Dhaka ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্যাস সংকটে বাসাবাড়িতে জ্বলছে না চুলা, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৩৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • 31

বঙ্গোপসাগর প্রবল উত্তাল থাকায় মহেশখালীর এলএনজিবাহী জাহাজ থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চট্টগ্রামে আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ দিতে পারছে না কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। যার ফলে নগরীর অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়িতে জ্বলছে না চুলা। বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে চট্টগ্রামে গ্যাসের চাপ মারাত্মকভাবে কমে যায়। সকাল সাড়ে ৮টায় গ্যাস সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পকারখানায়ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রান্নাবান্না নিয়ে বিপাকে পড়েন নগরবাসী। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন ডিভিশন) মো. নজরুল ইসলাম গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

গ্যাস না পেয়ে নগরজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বহস্পতিবার সকালে চুলায় গ্যাস জ্বলতে না দেখে অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ছুটে যান। কিন্তু বহু রেস্তোরাঁয়ও রান্না হয়নি। ফলে চাহিদার তুলনায় খাবার কম থাকায় অনেককেই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। নগরীর বিভিন্ন খাবারের দোকানের সামনে গ্রাহকদের ভিড় দেখা গেছে। অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক চুলা ও লাকড়ি জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সারেন বাসিন্দারা। নগরীর ফিলিং স্টেশনগুলোতেও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। সেখানেও নেই গ্যাস। এ কারণে সড়কে কমে যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল। কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা জানান, এলএনজিবাহী বিশেষায়িত জাহাজ থেকে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হতো। সেখানে বুধবার সন্ধ্যায় ১৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হয়েছে। সকাল ৯টার পর গ্যাস সরবরাহ একেবারে বন্ধ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না। পূর্বনির্দেশনা ছাড়াই হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।

বৃহস্পতিবার নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, কাজির দেউড়ী, কাট্টলী, খুলশী, হালিশহর, চান্দগাঁও, মোহরা, বাকলিয়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় নগরীর ইপিজেড, বায়েজিদ বোস্তামী শিল্প এলাকা, কালুরঘাট শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় শিল্প উৎপাদনে মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটেছে। কিছু কিছু এলাকায় বুধবার রাত থেকে শিল্পকারখানা ও সিএনজি স্টেশনেও গ্যাস ছিল না। এতে কারখানায় উৎপাদন ও সিএনজি স্টেশন থেকে গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস স্টেশনগুলোতে সকাল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। গ্যাসের অভাবে নগরীতে টেম্পো, মিনিবাস, অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ ছিল। বিভিন্ন রুটে ছোট আকারের কিছু গণপরিবহণ চলাচল করতে দেখা যায়, যেগুলো আগের রাতে গ্যাস নিয়ে রেখেছিল। তবে এগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় দ্বিগুণ ভাড়া।

বিটিএল অ্যাপারেলস লিমিটেডের পরিচালক আয়ুব আলী জানান, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় বেশি সমস্যা হবে রপ্তানিমুখী শিল্পে। কারণ যথাসময়ে অর্ডার অনুযায়ী পণ্য শিপমেন্ট করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এতে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ে। জিটিসিএল মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন ডিভিশন) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘খারাপ আবহওয়ার কারণে বিশেষায়িত জাহাজ থেকে গ্যাস নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সাগর স্বাভাবিক হলে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

গ্যাস সংকটে বাসাবাড়িতে জ্বলছে না চুলা, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত

Update Time : ০৩:৩৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

বঙ্গোপসাগর প্রবল উত্তাল থাকায় মহেশখালীর এলএনজিবাহী জাহাজ থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চট্টগ্রামে আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ দিতে পারছে না কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। যার ফলে নগরীর অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়িতে জ্বলছে না চুলা। বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে চট্টগ্রামে গ্যাসের চাপ মারাত্মকভাবে কমে যায়। সকাল সাড়ে ৮টায় গ্যাস সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পকারখানায়ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রান্নাবান্না নিয়ে বিপাকে পড়েন নগরবাসী। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন ডিভিশন) মো. নজরুল ইসলাম গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

গ্যাস না পেয়ে নগরজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বহস্পতিবার সকালে চুলায় গ্যাস জ্বলতে না দেখে অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ছুটে যান। কিন্তু বহু রেস্তোরাঁয়ও রান্না হয়নি। ফলে চাহিদার তুলনায় খাবার কম থাকায় অনেককেই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। নগরীর বিভিন্ন খাবারের দোকানের সামনে গ্রাহকদের ভিড় দেখা গেছে। অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক চুলা ও লাকড়ি জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সারেন বাসিন্দারা। নগরীর ফিলিং স্টেশনগুলোতেও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। সেখানেও নেই গ্যাস। এ কারণে সড়কে কমে যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল। কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা জানান, এলএনজিবাহী বিশেষায়িত জাহাজ থেকে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হতো। সেখানে বুধবার সন্ধ্যায় ১৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হয়েছে। সকাল ৯টার পর গ্যাস সরবরাহ একেবারে বন্ধ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না। পূর্বনির্দেশনা ছাড়াই হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।

বৃহস্পতিবার নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, কাজির দেউড়ী, কাট্টলী, খুলশী, হালিশহর, চান্দগাঁও, মোহরা, বাকলিয়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় নগরীর ইপিজেড, বায়েজিদ বোস্তামী শিল্প এলাকা, কালুরঘাট শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় শিল্প উৎপাদনে মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটেছে। কিছু কিছু এলাকায় বুধবার রাত থেকে শিল্পকারখানা ও সিএনজি স্টেশনেও গ্যাস ছিল না। এতে কারখানায় উৎপাদন ও সিএনজি স্টেশন থেকে গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস স্টেশনগুলোতে সকাল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। গ্যাসের অভাবে নগরীতে টেম্পো, মিনিবাস, অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ ছিল। বিভিন্ন রুটে ছোট আকারের কিছু গণপরিবহণ চলাচল করতে দেখা যায়, যেগুলো আগের রাতে গ্যাস নিয়ে রেখেছিল। তবে এগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় দ্বিগুণ ভাড়া।

বিটিএল অ্যাপারেলস লিমিটেডের পরিচালক আয়ুব আলী জানান, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় বেশি সমস্যা হবে রপ্তানিমুখী শিল্পে। কারণ যথাসময়ে অর্ডার অনুযায়ী পণ্য শিপমেন্ট করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এতে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ে। জিটিসিএল মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন ডিভিশন) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘খারাপ আবহওয়ার কারণে বিশেষায়িত জাহাজ থেকে গ্যাস নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সাগর স্বাভাবিক হলে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।’