Dhaka ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৫৩:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • 32

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মধ্যেই ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলেন স্পেসএক্স ও টেসলার প্রধান নির্বাহী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর মালিক ইলন মাস্ক।

স্থানীয় সময় শনিবার এক্সে দেওয়া এক ঘোষণায় তিনি এ কথা জানান। তার ভাষায়, এই দল ‘আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে’ এসেছে।

এর আগে, শুক্রবার এক্সে একটি জনমত জরিপ চালান মাস্ক। সেখানে অনুসারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি রাজনৈতিক দল দরকার কি না।

পরদিন শনিবার তিনি ঘোষণা করেন, আজ ‘আমেরিকা পার্টি’র জন্ম হলো, আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।

এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘২:১ ব্যবধানে আপনারা নতুন রাজনৈতিক দল চেয়েছেন, আপনাদের তা দেওয়া হলো!’

মাস্কের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার তার বহুল প্রচারিত ‘বিগ অ্যান্ড বিউটিফুল’ কর ছাড় এবং ব্যয়বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিলে স্বাক্ষর করেছেন—যা মাস্কের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে।

ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখা মাস্ক শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ‘সরকারি ব্যয় দক্ষতা বিভাগ’-এরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই ট্রাম্পের সঙ্গেই এখন তিক্ত বিরোধে জড়িয়েছেন।

ট্রাম্পের এই নতুন বিল সম্পর্কে মাস্ক বলেন, ‘বাইডেনের আমলে যেখানে ঘাটতি ছিল ২ ট্রিলিয়ন ডলার, এখন সেই ঘাটতি বাড়িয়ে ২.৫ ট্রিলিয়ন করা হচ্ছে। এতে আমেরিকা দেউলিয়া হয়ে যাবে।’

এক অনুসারীর প্রশ্নের জবাবে মাস্ক এক্সে লিখেছেন, ‘যা আমাকে ট্রাম্পের ভক্ত থেকে সমালোচকে পরিণত করেছে, সেটি হলো এই বিশাল বাজেট ঘাটতি।’

মাস্ক বনাম ট্রাম্প: দ্বন্দ্ব ও পরিণতি

টেসলা ও স্পেসএক্স-এর মতো কোম্পানি নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হলেও মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব ক্রমেই প্রকাশ্য ও সংঘাতপূর্ণ রূপ নিচ্ছে।

ট্রাম্প এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছেন যে, মাস্কের কোম্পানিগুলো যেসব সরকারি ভর্তুকি পায়, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি এমন সব কংগ্রেস সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ ব্যয় করবেন যারা ট্রাম্পের বিলকে সমর্থন করেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন

তাদের এই দ্বন্দ্ব রিপাবলিকান শিবিরেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রক্ষা নিয়েই দলটি এখন চিন্তিত।

মাস্কের নতুন দল এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাত এই নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।

মাস্ক এক্সে আরও লিখেছেন, “আমরা যেভাবে ‘ইউনিপার্টি’ ব্যবস্থাকে ভাঙব, তা হলো- গ্রিক কৌশলবিদ এপামিনোনডাস-এর মতো: নির্দিষ্ট এক জায়গায় তীব্র ও কেন্দ্রীভূত আঘাত।”

টেসলা শেয়ারের উত্থান-পতন

এদিকে এই রাজনৈতিক টানাপড়েনে টেসলার শেয়ার মূল্য ব্যাপক ওঠানামা করেছে। গত নভেম্বরে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর শেয়ারের দাম ৪৮৮ ডলারে পৌঁছালেও এপ্রিলের মধ্যে তা অর্ধেকে নেমে আসে এবং গত সপ্তাহে ৩১৫.৩৫ ডলারে এসে ঠেকে।

রাজনৈতিক বাস্তবতা

এ মুহূর্তে মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন অজানা শক্তি হয়ে উঠছে—যা ভবিষ্যতের নির্বাচনকে নাটকীয়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

যদিও ট্রাম্প বা হোয়াইট হাউস এখনো মাস্কের ঘোষণার বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্ক যতই ধনী হোন না কেন, ১৬০ বছরের রিপাবলিকান–ডেমোক্রেটিক দ্বিদলীয় কাঠামো ভাঙা সহজ হবে না। বিশেষ করে যখন ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখনো ৪০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক

