Dhaka ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ প্রথম!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ৯৯ Time View

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনকারী দেশ হিসেবে আবারও বাংলাদেশ বিশ্বের সকল দেশকে টপকীয়ে প্রথম স্থান অধিকার করার বিরল গৌরব অর্জন করে দেশ ও জাতিকে বিশ্বের দরবারে সম্মানিত ও গৌরাবান্তিত করেছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সর্বদাই ছিল এক গর্বিত অংশীদার। বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ স্থানে শান্তি, সম্প্রতি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সর্বদাই অঙ্গিকারবদ্ধ। আর এই দৃঢ় অঙ্গিকারকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ আর্ন্তজাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অত্যন্ত সফলতার সাথে অংশগ্রহণ ও অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে।

বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ইতিপূর্বেও বাংলাদেশ ০৫ বার অর্থ্যাৎ ২০০১, ২০০৫, ২০১১, ২০১৪, ২০১৫ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়নে প্রথম হয়ে এই বিরল কৃতিত্বের অংশীদার হয়েছিল। এই সম্মান বয়ে আনার জন্য জাতি হিসেবে আমরা আজ গর্বিত ও আনন্দিত। জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের শান্তিরক্ষায় গত প্রায় তিন দশকে বাংলাদেশের অবদান অনন্য। জাতিসংঘের আহবানে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও সংঘাতময় অঞ্চলে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশের অকুতভয় শান্তিরক্ষীগণ।

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা এবং আন্তরিকতা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৪০টি দেশের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৫৭ জন শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে জাতিসংঘের ইতিহাসে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৭১ জন নৌবাহিনী থেকে ৫ হাজার ৯১২ জন আর বিমান বাহিনী থেকে ৭ হাজার ১০৬ জন এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ১৯ হাজার ৬৬৮ জন বিভিন্ন দেশে মিশনে অংশ নেন। তাছাড়া বাংলাদেশ সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর ১৮২৬ জন নারী শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ মিশনের আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে নারীর ক্ষমতায়নে এবং নারী-পুরুষ সমতা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বর্তমানে ৮টি মিশনে বাংলাদেশের সর্বমোট ৬ হাজার ৮৩৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য ৫ হাজার ২৫৫ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৫ জন এবং বিমান বাহিনী ৫৮২ জন এবং পুলিশ বাহিনীর ৬৫৪ জন। বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর ২৪৬ জন নারী শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন।

১৯৮৮ সাল থেকে জাতসিংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তরক্ষীগণ সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার সাথে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবর্মূতি উজ্জ্বল হয়েছে। বিশ্ব শান্তির অন্বেষণে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর ১৫৩ জন শান্তরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে যেমন রক্ষা করেছে তেমনি সারাবিশ্বের মানুষের নিকট বাংলাদেশকে করেছে গৌরবান্বিত। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের নিরলস অবদান ও নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ জাতিসংঘের ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ প্রথম!

Update Time : ০৪:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনকারী দেশ হিসেবে আবারও বাংলাদেশ বিশ্বের সকল দেশকে টপকীয়ে প্রথম স্থান অধিকার করার বিরল গৌরব অর্জন করে দেশ ও জাতিকে বিশ্বের দরবারে সম্মানিত ও গৌরাবান্তিত করেছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সর্বদাই ছিল এক গর্বিত অংশীদার। বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ স্থানে শান্তি, সম্প্রতি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সর্বদাই অঙ্গিকারবদ্ধ। আর এই দৃঢ় অঙ্গিকারকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ আর্ন্তজাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অত্যন্ত সফলতার সাথে অংশগ্রহণ ও অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে।

বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ইতিপূর্বেও বাংলাদেশ ০৫ বার অর্থ্যাৎ ২০০১, ২০০৫, ২০১১, ২০১৪, ২০১৫ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়নে প্রথম হয়ে এই বিরল কৃতিত্বের অংশীদার হয়েছিল। এই সম্মান বয়ে আনার জন্য জাতি হিসেবে আমরা আজ গর্বিত ও আনন্দিত। জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের শান্তিরক্ষায় গত প্রায় তিন দশকে বাংলাদেশের অবদান অনন্য। জাতিসংঘের আহবানে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও সংঘাতময় অঞ্চলে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশের অকুতভয় শান্তিরক্ষীগণ।

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা এবং আন্তরিকতা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৪০টি দেশের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৫৭ জন শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে জাতিসংঘের ইতিহাসে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৭১ জন নৌবাহিনী থেকে ৫ হাজার ৯১২ জন আর বিমান বাহিনী থেকে ৭ হাজার ১০৬ জন এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ১৯ হাজার ৬৬৮ জন বিভিন্ন দেশে মিশনে অংশ নেন। তাছাড়া বাংলাদেশ সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর ১৮২৬ জন নারী শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ মিশনের আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে নারীর ক্ষমতায়নে এবং নারী-পুরুষ সমতা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বর্তমানে ৮টি মিশনে বাংলাদেশের সর্বমোট ৬ হাজার ৮৩৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য ৫ হাজার ২৫৫ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৫ জন এবং বিমান বাহিনী ৫৮২ জন এবং পুলিশ বাহিনীর ৬৫৪ জন। বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর ২৪৬ জন নারী শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন।

১৯৮৮ সাল থেকে জাতসিংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তরক্ষীগণ সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার সাথে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবর্মূতি উজ্জ্বল হয়েছে। বিশ্ব শান্তির অন্বেষণে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর ১৫৩ জন শান্তরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে যেমন রক্ষা করেছে তেমনি সারাবিশ্বের মানুষের নিকট বাংলাদেশকে করেছে গৌরবান্বিত। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের নিরলস অবদান ও নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ জাতিসংঘের ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে।