Dhaka ০২:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডঃ হিমেল বরকত এর অকাল প্রয়াণে মোংলায় নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:১০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২০
  • ২১৭ Time View

মোংলা প্রতিনিধি,(মোহাম্মাদ আলী):

মোংলার গর্বিত সন্তান, কবি গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রুদ্রের অনুজ ডঃ হিমেল বরকত এর অকাল প্রয়াণে মোংলায় নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (৪ ডিসেম্বার) বিকেল ৩.৩০ মিনিটে হিমেল বরকত নাগরিক শোক সভার কমিটির আয়োজনে মোংলা সেন্ট পলস হলরুমে এ শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট তিন আসনের সংসদ সদস্য পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। সভায় সভাপতিত্ব করেন মোংলা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ গোলার সরোয়ার।শোক সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওালাদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ সুনীল কুমার বিশ্বাস, সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফ্রান্সিস সুদান হালদার, গণশিপী  সংস্থার সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, মোংলা প্রেসক্লাব সভাপতি এইচ এম দুলাল, কবি মুশফিকুর রহমান টুকু, কবি জেম্স শরৎ কর্মকার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন, অধ্যপক শেখ নজরুল ইসলাম, কবি হিমেল বরকত এঁর বন্ধু জানে আলম বাবু প্রমূখ।

শোক সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক শোকসভা কমিটির সদস্য সচিব সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ। শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের  উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এমপি বলেন কবি হিমেল বরকত’র অকাল মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর প্রগতিশীল তরুন প্রতিশ্রুতিশীল কবি হিমেল বরকত তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমেই মানুষের  মাঝে বেঁচে থাকবেন। তাঁর লেখা কবিতা-গানে-প্রবন্ধে এবং গবেষণায় সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা উঠে এসেছে। শোক সভা পরিচালনা করেন মোংলা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস ও গীতিকার মোল্লা মামুন। নাগরিক শোক সভায় কবি হিমেল বরকত এঁর লেখা গান পরিবেশন করেন গণসঙ্গীত শিল্পী গোলাম মহম্মদ, মিজানুর রহমান বুলবুল, জীবনানন্দ অধিকারী, শেখ আব্দুল জব্বার, শ্রীবাস বাউল প্রমূখ। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালের ২৭ জুলাই বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মিঠাখালী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন কবি হিমেল বরকত। তার পিতার নাম আলহাজ্ব ডঃ শেখ ওয়ালিউল্লাহ। মাতার নাম আলহাজ্ব শিরিয়া বেগম। দশ ভাই বোনদের মধ্যে কবি হিমেল বরকত ছিলেন কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ছোট ভাই। কবি হিমেল বরকতের অর্ধাঙ্গি খাদিজা পারভীন পপি। তাদের একমাত্র কন্যা শ্রেয়সী অতন্দ্রিলা। কবি হিমেল বরকত ১৯৯৪ সালে মোংলার সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। অতঃপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাষ্টর্স শেষ করে ডষ্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৫ সালে ঢাকা সিটি কলেজে শিক্ষাকতা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ২০০৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে সেখানকার অধ্যাপক হন। রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ মৃত্যুর পর তার সৃষ্টিকর্মকে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন কবি হিমেল বরকত। হিমেল বরকত একাধারে কবি, উপন্যাসিক, ছড়াকার, গবেষক ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও লেখনীর মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছেন। চোখে ও চৌদিকে’, ‘দশমাতৃক দৃশ্যাবলি’ এবং ‘বৈশ্ববিদ্যালয়’ কবি হিমেল বরকতের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ‘আদিবাসী কাব্যসমগ্র’, ‘চন্দ্রাবতীর রামায়ণ’ ও ‘প্রাসঙ্গিক পাঠ’ তার সম্পাদিত বই। এ ছাড়াও তিনি  ‘প্রান্তস্বর’ এবং ‘প্রান্তভাবনা’ নামের কবির দুটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। সুন্দরবন নিয়েও তিনি গবেষনাগ্রন্থ রচনা করেছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলা পথকবিতাবিষয়ক একটি গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেছিলেন। তার বহু অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়একটি কাব্য গ্রন্থ হল পথ কবিতার বিলুপ্ত ভূবন,কবি ত্রিদিব দস্তিদারের কবি। রবিবার (২২ নভেম্বর) ভোর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাড়ডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। কবির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সোমবার (২৩ নভেম্বার) মোংলা মিঠাখালী নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