Update Time : ০৩:৫৩:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মধ্যেই ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলেন স্পেসএক্স ও টেসলার প্রধান নির্বাহী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর মালিক ইলন মাস্ক।

স্থানীয় সময় শনিবার এক্সে দেওয়া এক ঘোষণায় তিনি এ কথা জানান। তার ভাষায়, এই দল ‘আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে’ এসেছে।

এর আগে, শুক্রবার এক্সে একটি জনমত জরিপ চালান মাস্ক। সেখানে অনুসারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি রাজনৈতিক দল দরকার কি না।

পরদিন শনিবার তিনি ঘোষণা করেন, আজ ‘আমেরিকা পার্টি’র জন্ম হলো, আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।

এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘২:১ ব্যবধানে আপনারা নতুন রাজনৈতিক দল চেয়েছেন, আপনাদের তা দেওয়া হলো!’

মাস্কের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার তার বহুল প্রচারিত ‘বিগ অ্যান্ড বিউটিফুল’ কর ছাড় এবং ব্যয়বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিলে স্বাক্ষর করেছেন—যা মাস্কের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে।

ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখা মাস্ক শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ‘সরকারি ব্যয় দক্ষতা বিভাগ’-এরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই ট্রাম্পের সঙ্গেই এখন তিক্ত বিরোধে জড়িয়েছেন।

ট্রাম্পের এই নতুন বিল সম্পর্কে মাস্ক বলেন, ‘বাইডেনের আমলে যেখানে ঘাটতি ছিল ২ ট্রিলিয়ন ডলার, এখন সেই ঘাটতি বাড়িয়ে ২.৫ ট্রিলিয়ন করা হচ্ছে। এতে আমেরিকা দেউলিয়া হয়ে যাবে।’

এক অনুসারীর প্রশ্নের জবাবে মাস্ক এক্সে লিখেছেন, ‘যা আমাকে ট্রাম্পের ভক্ত থেকে সমালোচকে পরিণত করেছে, সেটি হলো এই বিশাল বাজেট ঘাটতি।’

মাস্ক বনাম ট্রাম্প: দ্বন্দ্ব ও পরিণতি

টেসলা ও স্পেসএক্স-এর মতো কোম্পানি নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হলেও মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব ক্রমেই প্রকাশ্য ও সংঘাতপূর্ণ রূপ নিচ্ছে।

ট্রাম্প এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছেন যে, মাস্কের কোম্পানিগুলো যেসব সরকারি ভর্তুকি পায়, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি এমন সব কংগ্রেস সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ ব্যয় করবেন যারা ট্রাম্পের বিলকে সমর্থন করেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন

তাদের এই দ্বন্দ্ব রিপাবলিকান শিবিরেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রক্ষা নিয়েই দলটি এখন চিন্তিত।

মাস্কের নতুন দল এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাত এই নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।

মাস্ক এক্সে আরও লিখেছেন, “আমরা যেভাবে ‘ইউনিপার্টি’ ব্যবস্থাকে ভাঙব, তা হলো- গ্রিক কৌশলবিদ এপামিনোনডাস-এর মতো: নির্দিষ্ট এক জায়গায় তীব্র ও কেন্দ্রীভূত আঘাত।”

টেসলা শেয়ারের উত্থান-পতন

এদিকে এই রাজনৈতিক টানাপড়েনে টেসলার শেয়ার মূল্য ব্যাপক ওঠানামা করেছে। গত নভেম্বরে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর শেয়ারের দাম ৪৮৮ ডলারে পৌঁছালেও এপ্রিলের মধ্যে তা অর্ধেকে নেমে আসে এবং গত সপ্তাহে ৩১৫.৩৫ ডলারে এসে ঠেকে।

রাজনৈতিক বাস্তবতা

এ মুহূর্তে মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন অজানা শক্তি হয়ে উঠছে—যা ভবিষ্যতের নির্বাচনকে নাটকীয়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

যদিও ট্রাম্প বা হোয়াইট হাউস এখনো মাস্কের ঘোষণার বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্ক যতই ধনী হোন না কেন, ১৬০ বছরের রিপাবলিকান–ডেমোক্রেটিক দ্বিদলীয় কাঠামো ভাঙা সহজ হবে না। বিশেষ করে যখন ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখনো ৪০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স