Dhaka ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমাদের বাঁচান, তেহরানে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৫৭:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • 34

‘আশপাশে এখন আর কিছুই নেই। কেবল কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি টিকে আছে, কিন্তু আশপাশে কিছুই নেই। আমার বাসাও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অনেকেই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছেন। বলছেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না ভাই, আমাদের বাঁচান।’

কথাগুলো বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম।

ইরানে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে তেহরান।

এ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে দলে দলে রাজধানী ছাড়ছেন ইরানের বাসিন্দারা। গত কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, অসংখ্য মানুষ গাড়িতে করে শহর ছাড়তে যাওয়ায় পেট্রোল পাম্পগুলোতেও জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে তেল পাচ্ছেন না।

এমন পরিস্থিতিতে তেহরান থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সেখানে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি।

ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার ইসরায়েলের হামলায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের বাসভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত একজন কর্মকর্তার বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে হামলার সময় ওই কর্মকর্তা বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন।

তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূলত জর্ডান নামের একটি এলাকায় বসবাস করেন, যেটি পড়েছে তেহরানের তিন নম্বর জেলায়।

ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোতে সোমবার ঘোষণা দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এতে প্রাণহানি কিছুটা কম হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।

সোমবার দুপুরে তেহরানের তিন নম্বর জেলায় ইসরায়েলি সেনারা হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বাংলাদেশি নাগরিকদের সবাইকে ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা।

এরপর তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্স ছেড়ে যান সেখানকার কর্মীরা। যদিও বর্তমানে তারা তেহরানের অন্য এলাকায় অবস্থান করছেন।

কিন্তু ইসরায়েলি হামলার ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকায় এখন নাগরিকদের তেহরানের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

‘আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে আছে। তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছে। তাদের এবং আমাদের দূতাবাসে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য এখন কাজ করছি, যেন তারা নিরাপদে থাকতে পারে,’ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক।

তেহরানে বর্তমানে যে চারশ’র মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, তারা সবাই অক্ষত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তেহরানের বাইরেও কিছু কিছু শহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে সেসব জায়গা থেকে অনেকে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন কর্মকর্তাদের কাছে।

‘যেমন, বন্দর আব্বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার পরিস্থিতিও খারাপ। ফলে ওই এলাকা থেকেও অনেকে ফোন দিচ্ছেন, আর কান্নাকাটি করছেন। এই আর্তনাদ আসলে সহ্য করা যায় না,’ বলেন ওয়ালিদ ইসলাম।

সরকারি হিসেবে, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

জরুরি প্রয়োজনে তারা যেন যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য ‘হটলাইন’ চালু করেছে তেহরানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। সেইসঙ্গে, ঢাকাতেও আরেকটি হটলাইন চালু করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

আমাদের বাঁচান, তেহরানে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা

Update Time : ০৩:৫৭:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

‘আশপাশে এখন আর কিছুই নেই। কেবল কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি টিকে আছে, কিন্তু আশপাশে কিছুই নেই। আমার বাসাও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অনেকেই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছেন। বলছেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না ভাই, আমাদের বাঁচান।’

কথাগুলো বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম।

ইরানে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে তেহরান।

এ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে দলে দলে রাজধানী ছাড়ছেন ইরানের বাসিন্দারা। গত কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, অসংখ্য মানুষ গাড়িতে করে শহর ছাড়তে যাওয়ায় পেট্রোল পাম্পগুলোতেও জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে তেল পাচ্ছেন না।

এমন পরিস্থিতিতে তেহরান থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সেখানে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি।

ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার ইসরায়েলের হামলায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের বাসভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত একজন কর্মকর্তার বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে হামলার সময় ওই কর্মকর্তা বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন।

তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূলত জর্ডান নামের একটি এলাকায় বসবাস করেন, যেটি পড়েছে তেহরানের তিন নম্বর জেলায়।

ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোতে সোমবার ঘোষণা দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এতে প্রাণহানি কিছুটা কম হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।

সোমবার দুপুরে তেহরানের তিন নম্বর জেলায় ইসরায়েলি সেনারা হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বাংলাদেশি নাগরিকদের সবাইকে ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা।

এরপর তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্স ছেড়ে যান সেখানকার কর্মীরা। যদিও বর্তমানে তারা তেহরানের অন্য এলাকায় অবস্থান করছেন।

কিন্তু ইসরায়েলি হামলার ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকায় এখন নাগরিকদের তেহরানের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

‘আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে আছে। তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছে। তাদের এবং আমাদের দূতাবাসে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য এখন কাজ করছি, যেন তারা নিরাপদে থাকতে পারে,’ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক।

তেহরানে বর্তমানে যে চারশ’র মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, তারা সবাই অক্ষত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তেহরানের বাইরেও কিছু কিছু শহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে সেসব জায়গা থেকে অনেকে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন কর্মকর্তাদের কাছে।

‘যেমন, বন্দর আব্বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার পরিস্থিতিও খারাপ। ফলে ওই এলাকা থেকেও অনেকে ফোন দিচ্ছেন, আর কান্নাকাটি করছেন। এই আর্তনাদ আসলে সহ্য করা যায় না,’ বলেন ওয়ালিদ ইসলাম।

সরকারি হিসেবে, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

জরুরি প্রয়োজনে তারা যেন যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য ‘হটলাইন’ চালু করেছে তেহরানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। সেইসঙ্গে, ঢাকাতেও আরেকটি হটলাইন চালু করা হয়েছে।