ডঃ হিমেল বরকত এর অকাল প্রয়াণে মোংলায় নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত

Update Time : ০৪:১০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

মোংলা প্রতিনিধি,(মোহাম্মাদ আলী):

মোংলার গর্বিত সন্তান, কবি গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রুদ্রের অনুজ ডঃ হিমেল বরকত এর অকাল প্রয়াণে মোংলায় নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (৪ ডিসেম্বার) বিকেল ৩.৩০ মিনিটে হিমেল বরকত নাগরিক শোক সভার কমিটির আয়োজনে মোংলা সেন্ট পলস হলরুমে এ শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট তিন আসনের সংসদ সদস্য পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। সভায় সভাপতিত্ব করেন মোংলা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ গোলার সরোয়ার।শোক সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওালাদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ সুনীল কুমার বিশ্বাস, সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফ্রান্সিস সুদান হালদার, গণশিপী  সংস্থার সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, মোংলা প্রেসক্লাব সভাপতি এইচ এম দুলাল, কবি মুশফিকুর রহমান টুকু, কবি জেম্স শরৎ কর্মকার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন, অধ্যপক শেখ নজরুল ইসলাম, কবি হিমেল বরকত এঁর বন্ধু জানে আলম বাবু প্রমূখ।

শোক সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক শোকসভা কমিটির সদস্য সচিব সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ। শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের  উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এমপি বলেন কবি হিমেল বরকত’র অকাল মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর প্রগতিশীল তরুন প্রতিশ্রুতিশীল কবি হিমেল বরকত তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমেই মানুষের  মাঝে বেঁচে থাকবেন। তাঁর লেখা কবিতা-গানে-প্রবন্ধে এবং গবেষণায় সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা উঠে এসেছে। শোক সভা পরিচালনা করেন মোংলা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস ও গীতিকার মোল্লা মামুন। নাগরিক শোক সভায় কবি হিমেল বরকত এঁর লেখা গান পরিবেশন করেন গণসঙ্গীত শিল্পী গোলাম মহম্মদ, মিজানুর রহমান বুলবুল, জীবনানন্দ অধিকারী, শেখ আব্দুল জব্বার, শ্রীবাস বাউল প্রমূখ। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালের ২৭ জুলাই বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মিঠাখালী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন কবি হিমেল বরকত। তার পিতার নাম আলহাজ্ব ডঃ শেখ ওয়ালিউল্লাহ। মাতার নাম আলহাজ্ব শিরিয়া বেগম। দশ ভাই বোনদের মধ্যে কবি হিমেল বরকত ছিলেন কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ছোট ভাই। কবি হিমেল বরকতের অর্ধাঙ্গি খাদিজা পারভীন পপি। তাদের একমাত্র কন্যা শ্রেয়সী অতন্দ্রিলা। কবি হিমেল বরকত ১৯৯৪ সালে মোংলার সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। অতঃপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাষ্টর্স শেষ করে ডষ্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৫ সালে ঢাকা সিটি কলেজে শিক্ষাকতা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ২০০৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে সেখানকার অধ্যাপক হন। রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ মৃত্যুর পর তার সৃষ্টিকর্মকে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন কবি হিমেল বরকত। হিমেল বরকত একাধারে কবি, উপন্যাসিক, ছড়াকার, গবেষক ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও লেখনীর মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছেন। চোখে ও চৌদিকে’, ‘দশমাতৃক দৃশ্যাবলি’ এবং ‘বৈশ্ববিদ্যালয়’ কবি হিমেল বরকতের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ‘আদিবাসী কাব্যসমগ্র’, ‘চন্দ্রাবতীর রামায়ণ’ ও ‘প্রাসঙ্গিক পাঠ’ তার সম্পাদিত বই। এ ছাড়াও তিনি  ‘প্রান্তস্বর’ এবং ‘প্রান্তভাবনা’ নামের কবির দুটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। সুন্দরবন নিয়েও তিনি গবেষনাগ্রন্থ রচনা করেছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলা পথকবিতাবিষয়ক একটি গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেছিলেন। তার বহু অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়একটি কাব্য গ্রন্থ হল পথ কবিতার বিলুপ্ত ভূবন,কবি ত্রিদিব দস্তিদারের কবি। রবিবার (২২ নভেম্বর) ভোর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাড়ডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। কবির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সোমবার (২৩ নভেম্বার) মোংলা মিঠাখালী নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।