’তে।

বরিশাল ও খুলনার পর চট্টগ্রামে ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৫, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ নারী ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এমনকি তুলনামূলকভাবে ‘কম’ সহিংসতার অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত সিলেট ও ঢাকা বিভাগেও যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ নারী এমন সহিংসতার শিকার। অর্থাৎ দেশের কোনো বিভাগেই এই হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীদের জীবদ্দশায় সহিংসতার গড় হার ৭০ শতাংশ। শুধু গত এক বছরেই ৪১ শতাংশ নারী এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় এই সংজ্ঞা কিছুটা সম্প্রসারিত করলে চিত্র আরও ভয়াবহ—জীবদ্দশায় ৭৬ শতাংশ নারী এবং গত বছরে ৪৯ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে- প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে নারীদের প্রতি সহিংসতার হার আরও বেশি। ঘরের ছাদ যেমন হারায়, তেমনি নারীর নিরাপত্তা, সম্মান ও মানবাধিকারও সংকটে পড়ে। দুর্যোগের সময় নারীদের লড়তে হয় কেবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে নয়, বরং ঘরের ভেতরের অমানবিকতা, দারিদ্র্যের চাপ, বাস্তুচ্যুতি এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধেও।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

বউ পেটানোয় শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ: বিবিএস

Update Time : ০২:০৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

ঘর কিংবা বাইরে, প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগজনক ও মর্মান্তিক বাস্তবতা হলো, এই নির্যাতনের বড় একটি অংশ ঘটছে তাদের আপনজন, বিশেষ করে স্বামী বা সঙ্গীর হাতেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর যৌথভাবে পরিচালিত ২০২৪ সালের এক জরিপে উঠে এসেছে নারীর প্রতি সহিংসতার একটি ভয়াবহ চিত্র।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তাদের স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।  

জরিপ অনুযায়ী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি। বরিশালে ৮২ শতাংশ এবং খুলনায় ৮১ শতাংশ নারী তাদের জীবনকালে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ নারীর মধ্যে চারজনেরও বেশি এমন সহিংসতার অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াচ্ছেন, যা সমাজে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।

যেখানে ঘর হওয়ার কথা ছিল নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল, ভালোবাসার পরিবেশ- সেই ঘরই পরিণত হয়েছে নীরব এক কারাগারে। যেখানে একজন নারী যিনি সমাজে মা, স্ত্রী, কর্মজীবী বা শিক্ষার্থী হিসেবে সম্মান পান, সেখানে ঘরে ফিরে তাঁর সেই পরিচয়ের কোনো মর্যাদা থাকে না। বরং তিনি সহ্য করেন অব্যাহত নির্যাতন, যা অনেক সময় তাকে পরিণত করে চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া এক ‘শিকারী’তে।

বরিশাল ও খুলনার পর চট্টগ্রামে ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৫, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ নারী ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এমনকি তুলনামূলকভাবে ‘কম’ সহিংসতার অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত সিলেট ও ঢাকা বিভাগেও যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ নারী এমন সহিংসতার শিকার। অর্থাৎ দেশের কোনো বিভাগেই এই হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীদের জীবদ্দশায় সহিংসতার গড় হার ৭০ শতাংশ। শুধু গত এক বছরেই ৪১ শতাংশ নারী এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় এই সংজ্ঞা কিছুটা সম্প্রসারিত করলে চিত্র আরও ভয়াবহ—জীবদ্দশায় ৭৬ শতাংশ নারী এবং গত বছরে ৪৯ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে- প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে নারীদের প্রতি সহিংসতার হার আরও বেশি। ঘরের ছাদ যেমন হারায়, তেমনি নারীর নিরাপত্তা, সম্মান ও মানবাধিকারও সংকটে পড়ে। দুর্যোগের সময় নারীদের লড়তে হয় কেবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে নয়, বরং ঘরের ভেতরের অমানবিকতা, দারিদ্র্যের চাপ, বাস্তুচ্যুতি এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধেও।